কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪টি কেন্দ্রের বদলে ভোট হয়েছিল ২৯২টি আসনে। ওই সময় প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর ও সামসেরগঞ্জের ভোট বাতিল হয়।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের কথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী কর্তা আরিজ আফতাবকে বুধবার (২১ জুলাই) জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এও জানিয়েছেন, ওই দুটি বিধানসভা কেন্দ্রের ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের (ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইলিং) ফার্স্ট লেভেল চেকিং করার দরকার নেই। তবে কলকাতার ভবানীপুরসহ বাকি ৫ বিধানসভা কেন্দ্রে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের ফার্স্ট লেভেল চেকিংয়ের কাজ শেষ করে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যে বিধানসভা ভোট চলাকালে জঙ্গিপুরে বামপ্রার্থী প্রদীপ নন্দী এবং সামসেরগঞ্জে কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হক করোনায় মারা যান। সেখানে সপ্তম দফায় ২৬ এপ্রিল ভোট ছিল। পরে ভোট পিছিয়ে ১৩ মে নেওয়া হবে বলে ঠিক করে নির্বাচন কমিশন। সেই মতো নতুন করে মনোনয়ন প্রক্রিয়াও হয়। কিন্তু ঈদ এবং করোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোট স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল। এবার সেখানে কী হবে তা জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি লেখেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী কর্তা। তার জবাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে নতুন করে আর মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়া হবে না। যে অবস্থায় ভোট শেষ হয়েছিল, সেই অবস্থা থেকে বাকি ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
এছাড়া বাকি পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র যথাক্রমে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর, উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ, নদিয়া জেলার শান্তিপুর, কোচবিহার জেলার দিনহাটা ও দক্ষিণ ২৪ জেলার গোসাবার উপনির্বাচনে একেবারে নতুন করে ভোটগ্রহণ করা হবে। এবারে শান্তিপুর এবং দিনহাটা কেন্দ্রে বিজেপির দুই সংসদ সদস্য জগন্নাথ সরকার ও নিশীথ প্রামাণিক জয়ী হয়েও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে এমপি পদে ফিরে গেছেন। এছাড়া ভোট মিটে যাওয়ার পর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান খড়দহের জয়ী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কাজল সিনহা। সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের।
পাশাপাশি এবারের বিধানসভা ভোটে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন রাজ্যের বর্তমান কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে, সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী নন্দীগ্রামে পরাজিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোনো একটি কেন্দ্র থেকে জিতে আসতে হবে। সে কারণেই, শোভনদেব কিছুদিন আগেই ভবানীপুর আসন থেকে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে তৃণমূল সুপ্রিমো ফের একবার ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে চলেছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ভবানীপুরের পাশাপাশি বাকি ছয়টি কেন্দ্রের নির্বাচন অফিসেও ভোটের ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে। তবে সবার নজর রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিকে। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসলেও সেই সময়ও তিনি বিধায়ক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। পরে সুব্রত বক্সি ভবানীপুর কেন্দ্রের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলে ছয় মাসের মধ্যে উপনির্বাচনে জিতে আসেন মমতা। এরপর ২০১৬ সালেও তিনি এই কেন্দ্র থেকেই জিতে দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের দায়িত্ব নেন। এবারই মমতা কেন্দ্র বদল করে নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়েছিলেন। হারতে হয় বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। ফলে আরও একবার ভবানীপুরেকেই বেছে নিয়েছেন মমতা। ফলে ফের একবার সবার চোখ থাকবে মমতার কেন্দ্রের দিকে।
তবে নির্বাচন কমিশন এখন অবদি তফসিল ঘোষণা না করলেও ধারণা করা হচ্ছে আগামী সেপ্টম্বরেই পশ্চিমবঙ্গে ৭ কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতে চলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২১
ভিএস/এমজেএফ