ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

সাইবার নিরাপত্তায় ‘আইবিএফ’ উদ্যোগ

মাহবুব পলাশ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৪
সাইবার নিরাপত্তায় ‘আইবিএফ’ উদ্যোগ

কম্পিউটার আর ইন্টারনেটে ভর করে দৈনন্দিন কাজগুলো নিয়ে এখন সাইবার জগতে বাসিন্দা। অন্তর্জালের দুনিয়ায় এখন যুক্ত হওয়ার অনেক কিছু আছে।

আছে নানা উপায়। জরুরি ইমেইল পাঠানো কিংবা ওয়েবসাইট দেখার বাইরেও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

সাইবার জগতে আমাদের আনাগোনা যত বাড়ছে, ততই বেড়ে চলছে সাইবার অপরাধ। আর এতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। তথ্যপ্রযুক্তিরযেমন ভালো দিক আছে, তেমনি এর উল্টো দিকগুলো নিয়ে অপকর্ম করার লোকেরও অভাব নেই।

ছোট ছোট হলেও এসব অপরাধের মাত্রা ভয়ংকর হতে পারে। এরই বাস্তবিক নিরাপত্তার সঙ্গে চাই নিরাপদ সাইবার জগৎ। সাইবার অপরাধ রোধ আর এ বিষয়ে কীভাবে সতর্ক থাকা যায়, তা নিয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশের একদল উদ্যমী তরুণ। তাদের প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে ভিন্ন ভিন্ন পেশায় থাকলেও এ একটি জায়গায় একসঙ্গে কাজ করছেন তারা।

আলাদা পেশায় জড়িত বন্ধুরা একসঙ্গে হয়ে গড়ে তুলেছেন একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ (আইবিএফ)। আইবিএফের পরিচালক তানভীর হাসান জানালেন, আমরা বেশ কটি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছি।

এ উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে আছে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিরাপদভাবে ইন্টারনেটের ব্যবহারে সহায়তা করা, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন, নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা, সাইবার অপরাধের ঝুঁকি এবং কম্পিউটার নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্কীকরণ, সাইবার জগৎকে নিরাপদ রাখা এবং শক্তিশালী জাতি গঠনে সহযোগিতা করা, বাস্তবসম্মত উপদেশ ছাড়াও সাইবার অপরাধ শনাক্ত করে কীভাবে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের সহায়তা করা যায় তা নির্ধারণে দিকনির্দেশনা দেওয়া।

বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম নতুন কোনো ঘটনা নয়। সম্প্রতি ‘থ্রিজি’ চালু হওয়ার পর প্রযুক্তির উৎকর্ষের বিরূপ প্রতিক্রিয়াও আছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন নামে বেনামি কিছু ই-কমার্স সাইটগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের হয়রানির অভিযোগ আছে।

২০০০ সালের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ তথ্য ও প্রযুক্তি সঠিকভাবে ব্যাপক বিস্তার করে। এর যথার্থ ব্যবহার বেসরকারি সংস্থাগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীতে সরকারি পর্যায়ে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন হয় সেভাবে ক্রমান্বয়ে সরকারি মন্ত্রণালয়গুলোকে পরিকল্পিত নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়। বাংলাদেশ ই-গভর্ন্যাস প্রকল্প বাস্তবায়নে ও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দাতাসংস্থাগুলোকে আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বর্তমান সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। বিশেষ করে অর্থনীতিতে, ই-মিডিয়াগুলোতে এর প্রচার সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি থ্রিজি প্রযুক্তি প্রচলিত হওয়ায় সামাজিক গণমাধ্যমগুলো কিছু সংখ্যক ভুয়া ই-কমার্স  সাইটগুলোতে অবৈধ আর্থিক লেনদেন, প্রবাসী বাঙালিদের অর্থনৈতিক হয়রানি এবং সেই সঙ্গে জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বর্তমানে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাইবার অপরাধ, সাইবার নিরাপত্তা এবং তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইন ২০১৩ অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সাইবার অপরাধ একটি সমসাময়িক বিষয়ে এবং এ অপরাধকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

ঘটে যাওয়া জাতীয় পর্যায়ে কিছু মারাত্মক সাইবার অপরাধের মধ্যে স্কাইপিতে বিচারকের আলাপ ফাঁস হওয়া, বিচারকের রায়ের অংশ অনলাইনে চলে আসা, রামুর মত হাজারো বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক মন্দিরগুলো বিচ্ছিন্ন করা, পাবনার সাথীয়াতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ছাড়াও জাতীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে বেনামে ভুয়া পেজ তৈরি করা আলোচিত। এ সব ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা প্রয়োজন যেহেতু বাংলাদেশের একটি বিরাট অংশের জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের প্রায় সবাই তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইনের বিষয়ে অবগত থাকা উচিত। কিছু কিছু অপরাধ জামিন অযোগ্য এবং আমলযোগ্য অপরাধ। সুতরাং যে কেউ তার জ্ঞাত সারে অথবা অজ্ঞাতসারে সাইবার অপরাধের স্বীকার হতে পারেন। তাই কেউ যদি সাইবার অপরাধের স্বীকার হয় তাদের স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে জানানো প্রয়োজন।

দেশের অনলাইন সংস্কৃতিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক, ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে। এসব অনলাইন অর্থনৈতিক লেনদেন বিশিষ্ট ব্যবসাগুলোকে একটি টাস্ককোর্সের মাধ্যমে এখনই মনিটরিং করা উচিত। বাংলাদেশে বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তাই সব বাংলাদেশি, প্রবাসী জনগণদের অনলাইনভিত্তিক লেনদেনের বৈধতা যাচাই করে লেনদেন করা উচিত।

সাইবার অপরাধ প্রযুক্তির মাধ্যমেই সংগঠিত হয়। সে জন্যই এ অপরাধ তদন্ত করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার আইন সম্মতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এরই মধ্যে ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে অপরাধ তদন্ত বিষয়ক একটি কর্মশালার উদ্দেশ্য চুক্তি সই করেছে।

বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। এদের মধ্যে অধিকাংশ তরুণ। সুতরাং এ গোষ্ঠীদেরকে যেকোনো রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করতে গেলে অপরাধীরা সামাজিক গণমাধ্যমভিত্তিক ওয়েবসাইটে অপরাধ করে এবং বিভ্রান্ত করার জন্য সেরা কৌশল মনে করে। তাই বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থতিতে সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে এক্ষেত্রে মনিটরিং সেল গঠন করা একান্ত প্রয়োজন।

এরই মধ্যে ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (০১৭৬৬৬৭৮৮৮) নম্বরে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা অবধি সাইবার অপরাধ বিষয়ে হেল্প ডেস্ক চালু রেখেছে। ভবিষ্যতে এ নম্বরকে শর্ট কোডে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও দেশব্যাপী সাইবার ক্রাইম আইন সচেতন বাড়াতেও এ সংগঠনটি কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময় ২২১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।