কলকাতা: ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণের মাত্রা লাগামছাড়া। গত কয়েকদিন ধরেই কার্যত হাঁসফাঁস অবস্থা শহরবাসীর।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) দিল্লিতে বায়ুর গুণমানের সূচক অর্থাৎ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (AQI)-এর মাত্রা ৪৫৩। দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীতে এই সূচকের মাত্রা ৪৮৫। বিমানবন্দরের আশপাশে এই সূচক ৪৫৩। নয়ডাতে এই সূচকের মাত্রা ৫৬২ আর গুরুগ্রামে ৫৩৯। সেখানে ওয়াজিরাবাদে সূচক বা একিউআই ছিল ৭৯৮। যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত খারাপ, বিপজ্জনক এবং অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া দিল্লির অন্যান্য জায়গার একিউআই সকালের দিকে ৩৭০ থেকে ৪৭০-এর মধ্যে. ঘোরাফেরা করেছে, যা উদ্বেগজনক।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ডের তথ্য অনুসারে, বায়ুদূষণের পরিমাণকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত রিডিং বা সূচক হলে সেটি ভালো। ৫১-১০০ সূচক পর্যন্ত সন্তোষজনক। ১০১-২০০ উঠলে সেই অঞ্চল মাঝারি মাপের বলে ধার্য করা হয়। ২০১-৩০০ হলে তাকে উদ্বেগজনক বলে চিহ্নিত করা হবে। ৩০১ থেকে ৪০০ খুবই গুরুতর এবং ৪০১-৫০০ সূচক হলে সেটা বিপজ্জনক বলে ধরা হয়। সেখানে গত কয়েকদিন ধরে দিল্লি বায়ুদুষণের সূচক বিপদ সীমার ওপরে।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) সকাল থেকে দিল্লি ধোঁয়াশার আবরণে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে দূষণ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অভিমত, দিল্লিতে অবিলম্বে চতুর্থ পর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা দরকার। এই ব্যবস্থার অর্থ হলো, ভিনরাজ্য থেকে দিল্লিতে কোনও ডিজেল ট্রাক বা পণ্যবাহী গাড়ী ঢুকতে পারবে না। এমনকী, ডিজেল গাড়িও ঢুকতে পারবে না। পাশাপাশি আগের মত দিল্লিতে সব ধরনের গাড়ির সংখ্যাও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শহরেও ডিজেল গাড়ি চলাচল আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। প্রয়োজনে জোড়-বিজোড় নীতিও চালু করা হতে হবে। প্রসঙ্গত, আপ সরকার দিল্লিতে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে দুষণকালীন সময় গাড়ির নম্বর প্লেটের সংখ্যা অনুযায়ী, জোড়-বিজোড় নীতি চালু করেছিল। অর্থাৎ একদিন জোড় সংখ্যার গাড়ি, অপরদিন বিজোড় সংখ্যার গাড়ি।
এছাড়া এদিন থেকে দিল্লি প্রবেশের সব সড়কে পর্যবেক্ষক দল মোতায়েন করা হয়েছে। আপাতত বন্ধ করা হয়েছে শহরে সব ধরনের ইমারতীর কাজ। সড়ক, ফ্লাইওভার সংক্রান্ত -সব কাজ বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া স্কুল, কলেজ, অফিস ভার্চুয়াল মাধ্যমে চালানোর আবেদনও করা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে অনলাইন ক্লাস। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। এক নির্দেশিকা জারি করে নয়ডার প্রায় ১,৮০০ স্কুলে মাঠে গিয়ে খেলাধুলোও নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছে, শনিবার (৫ নভেম্বর) থেকে রাজ্যে প্রাথমিক স্কুল বন্ধ রাখা হবে। দূষণ পরিস্থিতির উন্নতি না ওয়া পর্যন্ত এই নিয়মই জারি থাকবে। পাশাপাশি চাকরিজীবিদের ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এর অনুমতি দেওয়া হোক, এমন সুপারিশও করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দিল্লি সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে প্রতিবছর ফসল কাটার পর জমিতে পড়ে থাকে অংশ বিশেষ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তারপরেই থাকে দীপাবলি। যে কারণে দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকে। তবে এবার দীপাবালতে আতশবাজি নিষিদ্ধ থাকলেও দূষণ নিয়ন্ত্রনে আনা যায়নি। যার ফলে সর্দি, কাশি, জ্বর ও সিওপিডির মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দিল্লিবাসী। বাড়ছে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগও। এছাড়া মাথা ব্যথা, বমি ভাব, ঝিমুনিও দেখা দিচ্ছে অনেকের। চিকিৎসকদের দাবি, অতিরিক্ত দূষণের ফলে শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি হৃদরোগ হতে পারে।
এই পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল সরকারের দিকেই আঙুল তুলেছে বিজেপি। শুক্রবার রাজ্যটির বিজেপি সভাপতি আদেশ গুপ্তা কটাক্ষ করে বলেছেন, কেজরিওয়াল হলো -পার্ট টাইম মুখ্যমন্ত্রী। কেজরির এখন দিল্লির জন্য সময় নেই। পাঞ্জাব, গুজরাট গোটা দেশে সফর করতে হচ্ছে তাকে। প্রসঙ্গত, আগামী ১ ডিসেম্বর এবং ৫ ডিসেম্বর গুজরাট ভোটের দিকে নজর রেখে বারবার সে রাজ্যে যাচ্ছেন কেজরিওয়াল। সেই নিয়েই খোঁচা দিয়েছে বিজেপি। যদিও আপ সরকার এই অভিযোগ মানেনি। শুক্রবার দূষণ নিয়ে বৈঠকে বসছেন দিল্লির পরিবেশ মন্ত্রী গোপাল রাই। সেখানেই স্থির হবে পরবর্তী পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ০৪ নভেম্বর, ২০২২
ভিএস/