ঢাকা: প্রযুক্তি বিপ্লবের এই যুগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক ব্যবহারের দিকে জোর দিচ্ছেন সবাই। এ মাধ্যম ব্যবহারে পিছিয়ে নেই রাজনীতিকরাও।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হলেও অসাধু ব্যক্তি-গোষ্ঠীর আনাগোনায় প্রতারণা ছড়িয়ে পড়ছে ভার্চুয়াল এ জগতেও। কোনো কোনো গোষ্ঠী প্রতারণার ফাঁদ পেতে নিজের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রচারণায় ফেসবুককে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন। এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছে।
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পর্যবেক্ষণ মতে, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে রাজনীতিকদের ফেসবুক ব্যবহারের মাত্রা বহুলাংশে বেড়ে যায়। পেজে ‘লাইক’ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলে। এ সময়টাতেই পেজে ‘ভুয়া’ লাইকের হিড়িক পড়ে যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার পেজে লাইক বাড়ানোর জন্য আর্থিকভাবেও কাজ করে থাকে।
এসব পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষও জানিয়ে দিয়েছে, যেসব পেজে ‘সন্দেজনক’ হারে এ ধরনের লাইক বাড়তে দেখা যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মূলত ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই ফেসবুক এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানালো বলে মনে করা হচ্ছে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, যেসব পেজে সন্দেহজনক হারে ‘লাইক’ পড়ছে ও যেসব অ্যাকাউন্ট প্রতারণার সঙ্গে জড়িত, সেসব পেজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি অন্য পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, যারা ভুয়া ‘লাইক’ দেওয়ার কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি বেসরকারি একটি সংস্থার জরিপে দেখা যায়, ভারতে রাজনীতিবিদদের নিজস্ব বা দলের নামে ৫২ হাজারের বেশি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এর মধ্যে কেবল ৬০টি পেজ ভেরিফাইড।
এ বিষয়ে ফেসবুকের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা আমাদের পেজের বিষয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে সততা দেখাতে চাই। এজন্য যারা ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে অন্যায় কাজ করছেন, তাদের বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ভারতে প্রতি মাসে সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯ কোটি।
বিভিন্ন সংস্থার অভিমত, যোগাযোগে সামাজিক মাধ্যমগুলোর জনপ্রিয়তার কারণে নির্বাচনের সময় রাজনীতিবিদরা তরুণ প্রজন্মের কাছে সহজে পৌঁছতে এ মাধ্যমকে বেছে নেন। ব্যবহার করেন ফেসবুক, টুইটারের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।
বর্তমানে নিজের ফেসবুক পেজে সর্বাধিক সংখ্যক ১ কোটি ২০ লাখ লাইক নিয়ে এগিয়ে আছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি। আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পেজে লাইক রয়েছে ৪৮ লাখ। আর পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পেজে লাইক রয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজার।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, যতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরই পেজ হোক- নিবন্ধন পদ্ধতি, বন্ধুত্ব তৈরির কৌশল, তথ্য আদান-প্রদান ও পেজে লাইক দেওয়ার ওপর ভিত্তি করে ভুয়া অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফেসবুকের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার জননীতি বিষয়ক পরিচালক আঁখি দাস বলেন, প্রযুক্তির এ যুগে সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আমাদের এ ধরনের পদক্ষেপ।
এক জরিপে দেখা যায়, নির্বাচনকালে ভারতের ১৬০টির মতো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারে প্রভাবিত হয়।
যোগাযোগ বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি প্রতিষ্ঠানই এভাবে প্রভাবিত হয়, তাহলে সাধারণ ব্যবহারকারীদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এ হিসেবে অসাধু গোষ্ঠীর প্রতারণা থেকে রেহাই দিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৪