বাংলাদেশ বিজ্ঞান লেখক ও সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে ২৯ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, এ ফোরামটি ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব সায়েন্স জার্নালিস্টের সদস্য।
এ সংলাপে ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইব্রাহীমের সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট বিজ্ঞান লেখক ও ফোরামের সহসভাপতি গোলাপ মুনীর।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও ফোরাম সদস্য প্রফেসর ড. এম শমসের আলী, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এম এ কাইয়ুম, দ্য নিউনেশন এর সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. নূরজাহান বেগম, সাপ্তাহিক রোববার এর সম্পাদক তোশাররফ আলী, বাংলাদেশ বিজ্ঞান যাদুঘরের সাবেক পরিচালক ড. মোবারক আলী আকন্দ, সাপ্তাহিক মহাকাশ বার্তার সম্পাদক এফ আর সরকার, ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মীর লুৎফুল কবীর সা’দী এবং বাংলানিউজের আইসিটি সম্পাদক সাব্বিন হাসান।
গোলাপ মুনীর বলেন, জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বাণিজ্যিক প্রচারণা বেশি হয়ে থাকে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য এখানে বরাদ্দ খুবই কম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির লেখক সংখ্যাও ক্রমেই কমছে। জাতিকে বিজ্ঞান মনস্ক করার জন্য আমাদের মিডিয়ায় তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞানের ছাত্রও কমছে। তাই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা ও প্রচারণা অপরিহার্য।
অধ্যাপক এম শমসের আলী বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিজ্ঞানের মানোন্নয়ন ছাড়া ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন সহজেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। জাতীয় উন্নয়নে সরকার, রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। বিজ্ঞান আগ্রহী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে আসছে এটা দেশের জন্য হতাশাব্যঞ্জক।
প্রকৌশলী এম এ কাইয়ুম বলেন, বাঙালি ক্রেতা জাতি হয়ে উঠছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনগুলো শুধু ক্রয় করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নিজেদের কোনো ভূমিকা নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতিতে সবাইকে সমন্বিত কাজ করতে হবে।
সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন বলেন, দেশে বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং নতুন নতুন আবিষ্কার হলে তা সংবাদপত্রমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গেই প্রকাশ করা হয়। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে দেশে বিজ্ঞাননির্ভর উদ্ভাবনার সংখ্যা কমে আসছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরও উদ্যোগী হতে হবে।
মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, প্রতিদিন সংবাদপত্রে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা অনেক বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। আইসিটির ব্যাপক প্রসার ঘটছে তবে প্রয়োগিক বিজ্ঞানচর্চা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে।
তোশাররফ আলী বলেন, বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষায় নম্বর পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কর্মজীবনে এর তেমন কোনো প্রয়োগ নেই। দীর্ঘ বিরতির পরও জগদীশ চন্দ্র বসু কিংবা ড. কুদরত-ই খুদার মতো কোনো বিজ্ঞানীর আর্বিভাব হচ্ছে না।
মীর লুৎফুল কবীর সা’দী বলেন, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা গুরুত্ব পাচ্ছে না। এ খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল। শুধু আইসিটির উন্নতি করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়া সম্ভব নয়।
সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক ইব্রাহিম বলেন, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বৈশ্বিক। বিজ্ঞানের ঘটনা প্রবাহ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলেও দেশে বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের প্রয়াস লক্ষ্যণীয় নয়। বিজ্ঞাননির্ভর নিয়মিত আলোচনা এবং মতবিনিময়ের বিষয়ে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২২১২, জানুয়ারি ২৯, ২০১১