ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

বাংলাদেশ-ভারত সংলাপে সাম্প্রদায়িক বিভাজন বন্ধের দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
বাংলাদেশ-ভারত সংলাপে সাম্প্রদায়িক বিভাজন বন্ধের দাবি

কলকাতা: পৃথিবীর প্রত্যেক রাষ্ট্রের উচিত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বন্ধ করা উচিত সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর বিভাজন। একজন বাংলাদেশি বা ভারতীয় নিজেকে সংখ্যালঘুর বদলে রাষ্ট্রের নাগরিক ভাবুক। এই মৌলিক অধিকার গড়ে তোলার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টসে ‘বাংলাদেশ-ভারত সংলাপ: সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র শিরোনামে এক সেমিনারে এ কথা বলেন বক্তারা। ‘ইন্দো-বাংলা কালচারাল সেন্টার’ এ সেমিনারের আয়োজন করেন।

সেমিনারে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপিসহ দু’দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য রাখেন।  

বিএনপির নেতারা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আইসিউতে আছে। আমাদের ও সংবাদমাধ্যমের কোনো বাকস্বাধীনতা নেই। (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানের নেতৃত্বে পজিটিভ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি আমরা। নিরপেক্ষ ভোট হলে আমরা ক্ষমতায় আসবো। এটা শাসক দল বোঝে, তাই এবারও স্বচ্ছ নির্বাচন হবে না।  

বিএনপির নেতারা আরও বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনে আমাদের দলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের জন্য ৮-১০ শতাংশ আসন থাকবে। ক্ষমতায় এলে তাদের জন্য কাজ করবো, এটা আমাদের পরিকল্পনায় আছে।  

এসময় সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন, মুক্তিযুদ্ধের মতো তাদের জন্যও কোটা চালু করা, নারীদের কাজে বেশি করে সুযোগ দেওয়া, ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মতো নয়নাভিরাম সুন্দর মন্দির গড়ে তোলাসহ একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা জানান বিএনপি নেতারা।  

আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, আমরা চিন্তিত জামায়াত-বিএনপিকে নিয়ে। তারা দেশটাকে আফগানিস্তান বানাতে চায়। এটা আমরা হতে দেবো না। এখানে এসে তারা প্রকল্প ঘোষণা করছে। দেশে ফিরে গেলে কিছুই বলে না। ঢাকায় ঢুকে এরাই আবার বিরোধিতা করবে। এরাই লন্ডনের পথে মিছিল বের করে সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়েছিল।  

তারা বলেন, আমরা ভুলে যাইনি বঙ্গবন্ধুকে কারা হত্যা করেছিল। কী ছিলো তাদের উদ্দেশ্য। আমরা ভুলিনি। এই বিএনপি-জামায়াত জোট বলেছিল, কেন একজন হিন্দুর গান জাতীয় সংগীত হবে। আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাঙালি বলে জানি। কোনো সম্প্রদায় ভাগ করি না। বিএনপি-জামায়াত করে। বিএনপি-জামায়াত মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে।  

আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হলে আওয়ামী লীগ সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার বিল আনবে জানিয়ে দলের নেতারা বলেন, সব কিছু তাড়াহুড়ো করলে হয় না। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। সেখানে আমরা কোনো জাতি ধর্মে ভাগ করি না। আর কারা ওই সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সমর্থন করেছিল দেশের জনগণ জানে।  

বাংলাদেশের মিত্ররাষ্ট্র হিসাবে ভারত সবসময় ছিল এবং থাকবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা আরও বলেন, ভারতের অবদান কোনো মতেই ভুলতে পারবো না। ভারতের সঙ্গে আমাদের যথেষ্ট সুসম্পর্ক আছে। আমরা তা নষ্ট হতে দিতে পারি না। কারণ আমরা মনে করি বন্ধু পাল্টানো যায় কিন্তু প্রতিবেশী পাল্টানো যায় না। বিক্ষিপ্ত ঘটনা সব দেশেই আছে। তবে তা দিয়ে দেশের জনগণ বা বর্তমান শাসকের বিচার করা যায় না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগোচ্ছে এবং এগোবে। কোনো বিরোধী শক্তি আমাদের ঠেকাতে পারবে না।

সেমিনারে অংশ নেন খন্দকার আহসান হাবিব, অধ্যাপক ইউসুফ আবদুল্লাহ, অধ্যাপক দেবাশীষ কুমার কুণ্ডু, ইন্দো-বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টারের সভাপতি সৈয়দ তানভির নাসরিন, সাধারণ সম্পাদক অলেন্দু গোস্বামী ও প্রদীপ হালদার। রাজনৈতিক নেতা বিশিষ্টজনের মধ্যে ছিলেন গদাধর চট্টোপাধ্যায়, গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সমীর কুমার মিত্র, পংকজ রায়, কাজী মোজাহারুল ইসলাম দোলন, প্রতীম রঞ্জন বোস, প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, জয়নাল আবেদিন, জয়ন্ত কুমার রায়, অমিত গোস্বামী, এ টি এম আনিসুর রহমান বুলবুল, সাংবাদিক রক্তিম দাস প্রমুখ।

তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদের পাশাপাশি আসামের কথিত নাগরিকপঞ্জিকা বা এনআরসি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। তিনি বলেন, আমরা চাই প্রতিবারই বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে শঙ্কামুক্ত ভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, এবারও তারা নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
ভিএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।