ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

পূজার বিক্রিতে ‘চ্যাম্পিয়ন’ ফুটপাতের দোকানিরাই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৮
পূজার বিক্রিতে ‘চ্যাম্পিয়ন’ ফুটপাতের দোকানিরাই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কলকাতার নিউমার্কেটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়-ছবি-বাংলানিউজ

কলকাতা: আমার এবার পূজার জামা হবে না মা? প্রশ্ন করেছিল আট বছরের তিতলি। মা বলেছিলেন, বাইরে বৃষ্টি তো। বৃষ্টি থামলে যাবো। তিতলি কি বোঝে তার নামে এক ঝড় দুনিয়া কাঁপাচ্ছে? ঝড় চলে গেছে তবে এখনও কলকাতায় এক নাগাড়ে হয়ে চলেছে বৃষ্টি। কিন্তু তাতে কি যায় আসে আট বছরের তিতলির। পাশের বাড়ির সবার নতুন পোশাক হয়ে গেল, কবে হবে তিতলির। তাই নাছোড়বান্দা মেয়ের মন রক্ষা করতে টালিগঞ্জ থেকে মেট্রো চেপে মায়ের আগমন নিউমার্কেটে।

শুধু তিতলিকে দোষ দেওয়া যায় না, কাল বাদে পরশু পূজা। তাই শহরতলীর শেফালি থেকে শহরের সনিয়া বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে হাজির হচ্ছে নিউমার্কেট থেকে শুরু করে শপিংমলগুলোয়।

এ যেন মা দুর্গার যুদ্দংদেহি মেজাজকেও হার মানায়।  

উৎসব তো আর রোজ রোজ আসে না। বছরে একবার তাই স্কুলে ছুটি পড়তেই চলে এসেছি-এমনই বলেছিলো ছাত্রী সনিয়া।  
 
পানি না জমলেও কলকাতায় অবিরাম গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েই চলেছে শুক্রবার (১২ অক্টোবর) দুপুর থেকে। আশার খবর, রোববার (১৪ অক্টোবর) থেকে পরিষ্কার হবে আকাশ। তিতলিরা যেমন বৃষ্টি মাথায় নিয়ে জামা কিনতে মশগুল ঠিক তেমনি নিম্নচাপকে উপেক্ষা করে শ’য়ে শ’য়ে পসরা নিয়ে বসেছেন ফুটপাতের বিক্রেতারা। ভিড়ের ঠেলায় গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। দোকানদারদের চলছে নানা সুরে হাঁকডাক। সবাই খুঁজছে সস্তায় মনের মতো জিনিস।
 
তবে আছে বড় বড় দোকান। তার দরজা খুললেই ভেতর থেকে ঠাণ্ডা বাতাস। ওই দোকানগুলোর কাঁচের জানালাতেও ঝিলিক দিচ্ছে ব্র্যান্ডের নানা রকমের ড্রেস। তবুও শেফালি থেকে সনিয়ারা সেই দরজা ঠেলে ভেতরে যাচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে মা দুর্গা এবার সহায় নেই ব্র্যান্ডওয়ালাদের সঙ্গে।  

ক্যাশ কাউন্টারে বসা হিমাংশু আগরওয়াল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বাজার মোটামুটি। সন্ধ্যার সময় ভিড়টা বাড়ে। তবে সব শেষ করে দিচ্ছে অনলাইন শপিং আর ফুটপাতের দোকানিরাই।
 
হিমাংশুর কথা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। একটি সর্বভারতীয় বণিকসভার করা সমীক্ষা বলছে, আগামী এক বছরের মধ্যে ভারতে প্রায় ১২ কোটি মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করবেন। গত বছর সেই সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৮০ লাখ। আর এভাবেই ধীরে ধীরে ধস নামতে পারে ঝাঁ-চকচকে বড় বড় দোকানগুলোর। ভারতে ৬০ ভাগ দোকান অদূর ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
 
তবে শপিংমলগুলি শেষ সময়ে সেজে আছে ক্রেতা ধরার জন্য। পূজা যত এগিয়ে আসছে, ততই জাঁকজমক সেসব দোকানে। বেচাকেনা ভালোই ছিলো ছুটির দিনগুলিতে। কয়েক হাজার টাকার কেনাকাটার দাম মুহূর্তে চুকিয়ে দিচ্ছে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে। তবে এসব দোকান তো এক শ্রেণির জন্য। মধ্যবিত্তের এসব নাগালের বাইরে।  
 
উৎসবের মুখে এসব নিয়ে ভাবার ইচ্ছা কারোর নেই। ক্লান্তিও নেই কেনাকাটায়। তাই এগিয়ে গিয়েছে ফুটপাতই। যেখানে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে দোকানের মাথা ঢাকা, অথবা টিনঘেরা দোকানে রাতদিন এক করে ফেলছেন দোকানিরা, শেষবেলায় যেন এবার তারাই চ্যাম্পিয়ন। তারা অনায়াসে সহ্য করছেন ধৈর্যের বাঁধভাঙা দর-কষাকষি। নগদে, ঘামে, জলে, কাপড়ের মাড়ে, প্লাস্টিকের মোড়কে আর ক্রেতা ধরার অমোঘ আহ্বানে রাজপথের দুই ধারে শেষ হাসি হাসছেন ফুটপাতের দোকানিরাই।
 
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোকানের কাঁচের জানালায় আটকে থাকা চুমকিশোভিত লেহেঙ্গার থেকে বেশি কদর পাচ্ছে রাস্তার হ্যাঙ্গারে ঝুলে থাকা ২শ’ ৫০ রুপির সুতির স্কার্ট। খুশিতে হাসছে তিতলিরা। দামে কি এসে গেল, জামায় তো নতুন গন্ধ আছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, ১৩ অক্টোবর ২০১৮
ভিএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।