ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কলকাতা প্রেসক্লাবে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সংবাদ কেন্দ্র

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২১
কলকাতা প্রেসক্লাবে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সংবাদ কেন্দ্র

কলকাতা: কলকাতা প্রেসক্লাবে আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন হবে বঙ্গবন্ধু সংবাদ কেন্দ্রের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে প্রেসক্লাব কলকাতায় এই সংবাদ কেন্দ্রটি হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু সংবাদ কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। উপস্থিত থাকবেন কলকাতার বিশিষ্টজনরা।

বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার হিসেবে প্রেসক্লাব কলকাতা পাচ্ছে ৬টি কম্পিউটার, ২টি ল্যাপটপ, একটি স্ক্যানার ও ২টি প্রিন্টার। এছাড়া ৪২ ইঞ্চি এলইডি টিভি এবং এইচডি প্রোজেক্টর। এরসঙ্গে থাকবে বঙ্গবন্ধুর ওপর নানা সংকলন, দুই বাংলার মুক্তিযুদ্ধের বইসহ বাংলাদেশকে চেনার নানা গ্রন্থ, যা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন সব সাংবাদিক।

এর আগে গত সেপ্টম্বরে নয়াদিল্লিতে প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ায় বঙ্গবন্ধু সংবাদ কেন্দ্র চালু হয়েছে। দিল্লির রাইসিনা রোডে অবস্থিত প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ার দ্বিতীয় তলায় ওই মিডিয়া সেন্টারের উদ্বোধন করেছিলেন ড. হাছান মাহমুদ।

তবে ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন কলকাতার এ প্রেসক্লাব। ১৯৪৫ সালের ২২ জুলাই উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের দোতলার একটি ছোট্ট ঘরে কয়েকজন সাংবাদিকের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল ক্লাবটি। পরে ১৯৫৭ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু কলকাতার রিপোর্টাদের এক বার্ষিক সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আসেন। রিপোর্টারদের সুবিধার্থে কলকাতার কেন্দ্রস্থলে প্রেসক্লাবের জন্য জমি দেওয়ার ব্যাপারে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।

সেই প্রতিশ্রুতি মতো কলকাতার সেনাবাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ময়দান অর্থাৎ গড়ের মাঠের একাংশে গড়ে ওঠে প্রেসক্লাব কলকাতা। এই ক্লাব ভারতের স্বাধীনতার পথপরিক্রমা দেখার পর কালের আবর্তে দেখেছে বেদনাদায়ক বাংলাভাগ থেকে ভাষার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ। ফলে প্রেসক্লাব কলকাতা মুক্তিযুদ্ধের একাধিক স্মৃতি বহন করে চলেছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে নেতাদের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়, ‘সবাইকে নিরাপদ জায়গায় যেতে হবে’। নেতাদের এবং বিপদগ্রস্ত জনগণের পূর্ণ নিরাপদে থাকার জায়গা হিসেবে সর্বাগ্রে বেছে নেওয়া হয় কলকাতাকে। ব্রিটিশ শাসনের কেন্দ্রবিন্দু কলকাতা এমন শহর, যেখান থেকে অনায়াসে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করা সহজ ছিল।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা মিটিং-পরিকল্পনা এই প্রেসক্লাব কলকাতা থেকেই হয়েছিল। এমনকি সে সময় যেসব সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহের জন্য বারবার বাংলাদেশে গিয়েছিলেন, তারা কলকাতার এ প্রেসক্লাবেই থাকতেন। মুজিবনগর সরকারের শপথের সময় এই প্রেসক্লাব থেকেই ২৫টি গাড়ি ছাড়া হয়েছিল। এমন নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই প্রেসক্লাবের সঙ্গে।

এই ক্লাবে সাংবাদিক ছাড়া সদস্য ছিলেন দিকপাল কিংবদন্তিরা। এই ক্লাব প্রাঙ্গণে পা পড়েছিল অবিভক্ত বঙ্গের তিন প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দিন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, মোরারজি দেশাই, রাজীব গান্ধী, অটলবিহারী বাজপেয়ী,  রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম, প্রণব মুখার্জির মতো ব্যক্তিত্বরাও এই প্রেসক্লাবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ক্লাবের ৭৫ বছরে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: কলকাতার সাংবাদিকরা ও প্রেসক্লাব কলকাতা’ নামে একটি বই প্রকাশ হয়েছিল। বইটির সংকলন ও সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন ক্লাবের বর্তমান সভাপতি ও দূরদর্শনের সাংবাদিক স্নেহাশিস সুর।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২১
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।