জানুয়ারি ১৫, ২০১৩। ঢাকা থেকে নিউইয়র্কে ফিরে যাচ্ছিলাম ছুটি শেষে।
এর মধ্যে শুধু দুবাই এয়ারপোর্টে ১ ঘণ্টা বিরতি। ১৮ ঘণ্টা উড়োজাহাজে কাটানো সব সময়ই একটা কঠিন ব্যাপার ছিল। জানুয়ারি ১৫, ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত আমার কাছে আমিরাত এয়ারলাইন্সের এ ফ্লাইটগুলো ছিল খুবই বিরক্তিকর।
এ সময়ে মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করা যায়না। আর যেকোনো এয়ারক্রাফটের ফ্লাইটে এর কোনোটাই ব্যাবহার করার সুযোগ নেই। এর ওপর যদি হয় ১৮ ঘণ্টার ফ্লাইট, কিছুই বলার বাকি থাকে না। ইমেইল বা ফেসবুক ব্যবহার না করে আজকাল খুব কম মানুষই দিন পার করেন।
তখন বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা। আমিরাতের ফ্লাইটটি ছাড়ার পথে। ফ্লাইট ছাড়ার সময় বরাবরের মত ফ্লাইট ক্যাপ্টেনের কণ্ঠসর ভেসে এল। প্রতিটি ফ্লাইটের মত এখানেও সাবধানতা অবলম্বনের বিষয়গুলো তুলে ধরছিলেন ফ্লাইট ক্যাপ্টেন এবং ক্রুরা।
সব সুবিধাগুলো উল্লেখ করার পর শেষের দিকে বলা হল, আমিরাত এ প্রথম ওয়াইফাই ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করেছে। শুনলাম কিন্তু কানে নিলামা না। ভাবলাম হয়ত ভুল শুনেছি। অবশেষে ফ্লাইটটি টেইক অফ করল এবং ১০ হাজার ফিট ওপরে গিয়ে বিমানের ভেতরের বাতিগুলো আবার জ্বালিয়ে দেওয়া হল। ইন্টারনেটের ব্যাপারটি তখনও আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এক পর্যায়ে ভাবলাম যে একটু ঘেঁটেই দেখি ব্যাপারটা আসলে কি।
সৌভাগ্যবশত ল্যাপটপটি আমার হ্যান্ডব্যাগেই ছিল। ল্যাপটপ বের করে ওয়াইফাইয়ে কানেক্ট করার চেষ্টা করলাম। দেখলাম ‘অন এয়ার’ নামের একটি ওয়াইফাই কানেকশন লিস্টে আছে। এটিতে কানেক্ট করলাম এবং একটি নতুন ইন্টারনেট ব্রাউজার ওপেন করলাম। সঙ্গে এল একটি আমিরাত ওয়েলকাম এবং লগইন পেজ। এখানে সাইনাপ করতে হল এবং সাইনাআপের শেষে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কেনার অপশন থাকলো। দুটি অপশন ছিল।
একটি ছিল ৫০ মেগাবাইট পনেরো ডলারের বিনিময়ে এবং আরেকটি ছিল ১০০ মেগাবাইট। এর দাম ২০ ডলার। আমি ১০০ মেগাবাইটের অপশনটি নিলাম এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পে করলাম। সঙ্গে সঙ্গে ‘কানেক্ট’ করার একটি অপশন এল।
কানেক্টে ক্লিক করে ব্রাউজারটি রিফ্রেশ করলাম। অবশেষে গুগলের হোম পেজটি ওপেন হল। তখনও বিশ্বাস করলাম না যে অন্য কোনো ওয়েবসাইট ব্রাউজ করা যাবে। তবুও ব্রাউজারে (www.facebook.com) টাইপ করলাম।
এবারে ফেসবুকের লগইন পেজ এল। সত্যিই অনেক অবাক হলাম। ফেসবুকে লগইন করে প্রথমবার বিমান থেকে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাস আপডেট করলাম। সত্যিই এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা ছিল।
প্রথমবার উড়োজাহাজে থাকা অবস্থায় নিজেকে সারা দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত মনে হচ্ছিল আর এ প্রথম ১৮ ঘন্টার ফ্লাইটে একঘেয়েমি লাগছিল না। বন্ধুরা ফেসবুক স্ট্যাটাসে কমেন্টস করছিল এবং রীতিমত নিজের ইমেইলের কাজ গুলোও সেরে ফেললাম।
স্কাইপ সফটওয়ারটি দিয়ে নিউইয়র্ক এবং বাংলাদেশে থাকা আপনজনদের মোবাইলে ফোন করে কথাও বললাম। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। এই প্রথম সত্যি মনে হোল যে তথ্যপ্রযুক্তি কল্যাণে বিশ্ব আসলেই অনেক এগিয়ে গেছে। ধন্যবাদ আমিরাত এয়ারলাইন্স।
বাংলাদেশ সময় ১৮৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর
লেখক: চিফ টেকনোলজি অফিসার, সফটওয়্যার ওয়েব টেক ইউএসএ, এলএলসি