ঢাকা: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলন দমাতে বেশ কিছুদিন ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করে রাখে সরকার। বাংলাদেশে আর কখনো যেন কোনো সরকার ইচ্ছামতো ইন্টারনেট বন্ধ করতে না পারে সে লক্ষ্যে টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বোর্ডরুমে ‘বাংলাদেশে স্টারলিংক পরিষেবা চালু’ উপলক্ষে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, আমরা কখনোই কোনো অবস্থায় ইন্টারনেট বন্ধ করবো না এবং ভবিষ্যতেও যেন কেউ তা করতে না পারে সেজন্য টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনের কাজ চলছে। আইনটি কিছুটা জটিল হওয়ায় সময় লাগছে। তবে আগামী এক বছরের মধ্যে কাঠামোগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।
স্টারলিংক প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, স্টারলিংক বাংলাদেশে তাদের পছন্দমতো ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ দেবে এবং সেবা দেবে তাদের মাধ্যমেই। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার—ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং আইন দিয়ে রক্ষা করা হবে।
বাংলাদেশে স্টারলিংকের প্যাকেজ মূল্য বেশি হচ্ছে কিনা এবং কোনো কাস্টমাইজড অফারের পরিকল্পনা আছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাণিজ্যিক বিষয়গুলো কোম্পানির নিজস্ব। তবে আমরা দেখছি, শ্রীলঙ্কার তুলনায় আমাদের মূল্য অনেক কম। ভবিষ্যতে উপকূলীয়, দ্বীপ ও দুর্গম এলাকার জন্য যদি নির্দিষ্ট ব্যবহারক্ষেত্র (ইউজ কেস) তৈরি হয়, তাহলে মূল্যেও নমনীয়তা (ফ্লেক্সিবিলিটি) আসবে।
কবে নাগাদ স্টারলিংক পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করবে—জানতে চাইলে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, স্টারলিংকের প্রয়োজনীয় সব অনুমোদন এবং লজিস্টিক কার্যক্রম এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। সেবা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ও ব্যবহারক্ষেত্র বাড়বে। আমাদের মূল লক্ষ্য—মানুষকে হাই কোয়ালিটি এবং হাই স্পিড ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া।
তিনি আরও বলেন, মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের পাশাপাশি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এখন নতুন প্রজন্মের একটি প্রযুক্তি। এতে প্রতিযোগিতা থাকবে, তবে তা হবে বাজারভিত্তিক। সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া হবে, কেউ কাউকে প্রতিস্থাপন করবে না।
এর আগে অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক–এর বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর ঘোষণা দেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও উদ্যোগে বাংলাদেশে স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে সেবা দিতে শুরু করেছে। এটি শুধু একটি প্রযুক্তিগত অর্জন নয়, বরং দেশের ডিজিটাল কাঠামোর জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
মিট দ্য প্রেসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা স্টারলিংকের স্টারলিংকের ব্যবসা পরিচালনা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার, আন্তর্জাতিক কৌশল ও সরকারি সম্পর্ক পরিচালক রিচার্ড গ্রিফিথস, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এসসি/আরবি