কলকাতা: ভারতে অশান্তির আগুনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার সাঁকরাইলে উঠে এল এক সম্প্রীতির ছবি। হিন্দু শবদেহ সৎকার করলেন স্থানীয় মুসলিমরা।
এ দৃশ্য দেখে রাজ্যটির বহু মানুষ বলছেন, এটাই বাংলার চিরকালীন সম্প্রীতির প্রকৃত ছবি। উস্কানি দিয়ে যে নেতারা দেশ জোড়া অশান্তিতে ইন্ধন জোগান, তারা এসে বাংলা থেকে শিক্ষা নিয়ে যাক।
ওই অঞ্চলে সন্তোষ কর্মকার নামে এক ব্যক্তির মৃতদেহ আগলে বসেছিলেন ছেলে মাধব কর্মকার। তার কাছে অন্তিম সৎকারের টাকা নেই। এগিয়ে আসেন নুরজ লস্কর, ইমরান সর্দার, মেহেরাজ মল্লিকরা। তারাই করেন সরকারের সহযোগীতা।
সাম্প্রতিক উত্তপ্ত পরিবেশ কাটিয়ে বর্তমানে অনেকটাই স্বাভাবিক পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলা। ওই জেলার সাঁকরাইলে শুক্রবার (১৭ জুন) সকালে উঠে এসেছে এই অনবদ্য ছবি।
টানা দু’বছর লকডাউনের পর থেকে পেশায় গৃহশিক্ষক মাধব কর্মকার দীর্ঘদিন ধরে অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন। সংসার চালানো তো দূরস্ত, বাবা সন্তোষ কর্মকারের চিকিৎসা চালাতেও হাত পাততে হচ্ছিল প্রতিবেশীদের কাছে।
বৃহস্পতিবার রাতে সাঁকরাইলের নিজের বাড়িতে মারা যান সন্তোষ কর্মকার। পকেট ফাঁকা তাই হতাশ হয়ে বসেছিলেন ছেলে মাধব। খবরটা ছড়িয়ে যাওয়ায় এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী ইমরান, নুরজরা। নিজেদের মধ্যে টাকা তুলে জোগাড় করেন দাহ করার সরঞ্জাম। হাতে করে নিজেরাই সবকিছু জোগাড় করেন। হাতে করে খই ছড়িয়ে, ছেলে মাধবের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হিন্দুরীতি অনুযায়ী শ্মশান পর্যন্ত শবদেহ পৌঁছে দেন ইমরান, নুরজরা।
প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় অন্ত্যেষ্টির পরও মাধবের চোখে পানি। মাধব বলেন, আমার আত্মীয়স্বজন নেই। প্রতিবেশীরাই আমার সবকিছু। তারাই সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। ধর্ম কখনওই আমাদের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এ ঋণ আমার পক্ষে শোধ করা সম্ভব নয়।
শশ্মানযাত্রী ইমরান বলেন, আমরা এখানে মিলেমিশে থাকি। একে অন্যের বিপদে এগিয়ে যাই। আমাদের কেউ মারা গেলে ওনারাও মাটি দিতে আসেন। একসাথে উৎসব পালন করি। আমাদের মধ্যে ধর্ম কোনো দিন বিভেদ তৈরি করেনি।
তার বন্ধু নুরজ বলেন, আমরা অন্যায়ের শাস্তি চাই, তা বলে প্রতিবেশীর বিপক্ষে নই। ছোট থেকে এভাবেই বাংলায় বড় হয়েছি। বাংলার সম্প্রীতির এই বার্তা পৌঁছে যাক সবার কাছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২২
ভিএস