ঢাকা: বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ উদ্যোগে তিন মাসব্যাপী ‘আইডিয়াথন’ প্রতিযোগিতার সমাপ্তি হয়েছে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী পাঁচটি দল সম্মাননা পদকসহ দক্ষিণ কোরিয়াতে ৬ মাসের ইনকিউবেশন প্রশিক্ষণ পাবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওস্থ আইসিটি টাওয়ারে এই সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এবারের আসনে মোট ৩ হাজার ১৪৭টি আবেদন জমা পড়ে। এদের মধ্যে থেকে পাঁচটি স্টার্টাপকে চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে বাছাই করা হয়।
এগুলো হলো- আরিফ রহমান, আরাফাত রহমান, ইবনুল ইসলাম, সুমিত আদনান এবং ইমতিয়াজ আহমেদের ছবির বাক্স, এহসান আহমেদ এবং মো. মামুনুর রেজার কৃষিয়ান; নওরীন হক হৃদি, আসফাকুল আজম, ইয়াসির হাসান টাকি এবং রুকসার আলমের চার ছক্কা লিমিটেড; থাজিড ইবনে রউফ উদয়, রাফিদ উদ্দিন ভূইঁয়া নেহাল, নাজিব আহমদ, শুভদ্বীপ দাস এবং সাবাব মাহমুদের এনটিটি রোবোটিক্স লিমিটেড এবং আবরার মাসুম শান্ত, প্লাবন শেখ, আবরার গালিব, মোহাম্মদ ফয়সাল ও ফাহিম হাসনাইন ফাহাদের রক্ষী লিমিটেড।
বিজয়ী স্টার্টআপরা দক্ষিণ কোরিয়াতে ৬ মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ, ইনকিউবেশন, ফান্ডিং, আন্তর্জাতিক পেটেন্টসহ কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক পাবার সহযোগিতা পাবে। বিজয়ী পাঁচটি স্টার্টআপ টিমের প্রতি টিম থেকে দু’জন করে মোট ১০জন দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করবেন। এর আগে, এই প্রতিযোগিতায় সেরা ৩০টি দলই বিশেষ মেন্টরিং গ্রহণ করে। সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ী পাঁচ স্টার্টআপ টিমকে সম্মাননা ক্রেস্টসহ বিশেষ সনদপত্র দেওয়া হয়। এছাড়া, উক্ত আয়োজনে সেরা ৩০টি স্টার্টআপকে ক্রেস্টসহ টিমের প্রত্যেক সদস্যকে অর্থাৎ মোট ১১১ জনকে সনদপত্র দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, তিনি আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং তিনিই আমাদেরকে দেখিয়েছেন কীভাবে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে গত নয় মাস আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ফুড ডেলিভারি, গৃহহীন ও কর্মহীন মানুষকে আর্থিক সহোযোগিতাসহ নানাভাবে সহোযোগিতা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের যুগোপযোগী ও সঠিক দিক-নির্দেশনায় তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সরকার প্রায় ১ হাজার ৪০০-এর বেশি ডিজিটাল সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। ৬ হাজার ডিজিটাল ডেলিভারি সেন্টারের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৬ মিলিয়ন মানুষ ডিজিটাল সেবা পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। একই সঙ্গে, আমরা কম সময়ে, কম খরচে এবং দুর্ভোগ কমিয়ে দ্রুততার সঙ্গে গুণগত মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছি। এগুলোর সকল কিছুই সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।
তিনি আরও বলেন, এর ফল হিসেবে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও করোনা পরিস্থিতিতেও দেশের অর্থনীতি সচল রয়েছে এবং ৫ দশম ২৮ শতাংশ জিডিপি গ্রোথ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি আমরা। করোনার এই কঠিন সময়ে জিডিপি গ্রোথ যে সকল দেশ মেইনটেইন করতে সক্ষম হয়েছে তার মধ্যে এশিয়ান এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।
গেস্ট অব অনার হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কেয়ান করোনা পরিস্থিতিতেও এ ধরণের আয়োজনে যে সকল মেধাবী তাদের উদ্ভাবন নিয়ে অংশ নিয়েছেন তাদের সকলকে দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যকার এই পার্টনারশীপ দুই দেশের সম্পর্ককে অবশ্যই আরও উন্নত করবে। আমি বিজয়ী ৫ স্টার্টআপকে শুভেচ্ছা জানাই। দক্ষিণ কোরিয়া এই বিজয়ী স্টার্টআপদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। প্রয়োজনীয় ট্রেইনিং, কনসাল্টিং এবং নেটওয়ার্কিং-এর মাধ্যমে আগামী ৬ মাস এই বিজয়ী স্টার্টআপদের উপযুক্তভাবে তৈরি করার লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়া কাজ করবে।
উক্ত আয়োজনে অন্যান্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব পার্থপ্রতিম দেব, দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া প্রোডাক্টিভিটি সেন্টারের (কেপিসি) এর পরিচালক স্যাংগন পার্ক, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনা এফ জাবিন। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক। এছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে আইসিটি পরিবারের আরও অনেকেই অনলাইনে সংযুক্ত হন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
এসএইচএস/জেআইএম