ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব মোবাইল অপারেটরদের উদ্দেশে বলেছেন, ইন্টারনেটের দাম কমানোর বাস্তবিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরপরও মোবাইল অপারেটরগুলো সহযোগিতা না করলে তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক যে নেগোসিয়েশন আছে সেগুলো আলোচনার টেবিলে আনবো।
বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. জহিরুল ইসলাম, বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো এমদাদ উল বারী।
বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরও ইন্টারনেটের দাম কমানোর লক্ষণ আমরা দেখছি না সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষ সহকারী বলেন, ইন্টারনেটের দাম আমরা প্রথমে গেটওয়ে থেকে শুরু করেছিলাম। সাবমেরিন ক্যাবলের দাম ১০ শতাংশ কমিয়েছে। এরপরে তারা বাল্কে আরও ১০ শতাংশ কমিয়েছে। মোট ২০ শতাংশ দাম কমিয়েছে। আমরা পাইকারিতে ২০ শতাংশ এবং খুচরায় ১০ শতাংশ দাম কমিয়েছি। সেহেতু আমরা ডিমান্ড করেছি আইএসপি ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট পর্যায়ে দাম কমানোর জন্য। তখন তাদের কিছু চাওয়া-পাওয়া ছিল। সেক্ষেত্রে আমরা ডিডব্লিউডিএম ফেসিলিটি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি, ডার্ক ফাইবারে তাদের এক্সেস দিয়েছি। মোবাইল কোম্পানিগুলো বলেছিল ডিডব্লিউডিএম সুবিধা না থাকার কারণে ট্রান্সমিশন খরচ ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল।
‘তারপর আমরা আইএসপিগুলোর সঙ্গে বসেছি। তাদের বলেছি ইন্টারনেট কনটেন্ট এবং ক্যাশের র্যাশিও অত্যন্ত বাজে। ক্যাশের আন্তর্জাতিক র্যাশিও ৮.১-১০.১ এর মধ্যে সীমিত রাখা হয়। কিন্তু আমরা এখানে দেখেছি ২০ ভাগ ক্যাশ, একভাগ ইন্টারনেট কনটেন্ট দেওয়া হয়। তারা রাজি হয়েছেন যে, বিদ্যমান প্রাইজের মধ্যে এটা (ইন্টারনেট) দ্বিগুণ করবেন। আমরা তাদের কাছে জবাবদিহি করেছি যে, আপনারা প্রতিজ্ঞা করার পরেও দামটা কেন কমলো না? তারা বলেছেন যে, বিটিআরসির যে বুক প্রাইজ সে অনুযায়ী তাদের ভ্যাট দিতে হয়। বিটিআরসির বুক প্রাইজ কমানোর জন্য বিটিআরসি থেকে ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এটা মতামত দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখানে একটা শর্ত আছে যে, আগামী অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে বাস্তবায়ন করতে হবে। অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে বুক ভ্যালু থেকে আইএসপি এবং আইআইজি পর্যায়ের ২০ শতাংশ দাম কমানোর বিটিআরসির উদ্যোগ জুলাইয়ের প্রথম থেকে বাস্তবায়ন হবে। আমরা আশা করি সেমতে বাজারে দামটা কমে আসবে। ’
বিশেষ সহকারী আরও বলেন, এরপরের পর্যায়ে আমরা এনটিটিএনদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করেছি, এ মুহূর্তে তিনটি এনটিটিএন দাম কমিয়েছে। বাহন, ফাইবার এট হোম এবং সামিট। কেউ কেউ বলেছে গেটওয়ে পর্যায়ে ১০ শতাংশ কমাবে, কেউ কেউ বলেছে ট্রান্সমিশন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ কমাবে, কেউ কেউ ওভার অল ২০ শতাংশ কমাবে। আমরা ১৫ শতাংশ দাম কমানোর একটা প্রতিজ্ঞা পেয়েছি। এটার আলোকে এনটিটিএন প্রাইজের যে বুক ভ্যালু সেটাও কমানোর চেষ্টা করবো। যাতে করে এটার সুফল মানুষের কাছে চলে আসে।
‘আমাদের দাবি ছিল, আমরা যেহেতু গেটওয়ে পর্যায়ে দাম কমিয়েছি, আইআইজি এবং ট্রান্সমিশন পর্যায়ে দাম কমিয়েছি। আমরা আশা করি ইন্টারনেটের দাম ব্যবহারকারী পর্যায়ে কমবে। আমরা এটা বলেছি, সেটা এখনও অনড় আছি। ’
তিনি বলেন, আমরা মোবাইল কোম্পানিগুলোকে আহ্বান জানাতে চাই, দাম কমানোর পর্যাপ্ত রেগুলেটরি এবং বাস্তবিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্টেক হোল্ডাররা অংশগ্রহণ করেছে, যারা করেনি তাদের অংশগ্রহণ করানো উচিত। আর যদি তারা আমাদের কো-অপারেট না করেন, তাহলে তাদের সঙ্গে আমাদের যে দ্বিপাক্ষিক নেগোসিয়েশন আছে সেগুলো আমরা আলোচনার টেবিলে আনবো। সেখানে আনসেটেলড কিছু ডিউ (বকেয়া) আছে, সে আলোচনাগুলো আলোচনার টেবিলে চলে আসবে। এবং স্ট্রংলি পারফরমেন্স কেপিআই যেগুলো আছে সেগুলো আলোচনার টেবিলে চলে আসবে। কিন্তু আমরা চাই, আমাদের যে স্টেক হোল্ডার তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এমন একটা অবস্থানে পৌঁছাতে চাই, যেখানে আমাদের মূল গ্রাহক- আমাদের নাগরিক। নাগরিকদের কম দামে মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে চাই। সে প্রশ্নে আমরা অনড় থাকবো। আমরা যৌক্তিক প্রশ্নে যেকোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছি। আর অযোৗক্তিক প্রশ্নে যেকোনো ব্যাপারে আমরা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আছি।
মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চাই মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট না করে প্রাইজের ব্যাপারটা মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিতে। ডিমান্ড ডিটারমাইন করবে প্রাইজ কি রকম হবে। আর বিভিন্ন প্যাকেজের তারতম্য বা একেক রকমের ডিজাইন, এটাকে ডিফারেন্স না বলে ডাইভারসিটি বলি। আমরা চাই মার্কেটটা অনেক ডাইভারসিফাইড হোক। একটা সময় বিটিআরসি হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, প্যাকেজের সংখ্যা লিমিট করে দেওয়া, এত দিন দিতে পারবে এত দিন দিতে পারবে না। এটা যে গ্রাহকের জন্য করা হয়েছিল আজকে আমাদের ব্যবহারকারী সেরকম না। আজকে আমাদের ব্যবহারকারী অনেক টেকসেভিং, ইয়ং জেনারেশন। তাদের যদি বলা হয় যে, এতগুলো প্যাকেজের মধ্য থেকে কোনটা ভালো এটা বের করতে পারছেন না, তাহলে আমি মনি করি তাদের বৃদ্ধিবৃত্তিকে অস্বীকার করা হয়। কারো যদি অসুবিধা হয় তাহলে পরিবারের ইয়ং যারা আছে তাদের জিজ্ঞাসা বলতে পারেন।
তিনি বলেন, আমরাও চাই এ জায়গাটা ডি-রেগুলেট করতে। বাজার নির্ধারণ করবে যে, কি রকম প্রাইজ হবে এবং কি রকম ডাইভার্সিটি হবে। সেজন্য আমরা ডি-রেগুলেট করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, সরকার কিংবা বিটিআরসির অগ্রাধিকার ইন্টারনেটের দাম কমানো। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু এটা বুঝতে হবে ইন্টারনেটের দাম রাতারাতি কমানো সম্ভব না। এটার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত এবং একটা এজেন্সির ওপর নির্ভর না। পুরো ইন্ডাস্ট্রির ওপর নির্ভর করে। আমরা লাইসেন্সিং এবং ম্যানেজমেন্ট কস্ট কমানোর কাজ করছি। আর যদি স্পেকট্রাম প্রাইজ সরাসরি কমাই তাহলে কমবে কিনা। আমরা এটা নিয়ে স্ট্যাডি করছি। এটা করার পরে আমরা সরকারকে সাজেশন দেব দাম কমানো যায় কিনা।
এমআইএইচ/আরআইএস