অনলাইনে জব পোর্টাল চালু হলে তা অনেকের জন্য উপযুক্ত চাকরি আর চাকরিদাতাদের জন্য মানানসই জনবল পাওয়ার নতুন ধারণার জন্ম দেয়। অনলাইন জব পোর্টালের ফলে পেশাজীবিরা এখন অনেকগুলো বিকল্পের মধ্য থেকে পছন্দের চাকরি খুঁজে নেওয়ার সুযোগ পায়।
তবে প্রথম জব পোর্টাল চালু হবার অনেকদিন পার হয়ে যাওয়ার পর সবার প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। এ পোর্টালগুলো অনেক সুযোগ এনে দিলেও ইন্টারভিউয়ের আগে দু পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ করার কোনো সুযোগ থাকে না। ফলে চাকরিদাতারা সবসময় সবচেয়ে ভালো কর্মীদের নিয়োগ করার সুযোগ পায় না।
দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার দক্ষতা অনুযায়ী চাকরির জন্য ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করলেও ঠিক পছন্দসই কোনো বিকল্প খুজে পাইনি। চাকরি পাওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন চাকরিটি তার জন্য মানানসই নয়।
এ প্রসঙ্গে টেনে শারফুদ্দিন বলেন, এখন যদিও আমি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি। তবে এ কাজের জন্য আমিই সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি কি না সে বিষয়ে আমার সুস্পষ্ট ধারণা নেই। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের ধারণাও প্রায় এমনই।
অপরদিকে অনেক চাকরিদাতার কাছে শত শত সিভি জমা পড়লেও তাদের প্রয়োজন অনুসারে কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। তাদেরই একজন হলেন একটি বেসরকারি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সামি রহমান। তিনি বলেন, আমার কাছে শত শত আবেদন জমা পড়ে আছে। দেশের সবচেয়ে বড় জব পোর্টালে টানা দেড় মাস বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরও আমার পছন্দসই কাউকে খুঁজে পাইনি।
এদিকে শারফুদ্দিন জানান, ইন্টারভিউয়ের আগে যদি দু পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা যেত তাহলে বিষয়টি সবার জন্যই সুবিধাজনক হতো। ফলে দু পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হতো আর পুরো প্রক্রিয়াই বেশ সহজ হতো।
শারফুদ্দিনের মতো অনেকেই ইন্টারনেটে সঠিক চাকরির সন্ধান করেন। এমনই একজন ফারাহ মেহনাজ বলেন, আমি ইচ্ছা ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে কাজ করার। কিন্তু আমার প্রশিক্ষণের সঙ্গে মিল আছে এ রকম কোনো চাকরি এখনও খুঁজে পাইনি। তবে এখন খুঁজে যাচ্ছি।
আদর্শ চাকরির জন্য আবেদনের পর জবাবের অপেক্ষায় প্রায়ই হতাশ হন মৌসুমী খান এবং জুবিন ফয়সাল। জুবিন বলেন, আমার পছন্দের চাকরিগুলোতে আবেদন করার পর আমার কোনো ধারণাই থাকে না যে তারা আমার আবেদন আদৌ দেখছেন কি না। একই কথা বলেন ইফতেখার। এক্ষেত্রে জব পোর্টালগুলোর কোনো পরিবর্তন না হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাকরির খোঁজ বিফলে যাবে।
ইউনিগ্লোরি গ্রুপের জনপ্রশাসন (এইচআর) প্রধান হাশেম আবদুল্লাহ বলেন, বাজারে প্রচুর প্রতিভাবান পেশাজীবী আছে। তবে তারা সঠিক জায়গায় কাজ করছেন না। তিনি বলেন, একটি চাকরিতে কয়েক বছর থাকার পর এমনও হতে পারে যে তাদের হয়তো অন্য কোনো জায়গায় চাকরি করলে ভালো হতো।
কিন্তু নতুন চাকরির খোঁজ কোথায় পাওয়া যাবে এ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। যোগ্য ব্যক্তি যেন যথাযোগ্য চাকরি পায়, এ জন্য অনলাইন জব পোর্টালগুলোকে ধারা পরিবর্তন করতে হবে।
তবে এখনও অবধি এ রকম কোনো উদাহরণ দেখা যায়নি। তিনি জানান, দক্ষতা বা জ্ঞানের সঙ্গে মিল থাকবে এমন সুযোগ সৃষ্টিকারী অনলাইন ফোরাম এখন দেশে গড়ে ওঠেনি। লিঙ্কডইন থাকলে তা কতটুকু সাহায্য করতে পারছে, এ ব্যাপারেও আমার সুস্পষ্ট কোনো ধারণা নেই।
এক্ষেত্রে তিনি একটি সমাধানের কথা বলেছেন। এ সমাধান শারফুদ্দিন ও শামীমার মতো অসন্তুষ্ট পেশাজীবীদের সাহায্য করতে পারে। তিনি বলেন, সব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাতের পেশাজীবীদের বাজারে উন্মুক্ত সুযোগগুলো সম্পর্কে ধারণা দেওয়া উচিত। ফলে চাকরি সন্ধানকারীদের একটি ধারনা হতে পারে কোথায় তারা আবেদন করতে পারবেন।
হাশেম আবদুল্লাহের মতে কয়েকটি বিষয় চাকরি সন্ধানকারীদের মাথায় রাখতে হবে। চাকরি খোঁজার সময়, আমি কে? প্রশ্ন না করে প্রশ্ন করতে হবে ‘আমি কি চাই?’। নিজের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলিয়ে চাকরি খোঁজা উচিত। একই ধরনের কভার লেটার বা সিভি সবার কাছে পাঠানো উচিত নয়।
জনপ্রশাসন (এইচআর) বিভাগের কর্মকর্তারা সহজেই তা বুঝে ফেলতে পারবেন। সবচেয়ে যোগ্য চাকরি বাছাই করে সেই প্রতিষ্ঠানের জন্য মানানসই কাভার লেটার ও সিভি পাঠানো উচিত। চাকরির ইন্টারভিউয়ের খোঁজের ব্যাপারে যদি আবেদনের দু সপ্তাহে কোনো খোঁজ পাওয়া না যায়, তাহলে পরের প্রতিষ্ঠানের খোঁজ শুরু করে দেওয়া উচিত।
আধুনিক এ সময়ে যোগাযোগের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম ইন্টারনেট। এখন দেখার বিষয় ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞেরা এমন কোনো সমাধান বের করতে পারেন কি না-যা ভবিষ্যতের চাকরির বাজারের অতীতের সব ধারণাকেই পেছনে ফেলে নতুন চাকরি প্রত্যাশী এবং চাকরি দাতাদের মধ্যে বৈপ্লবিক সম্ভাবনার সূচনা করবে।
বাংলাদেশ সময় ১৯১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর/জেসিকে