ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

পাঠকের সুখ অনলাইনে

রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৩
পাঠকের সুখ অনলাইনে

ঢাকা: বিশ্ব সংবাদপত্র জগতের নতুন ট্রেন্ড অনলাইন নিউজ সাইট। নতুন হলেও এর দমকা হাওয়ার বেগ এত শক্তিশালী যে- ওয়াশিংটন পোস্ট, টাইমস কিংবা নিউইয়র্ক টাইমসের মতো বিশ্বের বাঘা বাঘা পত্রিকাগুলোও এখন ভাবতে বাধ্য হচ্ছে, তারা তাদের কাগজে ছাপা হওয়া সংখ্যা বন্ধ করে দেবে কি না।



ইন্টারনেটের এই অবাধ সাম্রাজ্যে, সংবাদমাধ্যম জগতে যে আজ শুধু অনলাইনেরই জয়জয়কার, তা বলাই বাহুল্য। অনেকেই হয়তো দ্বিমত পোষণ করবেন। তাদের মতামতের প্রতি শ্র্রদ্ধা রেখেই পাঠকদের জ্ঞাতার্থে এখানে কিছু তথ্য তুলে ধরা হবে। আগে এগুলো পড়ে ভেবে দেখুন, তারপর না হয় নিজেই বিবেচনা করে দেখবেন বিষয়টি সত্যি কি না।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, সংবাদপত্র পাঠকরা খবর সংগ্রহের জন্য প্রথমেই ঢুঁ মারেন অনলাইনে, এরপর রেডিওতে, তারপর টেলিভিশনে এবং সবার শেষে সংবাদপত্রে।

বাংলাদেশে সংবাদপত্রে অনলাইনের প্রচলন ১৯৯৭ সালে। তবে পৃথিবীতে অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের ইতিহাস আরও পুরনো। জানা যায় ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম অনলাইন পত্রিকার জন্ম হয়েছিলো। পত্রিকার নাম ছিলো নিউজ রিপোর্ট। সময়ের পরিক্রমায় তথ্য প্রযুক্তিতে পৃথিবী যত বেশি উন্নত হয়েছে, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা যত বেড়েছে, অনলাইন পত্রিকার গ্রহণযোগ্যতাও তত বেড়েছে।

এমনকি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে জগতের অন্যতম সেরা ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকেও ইতিমধ্যেই তার অর্ধেক জনবলকে তাদের অনলাইন সংস্করণে নিযুক্ত করতে হয়েছে।

আমাদের দেশেও সংবাদপত্র ছাপার খরচ পত্রিকার খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি। তার ওপর আবার বর্তমানে বাজেটে নিউজপ্রিন্টের ওপর থেকে সরকারি শুল্ক রেয়াত প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।

যদি সত্যিই শুল্ক রেয়াত প্রত্যাহার করা হয় তবে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে পত্রিকা ছাপার খরচে। তখন বর্তমান কলেবরে পত্রিকা ছাপাতে শুধু প্রথম আলোরই বছরে ৪৮ কোটি টাকা বেশি খরচ হবে ৪৮।

অর্থাৎ একদিকে দেশে অনলাইন পত্রিকার প্রধান বাহন ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা বাড়ছে অপর দিকে কাগুজে পত্রিকা ছাপানোর খরচও বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে পাঠকের জন্য সহজলভ্য হবে কোনটা?

অনলাইন একজন পাঠককে দিচ্ছে একের ভেতর অনেক কিছু। একজন পাঠক খুব সহজেই অনলাইন পত্রিকায় কোনো ঘটনা সরাসরি শুনতে বা ভিডিওতে দেখতে পাচ্ছেন। যেতে পারছেন ওই ঘটনার ব্যাকগ্রাউন্ডে।

এছাড়া পাঠকরা তাদের সুবিধামত সময়েই সাইটগুলোতে ভিজিট করতে পারছেন। শুধু ইন্টারনেটে গিয়ে প্রয়োজনীয় সাইটে ক্লিক করলেই একজন পেয়ে যাবেন অতীতের সব প্রয়োজনীয় তথ্যের লিংক। এটা কাগজের পত্রিকা বা টেলিভিশনের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়, যদি না তাদের অনলাইন ভার্সন থাকে।

তার ওপর অনলাইনেই কেবল একজন পাঠকের পক্ষে সম্ভব কোনো সংবাদের ব্যাপারে নিজের প্রতিক্রিয়া সঙ্গে সঙ্গে জানানো, কাগজের পত্রিকায় যা সহজসাধ্য নয়।

আবার রেডিও ও টেলিভিশন তাদের নিজেদের শিডিউল অনুযায়ী সংবাদ পরিবেশন করে। পাঠককে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে হয় ওই চ্যানেলের পছন্দ অনুযায়ী।

অথচ অনলাইনে আপনি পাচ্ছেন আপনার সুবিধামতো সময়ে যে কোনো কিছু উপভোগ করার সুযোগ। তাই ‘ওয়ান টু ওয়ান’ কিংবা ‘মাল্টি পারসন’ কমিউনিকেশন দ্রুততার সঙ্গে চোখের পলকে সম্ভব একমাত্র অনলাইন সংবাদমাধ্যমেই।

আজকের মুক্ত তথ্য প্রযুক্তি আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে উদ্ভব ঘটেছে এক নতুন ধরনের সাংবাদিকতার। যাকে আমরা বলি সিটিজেন জার্নালিজম। অর্থাৎ ঘটনা সংঘটনের সময় উপস্থিত যে কেউই আজ সাংবাদিকের ভূমিকা পালন করতে পারেন। যদি তার কাছে থাকে একটা স্মার্ট ফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ।

তাই তো আজ মুহূর্তেই সারা পৃথিবীতে যে কোনো ঘটনা সবাক সচিত্র ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক, টুইটার ও অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়া মারফতে।

বিজ্ঞাপন দাতাদের জন্যও অনলাইন পত্রিকাগুলো খুবই লাভজনক। কারণ খুব সস্তাতেই অনলাইনে নিজেদের বিজ্ঞাপন দিতে পারেন তারা। টেলিভিশন কিংবা কাগজের সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের খরচ কিন্তু অনেক বেশি।

এসব বাস্তবতা বিচার করে পশ্চিমা দেশগুলোর মত আমাদের দেশের বড় মিডিয়া হাউজগুলোও আজ নড়ে চড়ে বসেছে, প্রস্তুতি নিচ্ছে এ খাতে আরও বিনিয়োগ করার। এ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোকে (টেলিভিশন, রেডিও ও সংবাদপত্র) আশ্রয় নিতে হচ্ছে অনলাইনের আড়ালে।

তাই বলা যেতে পারে, আমাদের দেশেও অনলাইনের জয়জয়কার শুরু হতে যাচ্ছে। এর অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না। এমনকি আমাদের দেশেও মূলধারার সংবাদমাধ্যম হিসেবে মানুষ অনলাইনকেই বুঝবে, সে দিনের হয়তো আর বেশি দেরি নেই।

একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা। আমাদের বিশাল সংখ্যক বাংলাদেশি কিন্তু প্রবাসী। সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন তারা। দেশপ্রেমিক এই লোকগুলোর মন সব সময়ই কাঁদে দেশের জন্য, দেশের খবরের জন্য। আর প্রাণপ্রিয় দেশের খবর পেতে তাদের ভরসা কিন্তু অনলাইন সংবাদমাধ্যমই।

তবে বাংলাদেশে অনলাইন নিউজপোর্টাল বিকাশের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে ব্যান্ডউইথের বাধা, অর্থাৎ দুর্বল ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ ব্যবস্থা।

অবশ্য চিন্তার কিছু নেই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তোড়জোরে মনে হচ্ছে ২০১৪ সালের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তখন আর অনলাইনে কোনো নিউজ পড়তে বাফারিংয়ের সমস্যা পড়তে হবে না কাউকেই।

আর একটা ব্যাপার, সেটা হলো জরিপ অনুযায়ী আগামী ২০১৪ সালের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ ফোন ইউজার হবেন স্মার্টফোন ইউজার। আর তাদের স্মার্ট ফোনে যদি থাকে সস্তায় দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ, তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়াচ্ছে?

অর্থাৎ দেশের ওই ৮০ শতাংশ মোবাইল ফোন ইউজারই পত্রিকা না কিনেও দেশের যে কোনো স্থান থেকে সংবাদ পাঠের জন্য ঢুঁ মারতে পারবেন অনলাইন পত্রিকায়। সেটিও শুধু একটি সাইটে নয়, অসংখ্য নিউজসাইটে।

এসব কারণেই আজ অনলাইনকে বলা হচ্ছে ভবিষ্যতের মিডিয়া বা ফিউচার মিডিয়া। সে ভবিষ্যত যে আর দূরে নয় তা বলাই বাহুল্য।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৩
জেডএম/ জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।