সায়েন্স ফিকশন সিনেমার সিরিজ ট্রান্সফরমারসের ভক্ত কারা? যদি আপনি এর ভক্ত হয়ে থাকেন, আর রাস্তায় কিংবা আকাশে গাড়ি বা বিমানের রূপ ধারণ করা কোনো রোবটকে চলতে দেখেন, তবে কতটা খুশি হবেন?
চীনা বিজ্ঞানীরা সম্ভবত আপনার খুশির শুরুটা করে ফেলেছেন। তবে আপাতত খুশি থাকতে হবে মাত্র ৯ সেন্টিমিটার আকারের ট্রান্সফরমারস রোবট নিয়েই।
আসল খবর হলো, চীনের একটি গবেষক দল বিশ্বের সবচেয়ে ছোট, হালকা এবং আকৃতি বদলাতে সক্ষম এক ধরনের মাইক্রোরোবট তৈরি করেছে। এই রোবট যেকোনো আকার ধারণে সক্ষম। এরা মাটিতে যেমন চলতে পারে, তেমনি আকাশেও উড়তে পারে।
রোবটটি একাধিক উপাদান নিয়ে তৈরি, যার মধ্যে রয়েছে অ্যাকচুয়েটর, রোটর, মোটর, কন্ট্রোল মডিউল এবং একটি লিথিয়াম ব্যাটারি।
গবেষক দলের নেতৃত্ব দেওয়া সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্টেট কি ল্যাবরেটরির ফ্লেক্সিবল ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজির অধ্যাপক ঝাং ইহুই গ্লোবাল টাইমসকে এ কথা জানান।
সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের মতে, ৯ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য এবং ২৫ গ্রাম ওজনের এই রোবট মাটিতে প্রতি সেকেন্ডে ১ দশমিক ৬ মিটার পর্যন্ত ছুটতে পারে।
গবেষক দলটি সম্প্রতি একটি পাতলা ফিল্ম আকারের ছোট অ্যাকচুয়েটর তৈরি করে, যা মাইক্রোরোবটকে তাদের আকার বদলাতে এবং নির্দিষ্ট আকৃতিতে স্থির থাকতে সাহায্য করে। আর এখানেই ট্রান্সফরমারস মুভির রোবটগুলোর সঙ্গে এই মাইক্রোরোবটের মিল।
অ্যাকচুয়েটর এমন এক ডিভাইস, যার আকার পরিবর্তন করার ক্ষমতা রয়েছে। এটি মাইক্রোরোবটের হৃৎপিণ্ড হিসেবে কাজ করে। এর সঙ্গে বিজ্ঞানীরা এমন এক নকশা তৈরি করেন, যা লেগো খেলনার মূলনীতির সঙ্গে মেলে। এভাবেই তারা এই আকার বদলাতে সক্ষম মাইক্রোরোবট তৈরি করেন।
অধ্যাপক ঝাং বলেন, রোবটটি যখন আকাশ থেকে মাটিতে নামে, তখন এর রোটরগুলো চাকায় রূপান্তরিত হয়ে যায়। অ্যাকচুয়েটরই এটি সম্ভব করে তোলে।
গবেষকরা বলেন, যদি রোবটগুলো হাঁটতে, দৌড়াতে, লাফাতে, উড়তে, চড়তে এবং যেকোনো আকারে স্থির থাকতে পারে, তাহলে সেগুলোর ব্যবহার আরও বিস্তৃত হবে।
তবে এখন পাঁচ সেন্টিমিটারেরও ছোট অ্যাকচুয়েটর দিয়ে বারবার আকার বদল এবং নতুন আকার ধারণ দুটোই করতে হচ্ছে। এতে রোবটগুলোকে ছোট আকারে তৈরি করা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কী কাজে লাগবে এমন রোবট?
অধ্যাপক ঝাং বলেন, ভবিষ্যতে যন্ত্রপাতির ত্রুটি নির্ণয় এবং রক্ষণাবেক্ষণের মতো কাজে এসব রোবট ব্যবহার করা যেতে পারে। ভূতাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান এবং জটিল ও বিপজ্জনক পরিবেশে মানুষের বিকল্প হিসেবে এমন রোবট কাজে আসবে।
এই ছোট অ্যাকচুয়েটরটি বায়োইলেকট্রনিক যন্ত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে শরীরের ভেতরে স্থাপনযোগ্য চিকিৎসাযন্ত্র তৈরি করা সম্ভব হবে, যা প্রয়োজনে খোলা বা ভাঁজ করা যাবে। পাশাপাশি এটি ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) ও অগমেন্টেড রিয়েলিটির (এআর) জন্য স্পর্শ অনুভূতির প্রযুক্তি তৈরিতেও ব্যবহার করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
নিউজ ডেস্ক