বার্সেলোনা, স্পেন থেকে ফিরে: বিশ্বে আগামীতে নতুন প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে আবির্ভূত হবে ‘ডাটা’।
আইবিএমএ’র সিইও ভার্জিনিয়া রমেটির মতে, মূলত মোবাইল সেবা এবং এন্টারপ্রাইজ টেকনোলজিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এ বিশাল ডাটা ব্যবহারের মাধ্যমে।
তার মতে, ডাটা হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সম্পদ। এর ফলে প্রতিটি শিল্পের জন্য এটি হবে একটি প্রতিযোগিতামূলক সুযোগ।
স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্সেলোনা ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেসে ডাটার ভবিষ্যত নিয়ে এমনই সব মন্তব্য করেছেন আইবিএমএ’র সিইও ভার্জিনিয়া রমেটি।
রমেটি মনে করেন, প্রযুক্তির এ পরিবর্তনের সঙ্গে কোম্পানির জন্য প্রয়োজন হবে ‘গতি, নিরাপত্তা ও আস্থা’ যার মাধ্যমে গ্রাহকদের আশা পূরণ করা সম্ভব হবে।
রমেটির বক্তব্যে ডাটার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ‘ক্লাউড’ এর প্রসঙ্গটিও উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, ক্লাউড কম্পিউটিং ডাটা সেবার ধারা পাল্টে দেবে। সোশ্যাল এবং মোবাইল টেকনোলজি এরই মধ্যে মানুষের ব্যবসা কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে বড় ধরনের প্রভাব তৈরি করেছে।
কম্পিউটার এবং ডাটা স্টোরেজ সহজে, ক্রেতার সুবিধামতো চাহিবামাত্র এবং ব্যবহার অনুযায়ী ভাড়া দেওয়ার পদ্ধতিই হলো ক্লাউড কম্পিউটিং।
ক্লাউড কোনো সুনির্দিষ্ট টেকনোলজি নয়, বরং এটি একটি ব্যবসায়িক মডেল। এর মাধ্যমে বেশ কিছু নতুন পুরোনো প্রযুক্তিকে একটি বিশেষভাবে বাজারজাত করা হয় এবং ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। যেসব ক্রেতার অল্প সময়ের জন্য কম্পিউটার দরকার বা তথ্য রাখার জায়গা দরকার কিন্তু অল্প সময়ের জন্য কম্পিউটার কেনার পেছনে অনেক টাকা খরচের ইচ্ছা নাই, এ ধরনের লোক ক্লাউডের মাধ্যমে ক্লাউড সেবাদাতাদের কাছ থেকে কম্পিউটার বা স্টোরেজ স্পেস ভাড়া নেন।
মূলত ২০০৯ সালের দিকে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়। ওই সময়ে বিশ্বের বড় বড় আইটি প্রতিষ্ঠান ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে তাদের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে থাকে। যেকোনো প্রতিষ্ঠান তাদের আইটি বাজেটে প্রায় ১৮ শতাংশ ব্যয় কমিয়ে আনতে পারে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। এছাড়া ডাটা সেন্টারগুলো তাদের ব্যয়ের ১৬ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম এ প্রযুক্তির মাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে বিগত ১৫ বছর ধরে ভয়েস কলের একচেটিয়া চাহিদা ছিল। আরো কয়েক বছর ভয়েস কলের এ চাহিদা অব্যাহত থাকবে। তবে এরই মধ্যে আমেরিকা ও ইউরোপে ভয়েস কলের হার অনেক কমে গিয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় ইন্টারনেটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে আমেরিকায় ইন্টারনেট ব্যবহার ৭০ শতাংশ, ইউরোপে ৬০ শতাংশ এবং এশিয়াতে ৩০ শতাংশ।
বর্তমানে গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা ৪ কোটি ৪৭ লাখ। এর মধ্যে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা এক কোটি।
মোবাইল কংগ্রেসে দেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের সিইও বিবেক সুদ বলেছেন, গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশে থ্রিজি সেবা চালুর পর গ্রামীণফোনের থ্রি-জি গ্রাহক সংখ্যা আশানুরুপ বেড়েছে।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে থ্রি-জি নিলামে গ্রামীণফোন ১০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম কিনে নেয়। এরপর ‘সবার জন্য ইন্টারনেট’ এ স্লোগান নিয়ে কাজ শুরু করেছে গ্রামীণফোন।
এরই মধ্যে গ্রামীণফোন দেশের সব বিভাগীয় সদরসহ ৪০টি জেলায় থ্রি-জি সেবা চালু করেছে।
দেশের উচ্চগতির থ্রি-জি ডাটা সেবার মাধ্যমে ব্যক্তি বিশেষ এবং গ্রামীণ সমাজ যেমন উপকৃত হবে তেমনি ছোট বড় ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোও উপকৃত হবে। উন্নততর যোগাযোগ, আরো শক্তিশালী, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবস্থা আমাদের গতিশীলতা এবং উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলবে।
উচ্চগতির এ থ্রিজি ডাটা সেবা কাজে লাগাতে পারলে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে অর্থ আয় করছে তা আরো বহুগুণ বাড়বে।
বিশ্বব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, ২০১২ সালে প্রবাসীরা দেশে ১৪ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন। প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরে নিলে ২০১৫ সাল নাগাদ তা হবে প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলার। আর ডাটা এন্ট্রির মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে বিশ্বে ৪৪৩ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের কাজ হবে। এর ৫ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিতে পারলে বাংলাদেশ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার অর্থ আয় করতে পারবে, যা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের চেয়ে বেশি হবে।
**সাশ্রয়ী মূল্যে স্মার্টফোন ছাড়ছে গ্রামীণফোন
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘন্টা, মার্চ ০৯, ২০১৪