ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ঢাকায় ‘ডার্টি স্যামসাং’!

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪
ঢাকায় ‘ডার্টি স্যামসাং’! ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: ‘ডার্টি স্যামসাং’! বহুজাতিক কোম্পানিটির বাংলাদেশ-ভেঞ্চারকে এমনই অভিধা দিলেন এর সাবেক এক কর্মী। কোনও কারণ ছাড়াই এই কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে স্যামসাং আর অ্যান্ড ডি ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ(এসআরবিডি) থেকে।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দুই বছর চাকরি করার পর উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে জবরদস্তিমূলক পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাধ্য হন তিনি। এখন তার অধীর অপেক্ষা সামান্য সার্ভিস বেনিফিটের।

স্থায়ী চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে, দিনরাত খাটিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের পর এসআরবিডি এবার কর্মীদের ছুঁড়ে ফেলছে। মানছে না কোনো আইন-কানুন-নীতি বা মানবিকতা। চাকরিচ্যুতদের সার্ভিস বেনিফিটটা পর্যন্ত না দেওয়ার পাঁয়তারা করছে।

মন্তব্যকারী একজন নারী।   এই সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার তার প্রাপ্য প্রতিশ্রুত বেনিফিটের টাকা পাবার  অপেক্ষায় আছেন। একারণে তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেছেন, কর্মচ্যুতির খাঁড়ায় এরই মধ্যে বলি হয়েছেন ৭০-৮০ জন কর্মী। আরও অন্তত ২৫০ জনকে ছাঁটাই করা হবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছে এসআরবিডি।

‘নাজিয়া আক্তার’ (ছদ্মনাম) নামের ওই কর্মচ্যুত নারী জানান, দেশের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাশ করেছেন তিনি। তবে তিনি যখন চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় টার্মে পড়ছিলেন তখনই একদিন তাদের ক্যাম্পাসে নিযোগ ক্যাম্পেইন নিয়ে যায় এসআরবিডি। সে-সময় অনেকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন নাজিয়াও। আর তাতে যোগ্যতাবলে টিকেও যান। গ্রাজুয়েশন শেষ করেই ২০১২ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কাজ শুরু করেন তিনি। অন্যত্র নতুন নতুন কাজের সুযোগ ও অফার থাকলেও নিজেকে এসআরবিডিতেই নিয়োজিত রাখেন। কাজে যোগ দেওয়ার আগেই তাদের মানবসম্পদ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তখন বারবার একটি নিশ্চয়তার কথাই জানানো হতো:স্যামসাং কখনোই তাদের ছুঁড়ে ফেলবে না। এটি অনেকটা সরকারি চাকরির মতো। একমাত্র নিরাপত্তাজনিত ব্যত্যয় ঘটলেই স্যামসাং ব্যবস্থা নেবে। সুতরাং স্যামসাংয়ের চাকরি পাকা।

‘আমরা কর্মীরা সবাই ওদের কথায় বিশ্বাস করেছিলাম। আর মন-প্রাণ দিয়ে উৎসাহের সঙ্গে কাজ করতে থাকি’-বলেন নাজিয়া।

আমি নিজে অন্যত্র অনেক কাজের সুযোগ পেলেও সেসবে সাড়া দিইনি। তখন মাথায় ছিল একটাই চিন্তায় যে এখানে কাজের নিশ্চয়তা আছে। যদিও স্যামসাংয়ে বেতনবৃদ্ধির হার খুবই নগণ্য। তারপরও একে গুরুত্ব দিইনি স্রেফ চাকুরির নিরাপত্তার খাতিরে। কিন্তু গত নভেম্বরে হঠাৎই ‍একদিন আমাকে ডেকে পাঠান আমার ল্যাব-প্রধান। বললেন, আমি যেন সাত দিনের মধ্যে পদত্যাগ করি। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের জন্যই আমি গার্মেন্ট শ্রমিকের মতো দিন-রাত ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেছি। প্রকল্পের কাজ তুলে দিয়েছি, মধ্যরাতে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরেছি, অনেক কাজের চাপেও এতটুকু অবহেলা করিনি। আমার ল্যাব-প্রধান এও বলতেন: ‘তোমাদের কোনো সমস্যা নেই। কারো যদি চলে যেতে হয়, তাহলে আমিই যাবো। ’ কিন্তু বাস্তবে কী ঘটলো? সবাইকেই বের করে দেওয়া হলো। ‘নিয়ম’ নামের অনিয়ম যতো তার সবই আমাদের মতো নিচের পর্যায়ে যারা রয়েছি তাদের জন্য।

‘আমরা চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রেও পক্ষপাতিত্ব দেখছি। আমার মতো একের পর এক অনেককেই চাকরিচ্যুত করা হলো। চাকরি গেলো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার/সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের। টেকনিক্যাল প্রধান, প্রধান প্রকৌশলী, সিনিয়র প্রকৌশলীরা বহাল তবিয়তেই থেকে গেলেন’, লিখেছেন নাজিয়া।

ঘটনার বর্ণনায় তিনি আরও জানালেন, ল্যাব-প্রধানের কাছে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কোন অপরাধে তার চাকরি যাচ্ছে। সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ল্যাব-প্রধান পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, সামান্য কিছু বেনিফিট যাতে তিনি পান সে ব্যবস্থা নাকি করা হবে।

‘আমার এতই খারাপ লাগছিলো, অপমানিত বোধ করছিলাম যে মনে হচ্ছিলো আত্মহত্যা করি’,  বাংলানিউজকে বলেন নাজিয়া। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৭০-৮০ জনের চাকরি গেছে আরও ২৫০ জনকে ‍ছাঁটাই করার প্রক্রিয়া চলছে। শুনেছি পরে যাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে তাদের সামান্য বেনিফিটটুকুও দেওয়া হবে না। ’

‘বহুজাতিক একটি কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা খুলে এমন প্রতারণা করছে। তরুণ মেধাবীদের ব্যবহার করে যখন-তখন ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে স্রেফ টিস্যু পেপারের মতো’ --বলেন নাজিয়া।

‘এরা কি কোনো আইনের আওতায় নেই? সরকার কেন এ ব্যাপারে পুরোই নিশ্চুপ? কোম্পানির সিইও কে ডেকে কেন জবাবদিহি করা হচ্ছে না?’ এসব নানা প্রশ্ন তুলে এর প্রতিবার চেয়েছেন নাজিয়া।

শেষে নিজের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এই অভিযোগকারী বলেন, নাম জেনে গেলে ‘ডার্টি স্যামসাং’ আমাকে প্রতিশ্রুত বেনিফিট থেকেও বঞ্চিত করবে।

‘নাজিয়া’ ছদ্মনামে পাঠানো অভিযোগকারী এই নারীর বক্তব্য ও অভিযোগের ব্যাপারে এসআরডিবিডি’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলানিউজ। তাদের বক্তব্য পেলে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হবে।  

বাংলাদেশ সময় ১৫২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।