ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

তথ্যপ্রযুক্তি আইন নিয়ে উদ্বেগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৩
তথ্যপ্রযুক্তি আইন নিয়ে উদ্বেগ

ঢাকা: উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অগ্রসর অবদানের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ‍অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব ‍অপরাধের দমনে আইনি কাঠামো সংশোধন, তথ্যপ্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ ও তার সাম্প্রতিক সংশোধন কেবল অপরাধের সংজ্ঞা, তদন্ত সর্বোপরি বিচারকেই বাধাদান করবেন না বরং জনগণের বাক স্বাধীনতার প্রতি হস্তক্ষেপ, হয়রানি ও হেনস্তার একটি কঠিন হাতিয়ারে পরিণত হবে বলেই মনে করছেন বিশেজ্ঞরা।



বিশেজ্ঞরা বলছেন, এই আইনের ৫৭ এর এক নং অনুচ্ছেদের সংজ্ঞায় রয়েছে ব্যাপক অস্পস্টতা, আইন প্রয়োগকারীর হাতে দেওয়া হয়েছে সীমাহীন ক্ষমতা, তথ্য অধিকার অাইনের সঙ্গে রয়েছে সংঘর্ষ এবং সর্বোপরি এটি বাক স্বাধীনতা রোধ করে যোগাযোগ ও উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

এ বিষয়ে ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি)র নির্বাহী প্রধান সাঈদ আহমেদ বলেন, ৫৭ এর এক অনুচ্ছেদে অপরাধের যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে সেটি সুস্পষ্ট নয়। আর এর ফলে প্রকৃত অপরাধী প্রমাণ এবং নির্দোষ ব্যক্তির নিরাপরাধ প্রমান দুটোই কঠিন হবে। কোন ধরনের আলোচনা না করে অপরাধের এই অস্পষ্ট সংজ্ঞা আইন প্রণয়ণে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতাকে নির্দেশ করে এবং স্বেচ্ছাচারীতার সুযোগ বাড়িয়ে দেয়।

অপরদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সীমাহীন ক্ষমতা দেওয়া হবে বলে মনে করেন সাঈদ আহমেদ। তিনি বলেন, একজন কর্মকর্তা নিছক সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কিংবা অনলাইনে মতপ্রকাশের কারণে ইচ্ছা করেই কাউকে গ্রেফতার করে নির্দোষ প্রমানের আগে পর্যন্ত জামিন বিহীনভাবে আটক রেখে এখানে ‘জাজ, জুরি ও এক্সিকিউশনারের” ভূমিকা পালন করতে পারেন।

একই সঙ্গে তিনি এটিকে ভীতির রাজনীতি ও লঘু পাপে গুরুদণ্ড হিসেবেও আখ্যা দেন। তিনি বলেন, স্বল্পমাত্রার অপরাধে কেউ দোষী হলে তাকে কমপক্ষে সাত বৎসর সাজা দেওয়া হবে যা প্রকৃতপক্ষে লঘু পাপে গুরুদণ্ডের শামিল। অপরদিকে তিনি এটিকে তথ্য অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ বাক স্বাধীনতাকে নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং জনগণের তথ্য অধিকারকে সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতি কমানোর জন্য অপরিহার্য হিসেবে চিহ্নিত করে স্ব:প্রণোদিত তথ্যপ্রকাশকে উৎসাহিত করে কিন্তু এই আইনে তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধের অস্পষ্ট সংজ্ঞা, জামিন অযোগ্যতা ও সর্বনিম্ন শাস্তির অস্বাভাবিক মাত্রা তথ্য অধিকারের মূল চেতনার পরিপন্থী।

অপরদিকে এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধিতে সংজ্ঞায়িত মানহানির অপরাধ জামিনযোগ্য এবং এর সর্বোচ্চ শাস্তি ২ ব‍ছরের কারাদণ্ড। ২০১১ সালের আগ পর্যন্ত মানহানির অপরাধ আমলে নিয়ে আদালত অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পরোয়ানা জারি করতে পারতো। আর এর কারণে সাংবাদিক সমাজ নানা অনাকাঙ্খিত হয়রানির শিকার হয়েছে। বর্তমান সরকার ২০১১ সালে এক সংশোধনীর মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানার বদলে সমন জারির বিধান করে। কিন্তু এই উদ্যোগটি এবার অর্থহীনতায় পর্যবসিত হতে যাচ্ছে।

অনলাইনে প্রকাশিত যে কোন রিপোর্টকে মানহানিকার বিবেচনা করে সরকার ৫৭ ধারার প্রয়োগ করতে পারে। আর এ অপরাধ অজামিনযোগ্য এবং এর শাস্তি সর্বনিম্ন সাত বছর এবং সবোর্চ্চ ১৪ বছর।

তিনি বলেন, অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অপরাধ সংক্রান্ত বিধানাবলীর সংশোধন যে কোন বিচারেই অগ্রহণযোগ্য। উদ্দেশ্যমূলকভাবে জাতীয় সংসদকে পাশ কাটানোর এই প্রয়াস থেকেই প্রতীয়মান হয়, অপরাধজনিত সমস্যার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নয়, বরং সরকার কর্তৃক অন্য কোন পরোক্ষ উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষেই ২০১৩ সালের এই অধ্যাদেশটির জন্ম হলো।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৫ ঘণ্টা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩
জেএ/ কেএইচ/এমজেডআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।