ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ চৈত্র ১৪৩১, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

রাজাকারের ‘সঠিক’ তালিকা স্বাধীনতা দিবসে

দীপন নন্দী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
রাজাকারের ‘সঠিক’ তালিকা স্বাধীনতা দিবসে

ঢাকা: ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয় রাজাকার, আলবদর, আল-শামসসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের নামের তালিকা। কিন্তু সেই তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র বিতর্ক।

তিনদিন পরই সেই তালিকা স্থগিত করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।  

এবার বিতর্কহীনভাবে রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশ করতে চাচ্ছে মন্ত্রণালয়, যা আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর দিন প্রকাশিত হবে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জামেল হক বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করবে সরকার। ইতোমধ্যেই জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটা পাস হলেই আমরা স্বাধীনতাবিরোধীদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে তালিকা প্রকাশ করবো। এরপর পর্যায়ক্রমে এ তালিকা প্রকাশিত হতে থাকবে।

আগেরবারের মতো বিতর্কিত তালিকা হবে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী মোজ্জামেল হক বলেন, আমরা বির্তকহীনভাবেই করবো। আর যারা বিতর্ক করার তারা বিতর্ক করবেই।

২০১৯ সালের ২১ মে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বেতনভোগী রাজাকারদের তালিকা সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এর এক সপ্তাহ পর ২৮ মে আবারও চিঠি পাঠিয়ে এ তালিকা দ্রুত পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এরপর ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।  এর পরেই শুরু হয় বিতর্ক। ৬৫৯ পৃষ্ঠার তালিকায় নাম ছিল ১০ হাজার ৭৮৯ জনের। এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের শীর্ষ নেতা গোলাম আযমের নাম ছিল পাঁচবার। সে সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেতা খাজা মঈনুদ্দীন ও খান-এ-সবুরের নাম ছিল তিন বার। এছাড়া সে তালিকায় নাম ছিল ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরও।  

সাড়ে ছয় শতাধিক পৃষ্ঠার তালিকার পুরোটাই ছিল এলোমেলো। কোথাও বাংলায়, কোথাও আবার ইংরেজিতে নাম লেখা ছিল। সে সঙ্গে রাজাকার, আলবদর, আলশামস, আল মুজাহিদী বাহিনীর সদস্যদের আলাদা করা ছিল না তালিকাতে। কার কী অপরাধ- তারও কোনো উল্লেখ ছিল না।  

এসব বিতর্ক এড়াতে গত ৭ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভা বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকারদের তালিকা তৈরির বিধান রেখে বিজয়ের মাসে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২০’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।  

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, তাদের একটা তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। আগের আইনে এ বিধান ছিল না।

কী ব্যবস্থার সুপারিশ করবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল বলেন, এটা ডিপেন্ড করবে কেমন অপরাধ করেছেন, তার ওপর। শুধু সার্টিফিকেট নিয়েছেন, নাকি অন্য সুবিধা নিয়েছেন, নাকি দু’টোই নিয়েছেন বা তার সন্তানরাও সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন কি না, আইন অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ করা হবে। দণ্ডবিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, রাজাকারের তালিকা করার বিষয়টি খসড়া আইনে রাখা হয়েছে। আইনে সব বিষয়ে ডিটেইল করা নেই, এটা রুল করবে। স্বাধীনতাবিরোধী বলতে কী বোঝাবে রুলে তা বিস্তারিত বলা থাকবে। আগে আইন হোক, এরপর বিধি।

এ বিষয়ে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বাংলানিউজকে বলেন, আমলাদের দিয়ে রাজাকারের তালিকা করানো যাবে না। এটা আমলাদের কাজ নয়। এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক বা বিশেষজ্ঞ কাউকে সম্পৃক্ত করতে হবে। না হলে আবারও বিতর্ক সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
ডিএন/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।