ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

ফের চাকরিপ্রত্যাশীদের বিক্ষোভ, একঘণ্টা স্তব্ধ কলকাতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২২
ফের চাকরিপ্রত্যাশীদের বিক্ষোভ, একঘণ্টা স্তব্ধ কলকাতা

কলকাতা: চাকরির দাবিতে ফের উত্তপ্ত হলো কলকাতার রাজপথ। এবার নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভে শামিল ২০১৪ সালের উচ্চপ্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা।

বিক্ষোভে শামিল রাজ্য সরকারের গ্রুপ-ডি-র চাকরি প্রার্থীরাও।  

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি লাগোয়া দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর, কালীঘাট, হাজরা চত্বরে বুধবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে বিক্ষোভ শুরু করেন চাকরিপ্রার্থীরা।

বিক্ষোভ শুরু হতেই বাধা দেয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। তখনই উত্তেজনা ছড়ায়। চাকরিপ্রত্যাশীদের দাবি, ‘হয় চাকরি দাও নাহলে এখানে (রাস্তায়) বসতে দাও’। এই স্লোগান তুলে চাকরিপ্রার্থীরা ভবানীপুর, কালীঘাট, হাজরা এলাকার পথে বসে পড়েন। কেউ কেউ শুয়েও পড়েন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তোলার চেষ্টা করতেই শুরু হয় ধস্তাধস্তি।  

এদিন নারী পুলিশের সংখ্যা কম থাকায়, অনেক নারী আন্দোলনকারীদের পুরুষ পুলিশকে টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। বচসা বাঁধে সংবাদকর্মীদের সঙ্গেও।  

বিক্ষোভকারীদের চ্যাংদোলা করে প্রিজন ভ্যানে তুলতে দেখা যায় পুলিশকে। ঘটনাস্থলে ছিলেন ডিসি সাউথ আকাশ মাঘেরিয়া। তার নির্দেশে প্রিজন ভ্যান কম পড়ায় বহু আন্দোলনকারীকে বেসরকাররি বাস, ট্যাক্সিক্যাবে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।

চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, সাদা খাতা জমা দিয়ে রাজ্যের বহু অযোগ্যরা অর্থের বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন। তারা যোগ্য পরীক্ষার্থী হয়েও নিয়োগ পাচ্ছেন না। তাদের জীবন থেকে আট বছর চলে গিয়েছে। ধৈর্যচ্যূতি ঘটছে। ফলে বাধ্য হয়েই এবার পথে নেমে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন তারা। আন্দোলন রোধে পুলিশ বলপ্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ করেন চাকরিপ্রার্থীরা।

তাদের দাবি, এদিন তারা যেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ঢিলছোড়া দূরত্বে। অথচ ৮ বছরে আজও তাদের সঙ্গে দেখা করেননি মমতা, যে প্রতিশ্রুতি মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছিলেন তা তিনি রাখতে পারেননি। এবং তাদেরকে দ্রুত নিয়োগ করতেই হবে।

বিক্ষোভের জেরে দক্ষিণ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র হাজরামোড় স্তব্ধ হয়ে যায়। যানজটে আটকে পড়ের পরিবহন যাত্রীরা। পুলিশ-বিক্ষোভকারীদের ধুন্ধুমার ধ্বস্তাধ্বস্তিতে প্রায় একঘণ্টা অচল হয়ে যায় ব্যস্তনগরী, কলকাতা। পুলিশ প্রায় সব বিক্ষোভকারীকে সরিয়ে দেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে মুখ্যমন্ত্রী বাড়ি লাগোয়া কালীঘাট-সহ দক্ষিণ কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ সব মোড়ে বাহিনীর সদস্য বাড়িয়েছে পুলিশ।

নিয়োগের দাবিতে, প্রায়ই পথে নেমে আন্দোলন করছেন প্রাথমিক, উচ্চপ্রাথমিক, এসএসসির চাকরিপ্রার্থীরা। কখনও সল্টলেক, কখনও এসপ্ল্যানেড, কখনও রবীন্দ্রসদন সংলগ্ন এক্সাইড মোড়, ক্যামাক স্ট্রিটে দেখিয়েছেন।

বুধবার হঠাৎই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি লাগোয়া হাজরা, কালীঘাট চত্বরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। প্রতিবারই পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের লুকোচুরি চলে। এ দিনও দুপুরে তার অন্যথা হয়নি।

জানা গিয়েছে, পলিশের কাছে আগাম খবর ছিল বিক্ষোভের। ঊর্ধ্বতন কর্তারা জানতে পারেন গোপনে দলবেঁধে মেট্রো করে আসছে বিক্ষোভকারীরা। সেইমতো কালীঘাট মেট্রো স্টেশনের ১ নং গেটে পুলিশের বাড়তি বাহিনী মোতায়েন ছিল। কিন্তু, বিক্ষোভকারীরা সেই খবর পেয়ে যান। তারা মেট্রোর বাকী ৩টে গেট দিয়ে বের হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি লাগোয়া হাজরা মোড়ের দিকে ছুটতে শুরু করে। হঠাৎ এ পরিস্থিতিতে হকচকিয়ে যায় পুলিশ কর্তরা। ততক্ষণে রাস্তায় বসে, শুয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। পুলিশ তুলতে এলে উত্তেজনা ছড়ায়। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রনে আনে।  

দক্ষিণ কলকাতায় যখন এ পরিস্থিতি তখন মধ্য কলকাতার মাতঙ্গিণি হাজারর মুর্তির সামনে, ঝালমুড়ি বিক্রি করে, চপভেজে প্রতিকী বিক্ষোভ দেখান গ্রুপ-ডি চাকরিপ্রত্যাশীরা।  

প্রসঙ্গত, গতকালই (১৫ নভেম্বর) রাজ্যের বেলপাহাড়ি এলাকায় অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চপ ভেজে বিক্রি করেন। যা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। চাকরিপ্রত্যাশীদের কথায়, রাজ্যটাকে যখন চপশিল্পে পরিণত করতে চায় তাহলে উচ্চশিক্ষার কি মূল্য আছে?

অমল সরকার বলেন, আজকে আমাদের প্রতীকি প্রতিবাদ চলছে। রাজ্যপালের কাছেও ডেপুটশেন দিতে যাবো।  ২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের গ্রুপ-ডি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমরা পাশ করেছি। কিন্তু নিয়োগ পায়নি। রাতের অন্ধকারে ভুতুড়েভাবে কিছু নিয়োগ হয়েছে। তাদের মেধা তালিকায় নাম নেই। রাস্তায় পেটের দায় প্রতীকি আন্দোলোন করছি। যদি দিদি আমাদের দিকে দয়া করে তাকান, চাকরি দেন তাহলে মা-বাবার মুখে অন্ন তুলে দিতে পারবো।

এদিন তাদের সঙ্গে রাজ্য কংগ্রেসও শামিল হয়েছিল। এক নেতা বলেন, পশ্চিমবেঙ্গের গ্রপ-ডি-র দফতর সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত। সেই দফতরে দুর্নীতি হয়েছে। ৫,৪২২ জনের ওয়েটিং লিস্টে নাম আছে। আমাদের দাবি, আপনি (মমতা) এই দফতরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, সেখানে এই দুর্নীতি। অবিলম্বে তদন্ত করে বিনয়ের সঙ্গে বলছি এদের চাকরিটা দিন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, ১৫ নভেম্বর, ২০২২
ভিএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।