অনলাইনে মানুষ সংবাদ পড়বে! এমন বিষ্ময়সূচক বাক্যবাণে জর্জরিত হওয়ার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে অনলাইন নিউজপোর্টালের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ২০০৪ সালে। প্রথিতযশা সাংবাদিক আলমগীর হোসেন শুরু করেছিলেন এই সাহসী পথচলা।
এখন এই অনলাইনই প্রতিদিন সৃষ্টি করছে নতুন নতুন বিষ্ময়। অনলাইনেই খবর পড়তে পছন্দ করছে মানুষ। এবং বলা যায়, এখন অনেকের সংবাদ জানার একমাত্র উপায় অনলাইন।
প্রতিদিন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এই পাঠক তৈরি করছে। গড়ছে নতুন রেকর্ড। এবং নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান অ্যালেক্সা.কম(alexa.com) এর হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ব্রাউজ করা হয় এমন যে কোনো অনলাইন সংবাদমাধ্যমের মধ্যে প্রথম বাংলানিউজ। আর বাংলাদেশ থেকে যত অনলাইন ব্রাউজ করা হয় তার প্রথম সাতটির মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে থেকে একমাত্র সংবাদমাধ্যম হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বাংলানিউজ। এই তালিকায় প্রথম অবস্থান ফেসবুকের। এরপর যথাক্রমে গুগল.কম.বিডি, গুগল.কম, ইউটিউব, ইয়াহু। বাংলানিউজের পরে সপ্তম অবস্থানে ব্লগস্পট.কম।
আন্তর্জাতিক অপর এক হিসেবে এখন দৈনিক বাংলানিউজ ওয়েব পোর্টালের পেজভিউ ৯ কোটি (৯০ মিলিয়ন)। সংখ্যায় লিখলে তা দাঁড়াবে ৯০,০০,০০,০০। আর অ্যালেক্সার হিসেবে প্রতি ব্যক্তি পাঠক বাংলানিউজে ঢুকে ৫.৫০টি পেজভিউ করেন। সে হিসেবে বাংলানিউজের ব্যক্তি পাঠকের সংখ্যা প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১ কোটি ৬৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৩৬ জন।
গুগল অ্যানালিটিকস জানাচ্ছে বাংলানিউজের মোট পাঠকের ৬২.৫ ভাগ দেশের অভ্যন্তরের। বাকি ৩৭.৫ ভাগ দেশের বাইরের পাঠক। এই হিসেবে দেশের ভেতরে মোট পাঠকের সংখ্যা ১ কোটি ০২ লাখ ২৭ হাজার ২৭২ জন। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের তথ্যমতে দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটি ৯০ লাখ। সে হিসেবে দেশের মোট নেটিজেনের ৩৫.২৬ শতাংশ বাংলানিউজের পাঠক। গুগলের হিসাবে প্রতিমূহূর্তে বাংলানিউজে ১৬ শতাংশ নতুন পাঠক আকৃষ্ট করে। আর পুরোনো পাঠক বাংলানিউজে থাকেন ৮৪ শতাংশ।
অ্যালেক্সা ও গুগল অ্যানালিটিকসের এই হিসাব আন্তর্জাতিক মানের। অ্যালেক্সা বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন.কম এর সিস্টার কনসার্ন। এই অ্যামাজন অনলাইন জগতে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের জায়গায় চলে আসছে। অতি সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট কিনে নিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
উপরের পরিসংখ্যান ও তথ্য বাংলানিউজকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম হিসেবে উপস্থাপন করে। তবে এই তথ্য বাংলানিউজকে কতগুলো শ্রেষ্ঠত্বের স্থানও দেয়। একমাত্র বাংলানিউজেরই দেশের বাইরে ৩৫ শতাংশ পাঠক রয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমই তার কনটেন্ট নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থানকারী একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে পারে না যাদের কাছে বাংলানিউজ একটি ভরসার স্থান তৈরি করতে পেরেছে। বিশ্বের ১৯৭ টি দেশ থেকে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ব্রাউজ করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের পরে প্রথম ১০টি হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদিআরব, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইটালি, ভারত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। ১৯৭টি দেশের মধ্যে জিবুতি, ফেরোআয়ল্যান্ড, গিনিবিসাউ, কোনোআয়ল্যান্ড, ফেঞ্চপলিনেশিয়া, শাদ ও ভানুয়াতুর মতো দেশগুলো থেকেও বাংলানিউজ ব্রাউজ করা হয়। এই পাঠকরাই বাংলানিউজের গর্ব। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেখানে ইন্টারনেট পৌঁছেছে সেখানেই রয়েছে বাংলানিউজের পাঠক।
কেনো এই জনপ্রিয়তা? এ প্রশ্ন পাঠকমাত্রই স্বাভাবিক। উত্তর একটাই, বাংলানিউজ এটা অর্জন করতে চেয়েছে তাই পেরেছে। লক্ষ্যটি সুস্থির ছিলো। ফলে এগিয়ে যেতে কষ্ট হয়নি। নেতৃত্ব সম্পূর্ণ কোন্দলমুক্ত। দলনেতা নিজেও একজন কর্মী। ২৪ ঘণ্টার এই মিডিয়ায় সবাই ২৪ ঘণ্টার কর্মী।
যা কিছু সংবাদ তাই স্থান পায় বাংলানিউজের ক্যানভাসে। কোন খবরের কতজন পাঠক আছে তা নয়, খবরটিই বাংলানিউজের কাছে গুরুত্ব পায়। অতি প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবর যেমন এতে স্থান পায়, কসমোপলিটন শহরের শততলার ওপরের খবরটিও বাদ দেওয়া হয় না। আর যার খবর প্রকাশিত হয় তিনি তো তা পড়তে চাইবেনই। সে কারণেই বাংলানিউজ পাঠকের কাছাকাছি।
বাংলানিউজের প্রায় শতভাগ খবরই অরিজিনাল কনটেন্ট। আন্তর্জাতিক কিছু খবর অন্য সংবাদমাধ্যম থেকে নিয়ে অনুবাদ করা ছাড়া অন্য সবখবরই বাংলানিউজের নিজস্ব উৎপাদন ও নিজস্ব সম্পদ।
বাংলানিউজ কোনো উপজাত (বাইপ্রোডাক্ট) মিডিয়া নয়। শতভাগ স্বতন্ত্র একটি সংবাদমাধ্যম। এর প্রতিটি খবরে বা খবর ধর্মী আধেয়তে এর কর্মীদের মেধা ও শ্রমের প্রয়োগ রয়েছে। কাট-কপি-পেস্ট সাংবাদিকতা থেকে বাংলানিউজ নিজেকে সুষ্পষ্ট দূরত্বে রাখে।
বাংলানিউজ তার কেন্দ্রীয় অফিসে দেড় শতাধিক কর্মীর টিম ও সবগুলো জেলায় নিজস্ব জেলা প্রতিনিধি, গুরুত্বপূর্ণ সবগুলো উপজেলায় নিজস্ব প্রতিনিধি দিয়ে টাটকা-তাজা খবর সংগ্রহ ও পরিবেশন করে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা। চট্টগ্রাম, সিলেটে রয়েছে নিজস্ব ব্যুরো কার্যালয়। বিশ্বের প্রধান প্রধান নগরীতে রয়েছে বাংলানিউজের নিজস্ব প্রতিনিধি। দ্বিতীয় বৃহত্তম পাঠকের দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। গুগল অ্যানালিটিকসের হিসেবে গত তিন মাসে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই বাংলানিউজের পাঠক বেড়েছে দুই লাখের বেশি।
যা কিছু অর্জন তা লক্ষ্যের চেয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে। বাংলানিউজ বাংলাদেশ থেকে ব্রাউজ করা যে কোনো অনলাইনের মধ্যে প্রথম হতে চায়। বাংলানিউজ দেশের প্রতিটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর প্রিয় সংবাদমাধ্যমে পরিণত হতে চায়। ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন অব মাইগ্রেশন (আইওএম) এর হিসাবে বর্তমানে ৭০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশির অবস্থান। এই ৭০ লাখ বাংলাদেশির প্রতিটি মানুষের কাছেই দেশের খবর জানার জন্য নির্ভরশীল মিডিয়া হয়ে উঠতে চায় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।
বিবিসির একটি খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটি। এদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছে এবং তার দিকে ঝুঁকছে। এই বৃহৎ সংখ্যাটিও একদিন হয়ে উঠতে পারে বাংলানিউজের পাঠক।
ফলে লক্ষটি বৃহৎ। এই বিশাল লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলানিউজকে প্রথমেই একটি নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা অটুট রাখতে হবে। পাঠক যত বাড়বে চাহিদার বৈচিত্র্য ততই বাড়বে। ফলে পাঠকের চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় কনটেন্ট বাড়াতে হবে। এবং সর্বোপরি অনলাইন হিসেবে সবার আগে সবশেষ খবর সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলানিউজ সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুত।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৩
এমএমকে/জেডএম/এডিবি