কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত): পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করতে গিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করে বসছেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি। তবে ঘটনা ভাইরাল হতেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) রাজ্যের বিরোধী দলীয় দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করতে যেয়ে রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করে বসেন অখিল গিরি। জনসভায় দেওয়া সেই বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যায়, তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তার সামনেই রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, আমরা রূপের বিচার করি না। তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু, তোমার রাষ্ট্রপতিকে কেমন দেখতে বাবা?
ওই ভিডিওকে হাতিয়ার করে তৃণমূলকে ‘আদিবাসী বিরোধী’ তকমা দিতে শুরু করে বিজেপি। অখিল গিরির বিধায়ক পদ খারিজের দাবিও তুলেছে তারা। থানায় এফআইআর থেকে প্রতিবাদ মিটিং, মিছিলও করেছে।
‘তৃণমূল তপশিলি জাতির প্রতি আদপে শ্রদ্ধাশীল নয় বলে, ক্ষোভ জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আদিবাসী বিরোধী। ’
বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি সেলের প্রধান অমিত মাল্যব টুইটারে ওই ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য অখিল গিরি বলছেন, আমরা রূপের বিচার করি না। কিন্তু তোমাদের রাষ্ট্রপতি কেমন দেখতে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময়েই জনজাতি বিরোধী। তাই তো তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থন করেননি।
শনিবার (১২ নভেম্বর) বেলা বাড়তেই তড়িঘড়ি অখিল গিরির মন্তব্যের নিন্দা করেছে মমতার দল। সর্বভারতীয় তৃণমূলের টুইটারে লেখা হয়েছে, ‘ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রপতি, শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আমাদের পরম শ্রদ্ধা। আমাদের দলের বিধায়কের করা দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করি এবং স্পষ্ট করে জানাতে চাই যে অখিল গিরির মন্তব্যের আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি। নারীর ক্ষমতায়নের যুগে এ ধরনের দুর্ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়। ’
দল বিরোধিতা করলেও মন্ত্রীর পাশেই রয়েছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দল সর্বস্তরের নারীদের সম্মান করে, রাষ্ট্রপতিকে তো বটেই। তবে মন্ত্রীকে তো লাগাতার অপমান করে গেছেনে শুভেন্দু অধিকারী। অখিলের রূপ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। তাকে ‘দাঁত ফোকলা’ মন্ত্রী বলেছেন। শুধু তাই নয়, অখিল গিরিকে ‘কাকের মতো দেখতে’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন শুভেন্দু।
তবে মৎস্যমন্ত্রীর মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি জানান, ‘কুরুচিকর মন্তব্য যিনি করেছেন, তিনি নিজে ক্ষমাও চেয়েছেন। তার মন্তব্যকেও আমরা সমর্থন করি না। দলের কর্মীদের চাঙা করতে কোনো ‘দাওয়াই’ দেওয়ার দরকার নেই। ওরা এমনিতেই সুস্থ।
রাষ্ট্রপতিকে অবমাননাকর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক বাড়তেই শনিবার অনুতাপ প্রকাশ করেছেন খোদ মৎস্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দলীয়কর্মী বৈঠকে মুখ থেকে বের হয়ে গেছে। আসলে শুভেন্দু অধিকারী বিভিন্ন জায়গায় আমার সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। আমি বয়স্ক মানুষ। আমার মনে ক্রোধ জন্মেছিল। রাষ্ট্রপতি মহোদয়াকে আমি কোনো অসম্মান করতে চাইনি। তাঁর প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। যে কথা আমার মুখ থেকে বেরিয়েছে, তা ক্রোধের বশে বেরিয়ে এসেছে। আমি অনুতপ্ত।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, ১২ নভেম্বর, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড