প্রতীক্ষার অবসান ঘটল। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির জন্য কলকাতায় এলো বাংলাদেশের ইলিশ।
প্রথম ধাপে বাংলাদেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ৩৭ টন ৪৬০ কেজি ইলিশ এনেছে ভারতে। তবে এদিন পাইকারি মাছ বাজারে ৫০ টন ইলিশ এসে পৌঁছেছে। আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ধাপে ধাপে আসবে এক হাজার ২০০ টন পদ্মার ইলিশ।
সেসব ইলিশের বাক্স বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া ফিশ মার্কেটে খোলা হয়েছে। ইলিশে বাক্স খুলতেই জড়ো হন খুচরা মাছ ব্যবসায়ীরা। কিন্তু, বিগত বছরগুলোর মতো এ বছর জমেনি বেচাকেনা। খুচরা বিক্রেতাদের অভিমত, প্রথম দিন দাম অনেকটাই বেশি, যা নাগালের বাইরে। তবে আগামীতে বেচাকেনা ভালো হবে বলে তারা আশাবাদী। এদিন থেকে এসব ইলিশ বিক্রি হবে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের খুচরা বাজারগুলোয়।
প্রথম দিন পশ্চিমবঙ্গের বাজারে ইলিশের দাম চড়া রয়েছে। মান অনুযায়ী, পাইকারি বাজারে ৭০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ রুপিতে। এক কেজির বেশি ইলিশের দর উঠেছে দুই হাজার রুপি, যা পরে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হবে দুই হাজার রুপি থেকে আড়াই হাজার রুপিতে, যার কারণে কিছুটা হতাশ খুচরা বিক্রেতারা।
তাদের অভিমত, মাছ তো সবে আসা শুরু করেছে। দুই একটা দিন দেখে কেনার পরিকল্পনা করবেন তারা। উত্তর চব্বিশ পরগণার খুচরা মাছ ব্যবসায়ী মনোজ কুমার সাউ বলেন, এবার এতটা দাম হবে ভাবতে পারিনি। কেজিপ্রতি আড়াই হাজার রুপি! মধ্যবিত্ত মানুষ চট করে কিনবে না। শনি-রোববার ছুটির দিন। তখন হয়তো কিছু বিক্রি হলেও হতে পারে। ফলে প্রথম দিন সরেজমিন করে গেলাম। তবে পূজার মুখে দাম কমবে এবং চাহিদা বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।
দমদমের বাজার থেকে এসেছেন সুব্রত মাঝি। তিনি জানান, প্রতিবার প্রথমদিনই সাত-আট পেটি বাংলাদেশের ইলিশ পাইকারি বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাই। তবে এবার এক পেটি নিয়েছি। বাজার বুঝে আগামীর পরিকল্পনা করব।
তিনি আরও বলেন, মানুষ এখন জামাকাপড় কিনতে ব্যস্ত। ফলে এখনই এত দাম দিয়ে কিনবেন না। পাশাপাশি তিনি জানান, এবার বাংলাদেশে ইলিশের বাজার অনেকটাই নষ্ট হবে ভারতের গুজরাট রাজ্যের ইলিশের কারণে। যেখানে খুচরা বাজারে গুজরাটের এক কেজি ইলিশের দাম পড়ছে হাজার থেকে এক হাজার ২০০ রুপি। সেখানে বাংলাদেশের ইলিশ আমাদের বেচতে হবে কমপক্ষে দুই হাজার রুপিতে। ফলে দাম না কমলে বাজার উঠবে না।
মঙ্গলবার প্রায় মধ্যরাতে বেনাপোল হয়ে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে এসে পৌঁছায় বাংলাদেশের ইলিশ। এরপর অঘোষিত ছুটি (বিশ্বকর্মা পূজা) থাকার কারণে বুধবার পেট্রাপোলে গোটা দিন দাঁড়িয়ে থাকে ইলিশের ট্রাকগুলো, পরে বুধবার মধ্যরাতে পেট্রাপোল সীমান্ত ছাড়িয়ে শুক্রবার সকালে সেসব ইলিশ পৌঁছে যায় হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারে। প্রথম ধাপে দাম বাড়ায় কিছুটা চিন্তিত মাছ ব্যবসায়ীরা। তবে এ মুহূর্তে সবারই নজর এখন বাংলাদেশের ইলিশের দিকে।
ভারতের ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ জানিয়েছেন, প্রথম দিন হওয়ায় বাংলাদেশের ইলিশের দাম বেশি। ধাপে ধাপে ঢুকতে থাকবে ইলিশ বহনকারী গাড়িগুলো। তখন কিছুটা সাধারণের নাগালের মধ্যে থাকতে পারে। এখন বিক্রি না হলেও আগামীতে ইলিশ একটাও পড়ে থাকবে না বলে জানান তিনি।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, এবার বাংলাদেশেই ইলিশ কম উঠেছে। তার পরও যে বাংলাদেশ সরকার ভারতে পাঠিয়েছে, অর্থাৎ আমাদের চিঠির আবদার রেখেছে, এতেই কৃতজ্ঞ আমরা।
তিনি আরও বলেন, এবারে পশ্চিমবঙ্গে সেভাবে ওঠেনি ইলিশ। গত দুমাসে গুজরাট থেকে এসেছে সাড়ে চার হাজার টন ইলিশ। খুচরা বাজারে যার দাম ছিল হাজার রুপির মতো। সেখানে বাংলাদেশে ইলিশ নিয়ে ক্রেতারা কিছুটা চিন্তিত থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে পূজা যত এগোতে থাকবে এবং বাংলাদেশের ইলিশের গাড়ি যত ঢুকতে থাকবে, ততই স্বাভাবিক হবে। মাছ একটাও পড়ে থাকবে না।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া। মহালয়ার মধ্য দিয়ে কলকাতায় শুরু হচ্ছে পূজার মৌসুম। ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী। এরপর লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজাসহ আরও কয়েকটি পূজা রয়েছে। অন্যদিকে, আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে ইলিশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে এই সময়ের মধ্যে একবার হলেও বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ নেবে বঙ্গবাসী। আর এই সময়কালে বাজার ঘুরে যাবে বলে মনে করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
ভিএস/আরএইচ