কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা ভোট মিটতেই উল্টো স্রোত বইতে শুরু করেছে বাংলার রাজনীতিতে। নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার যেমন হিড়িক পড়েছিল, তেমনি ফল ঘোষণার পর থেকেই ঠিক যেন তার উল্টোটা।
ভোটের ফলপ্রকাশের পর সম্প্রতি যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোলা চিঠি লিখেছিলেন তারই এক সময়ের ছায়াসঙ্গী সোনালি গুহ। তিনি লিখেছেন, ‘আমি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্য দলে গিয়েছিলাম, যা আমার চরম ভুল সিদ্ধান্ত। নতুন দলে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি। মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না, তেমন আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। দিদি আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থী। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি ক্ষমা না করলে আমি বাঁচবো না। আপনার আঁচলের তলে আমাকে টেনে নিয়ে বাকি জীবনটা আপনার স্নেহতলে থাকার সুযোগ করে দিন। ’
গতবারের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়ে হাওড়ার ডোমজুড় থেকে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছেন। ফল ঘোষণার পরই টুইটে লিখেছিলেন, ‘বাংলার মানুষ কোন পক্ষকে চায় সেটা তারা ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে। বাংলা যখন করোনা নিয়ে লড়াই করছিল সেই সময় রাজনীতি করলে কী ফল হয় তা ফলাফলে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ’ তারপর থেকেই রাজীবের তৃণমূলে ফেরার জল্পনাও শুরু হয়েছিল। তবে ভোটে হেরে যাওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানিয়ে দেন সমাজসেবা ছাড়া আপাতত কোনো দলই করবেন না তিনি।
তবে একই সুর শোনা গেছে বসিরহাটের সাবেক বিধায়ক ভারতীয় ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাসের কথাতেও। তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের সিবিআই গ্রেফতার নিয়ে ‘এটা অন্যায়’ বলে, মুখ খুলেছেন তিনি। তৃণমূলের দাবি, দল ছাড়তে পারেন বিজেপির বেশ কয়েকজন বিধায়ক ও সংসদ সদস্য। যোগ দেবেন তৃণমূলেই। তবে শুধু সাত থেকে আটজন বিধায়কই নন, বিজেপির তিন সংসদ সদস্যও তৃণমূলের পথে পা বাড়িয়ে আছেন।
এ বিষয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, ‘অনেকেই জনসমক্ষে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দলবদলুদের দলে ফেরানো হবে কিনা তা এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ’
এ পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির মুখপত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘তৃণমূলের অস্তিত্বই অন্য দল ভাঙিয়ে তৈরি হওয়া। বাংলার মানুষ সবটাই জানে। এসব নেতারা তৃণমূলে কাজ করতে পারছে না। দলে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে এক সময় কান্নাকাটি করে বিজেপিতে এসেছিল। এখন এরাই লোক হাসিয়ে তৃণমূলে ফিরতে চাইছে। এ নিয়ে নতুন কি বলবো। ’
একুশের ভোটে ২০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিলেন অমিত শাহ। সেই লক্ষ্য পূরণে ঝাঁপিয়েও পড়েছিল মোদী-শাহসহ গোটা দল। কিন্তু ২ মে ফল ঘোঘণার পরই সেই লক্ষ্যের ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারেনি বিজেপি। ৭৭ আসনেই থেমে গেছে বিজেপির ‘আসল পরিবর্তনের রথ’। তার মধ্যে আবার বিজেপির কোচবিহারের সংসদ সদস্য নিশীথ প্রামাণিক এবং উত্তর ২৪পরগণার রানাঘাটের সংসদ সদস্য জগন্নাথ সরকার সংসদ সদস্য পদ থাকা সত্ত্বেও দলের কথায় এবারে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন।
জেতার পর তারা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা সংসদ সদস্য হিসেবেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগও করেছেন। অর্থাৎ দু’জন কমে বিজেপির হাতে এখন ৭৫ জন বিধায়ক। এরমধ্যে তৃণমূলের দাবি নাকি সাত থেকে আটজন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরতে পারেন। ফলে বাকি বিধায়কদের ৫ বছর বিজেপি সামলে রাখতে পারে কিনা তা নিয়ে এখন ঘোর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে দলের ভেতরেই।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২১
ভিএস/আরবি