বিশ্বে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বাড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।
তবে এ বিপুল বাজারের চাহিদা মেটাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে হুয়াওয়ে এবং জেডটিই। অ্যাপল আর স্যামসাংকে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি করতে চীনের এ দু প্রতিষ্ঠানই এ বছর বাড়তি উদ্যোগ নিয়েছে। সংবাদমাধ্যম সূত্র এ তথ্য দিয়েছে।
এদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ফিক্সডলাইন টেলিফোন নেটওয়ার্ক গ্রাহকদের ইন্টারনেটমুখী করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ ছাড়াও কলরেট দূর্বল হওয়ায় তা ইমার্জিং বাজারের জন্য মোটেও সহজলভ্য এবং ভোক্তাবান্ধব নয়। এ বাজার প্রতিযোগিতায় স্মার্টফোন অনেক বেশি গ্রাহককে ইন্টারনেটবান্ধব করে তুলছে। ইন্টারনেট গ্রাহক বাড়ার সঙ্গে যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোও মজবুত হচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও গতি পাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের পর ইমার্জিং মার্কেটে নাইজেরিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। টুইট এবং অনলাইন ভিডিও চাহিদায় এ ইন্টারনেটে বাজার তৈরি হচ্ছে।
তবে স্মার্টফোনের বাজারেও একচ্ছত্র কোনো অধিপত্য নেই। দামের কারণে এ গ্রাহক সংখ্যা যতটা গতিতে বাড়তে পারত তা এগোচ্ছে না। অর্থাৎ এখনও উন্নয়নশীল দেশের গ্রাহকেরা স্মার্টফোন আগ্রহী হলেও তা থেকে রীতিমত বঞ্চিত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ভারতি এয়ারটেলের ভারতের প্রধান নির্বাহী মনোজ কোহেলি বলেন, সাধারণ ফোন ছেড়ে নতুন গ্রাহকেরা সরাসরি স্মার্টফোনের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু স্মার্টফোনের দামের আধিক্যের কারণে এ বাজার আরও সুসম্প্রসারিত হওয়ার পথে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
এ মুহূর্তে প্রযুক্তিপ্রেমীরা মোবাইলের হাত ধরেই সরাসরি ইন্টারনেটের বিশ্বে প্রবেশ করছে। এ বিষয়ে বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কনগ্রেসে তথ্যচিত্র তুলে ধরেন মনোজ কোহেলি।
এরই মধ্যে স্মার্টফোনের দাম কমিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে বিশ্বের শীর্ষ নির্মাতারা। তবে দামের আধিক্যেয় এগিয়ে আছে অ্যাপল আর স্যামসাং। এ মুহূর্তে দামের তালিকায় একেবারে ওপরে আছে আইফোন এবং গ্যালাক্সি এসথ্রি স্মার্টফোন।
এদিকে চীনের আরেক শীর্ষ নির্মাতা লেনোভো পিসি আর ল্যাপটপ নির্মাতা হিসেবে পরিচিত হলেও এবারে দেখা মিলবে স্মার্টফোনের তালিকায়। এ মুহূর্তে বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হচ্ছে লেনোভো। আর শুধু চীনের বাজারে অবস্থান করেই তারা এ তালিকায় চলে এসেছেন।
তবে লেনোভো স্মার্টফোন এখন চীনের সীমানা ছাড়িয়ে ইন্দোনেশিয়া, ভারত এবং রাশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে। মধ্যবিত্ত গ্রাহকের চাহিদা আর সামর্থ্যকে আমলে নিয়েই এ উৎপাদন পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
মধ্যবিত্তের জন্য চীনের দু বিখ্যাত নির্মাতা হুয়াওয়ে এবং জেডটিই অ্যাপল এবং স্যামসাংয়ের তুলনায় টাচস্ক্রিন, দ্রুত গতির প্রসেসর এবং ভালো মানের ক্যামেরাযুক্ত ১০০ ডলারের স্মার্টফোন তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ নিয়ে উন্নয়ন কাজও চলছে অবিরাম।
তবে ইমার্জিং এশিয়ায় স্মার্টফোনের ব্যাপক বাজার চাহিদা তৈরি হচ্ছে। ২০১২ সালের হিসাবে আফ্রিকার মাত্র ৪ ভাগ গ্রাহক স্মার্টফোন ব্যবহার করে। তবে এ পরিসংখ্যান এশীয় অঞ্চলে এসে ১১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। তবে স্মার্টফোনের ভোক্তার হিসাবে ৪৭ ভাগ দখলে নিয়েছে উত্তর আমেরিকা।
প্রসঙ্গত, ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যেই ১৬০ কোটি নতুন স্মার্টফোন গ্রাহক তৈরি হবে। আর এ বিপুল সংখ্যাক গ্রাহকের ৬১ ভাগই এশীয় অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মোবাইল ফোনের গ্রাহক বৃদ্ধিতে আফ্রিকা ৬.৫ ভাগ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে। টেলিকম গবেষণা উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান লেনোভো এ তথ্য দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে লেনোভোর প্রধান নির্বাহী ইয়াঙ্গ ইয়াংকিং বলেন, স্মার্টফোনের বাজারে কঠিন দামের প্রতিযোগিতা থাকার পরও শুধু চীনে ১৩০ কোটি স্মার্টফোন গ্রাহক তৈরি হয়েছে। ২০১২ সালে পুরো বিশ্বের মোবাইল ফোন বিক্রির ৭০ ভাগই ছিল স্মার্টফোন। এ চাহিদা এশিয়া এবং রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাড়ছে।
চীনের লেনোভো স্মার্টফোন ব্যবসায়ীকভাবে সফল। আর এ ধারা এশিয়ার বাজারেও ছড়িয়ে যাবে। ফলে দামের তুলনায় এশিয়ার বাজারে লেনোভো স্মার্টফোন শক্ত বাজার চাহিদা তৈরি করবে।
বিশ্বের অন্য বাজারে অপারেটদের সঙ্গে ব্যবসা চুক্তির সুবাদে স্মার্টফোনের দাম অনেকাংশে কমিয়ে এনে লোভনীয় দামে বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু এশিয়ার বাজারে শুধু পণ্যের ওপরই এ দাম পুরোপুরি নির্ভর করে। ফলে এ বাজারে নতুন চুক্তিতে স্মার্টফোনের দাম কমিয়ে আনার পরিকল্পনাও করছে শীর্ষ নির্মাতারা।
বাংলাদেশ সময় ১৯২১ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৩