ভারতে বাংলা ভাষাভাষীদের উপরে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘জীবন দিতে রাজি আছি, কিন্তু আমার ভাষা কেড়ে নিতে দেব না। বাংলা ভাষার অপমান মেনে নেব না।
মমতার প্রশ্ন, 'বাংলা কথা বললেই কি বাংলাদেশি হয়ে যায়? বাংলাদেশের ভাষা তো আমিও বলতে পারি, তাতে কি যায় আসে? অসুবিধার বা কি আছে? আমাদের ভাষা নিয়ে তাচ্ছিল্য করে এনআরসি((জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) নাম করে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে অস্তিত্ব বিপন্ন করে তার ঠিকানা কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত হলে আমরা ঠেকাবো। এজন্য সবাইকে পথে নামতে হবে। '
তার অভিমত, ‘১৯৭১ সালের মার্চ মাস অব্দি যারা আইনত বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন, তাদের কথা বলার টানে এখনো বাংলাদেশের ভাষা রয়ে গেছে। কারণ তখন অবিভক্ত ভারত ছিল। দেশ আলাদা ছিল না। এখন বাংলাদেশ আলাদা, পাকিস্তান আলাদা, ভারত আলাদা রাষ্ট্র। আমরা ভারতের নাগরিক। সবাই কি একই ভাষায়, টানে কথা বলতে পারে?’
পরিসংখ্যান দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘গোটা বিশ্বে কথা বলার নিরিখে বাংলা ভাষা পঞ্চম স্থানে, এশিয়াতে দ্বিতীয় স্থানে। আজ তাদের উপরে অত্যাচার চলছে। যাকে তাকে রোহিঙ্গা বলে দিচ্ছে। আমাদের না জানিয়ে বাংলাদেশী তকমা দিয়ে পুশ ব্যাক করা হচ্ছে। তাদের কাছে ভারতীয় আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, জমির দলিল থাকা সত্ত্বেও এই অত্যাচার কেন?’
সোমবার(২৮ জুলাই) পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুরে বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার্থে জন মিছিল শেষে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।
দিল্লি সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের উপর অত্যাচার, নিপীড়ন, বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে একাধিকবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বাংলা ভাষার উপরে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিজেপিকে নিশানা করেছেন মমতা। তিনি আহ্বান জনিয়েছেন, ভারতের ভিন রাজ্যগুলিতে অবস্থান করা বাঙালী পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসুক।
তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের(পরিযায়ী শ্রমিক) মুম্বাই, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা, আসামে থাকার কোন দরকার নেই। যারা ভালোবাসে না, যারা আপনাদের চায় না, আপনাদের উপর অত্যাচার করে, আপনারা কেন সেখানে থাকবেন? আপনারা বাংলায় ফিরে আসুন, আপনাদের দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ সরকার নেবে। আপনাদের জন্য নতুন স্কিম করা হবে। আপনাদের কাজ দেওয়া হবে। আপনাদের বাঁচার সুযোগ করে দেয়া হবে। ’
মমতার অভিমত, ‘আমাদের সরকার বিরিয়ানি বা পিঠে পায়েশ দিতে পারবো না, কিন্তু আমরা একখানা রুটি খেলে আপনাদের আধখানা রুটি দিতে পারবো। আপনাদের মনে শান্তি থাকবে। ’
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করে মমতা বলেছেন, ‘ডাবল ইঞ্জিন (যে রাজ্যগুলো বিজেপি শাসিত) সরকারের নেতারা বলছেন ভোটার তালিকা থেকে দেড় কোটি নাম বাদ দিয়ে দাও। কারণ ওরা সব রোহিঙ্গা নাগরিক। কিন্তু আমার প্রশ্ন, এটা কোথা থেকে এলো? কয়েক বছর আগে জাতিসঙ্ঘ বলেছিল, রোহিঙ্গার সংখ্যায় দশ লাখ। এখন সেটা বেড়ে হয়তো ১৭ লাখ হয়েছে। এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের জনজাতি। বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। ’
তার হুঁশিয়ারি, ‘বাংলায় নাম বাদ দিয়ে দেখুন, ছৌ নাচ, ধামসা মাদল, কাঁসর ঘণ্টা, দামামা বাজিয়ে দেখিয়ে দেবো। আমি বেঁচে থাকতে এ রাজ্যে এনআরসি করতে দেব না, ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেব না। ’
নাম উহ্য রেখে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে নিশানা করে মমতা বলেছেন, 'আপনি যখন আবুধাবিতে যান, তখন সেখানকার শেখকে গলায় জড়িয়ে ধরেন। তখন কি আপনি দেখেন ও হিন্দু না মুসলিম? যখন সৌদি আরব যান তখন কি এসব দেখেন? কয়েকদিন আগে মালদ্বীপে গিয়ে ৫ হাজার কোটি রুপি দিয়ে এলেন, তখন কি ঠিক করেন যে তারা হিন্দু না মুসলিম?'
এরপরই মোদির উদ্দেশ্যে মমতা বলেছেন, ‘আজকে ক্ষমতায় আছ বলে এজেন্সি লাগিয়ে যা ইচ্ছে তাই করছেন। ভাবছেন এই ভাবেই চলে যাবে। না- যাবে না। আমি একটা কথা বলতে চাই, কেন্দ্রের এই সরকার ২০২৯ পর্যন্ত চলবে না। তারপর বিজেপির লোকেরা কোথায় যাবেন? জায়গা দেখে রেখেছেন তো?’
ভিএস/এমএম