ঢাকা: তালেবানদের বসন্তকালীন হামলার সূচনায় কেঁপে উঠলো সমগ্র আফগানিস্তানে। আফগানিস্তান জুড়ে চালানো তালেবান হামলায় আক্রান্ত হলো খোদ রাজধানী কাবুলের সবচেয়ে সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকা।
রোববার একযোগে শুরু হওয়া এই হামলায় তালেবানদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর লড়াই ছড়িয়ে পড়ে কাবুলের কূটনৈতিক এলাকায়। কাবুলের সুরক্ষিত কুটনৈতিক এলাকা বা কথিত গ্রিনজোনের ভেতরে বেশ কয়েকটি ভবনে অবস্থান নিয়ে আক্রমন চালায় তালেবানরা। এসময় আফগানিস্তানের পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরেও প্রবেশের চেষ্টা চালায় তালেবান যোদ্ধারা।
তবে আক্রমনের প্রথম ধাক্কা সামলে নিয়ে ন্যাটো ও আফগান বাহিনী সংগঠিত হয়ে হামলাকারীদের অবস্থান লক্ষ করে অভিযান শুরু করে। তালেবানদের অবস্থান নেওয়া ভবনগুলোর নিয়ন্ত্রন নিতে চেষ্টা চালায় তারা। তালেবানদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে এসময় আফগান পুলিশের সঙ্গে এসে যোগ দেয় মার্কিন সেনারা।
রোববার সারারাত ধরে শোনা যায় গোলগুলির আওয়াজ। হামলার দ্বিতীয় দিন সোমবার সকালেও ভারী মেশিনগান ও রকেট বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন কাবুলের বাসিন্দারা।
অন্যান্য স্থানে লড়াই বন্ধ হলেও শেষ পর্যন্ত লড়াই চলে পার্লামেন্ট ভবনে। ভবনের বিপরীতে একজন তালেবান যোদ্ধা অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যান। তবে সোমবার সকালে তার মৃত্যুতে কাবুলের লড়াই আপাতত শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আফগান পুলিশের মুখপাত্র হাসমাতুল্লাহ সানিকজাই।
এদিকে হামলাচলাকালীন সময়েই তালেবানরা জানায়,এই আক্রমন তাদের বসন্তকালীন লড়াইয়ের সূচনা। রোববারের হামলায় উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক আত্মঘাতী হামলাকারী অংশ নেয় বলেও বিবৃতিতে জানায় তারা।
রাজধানী কাবুলের ওপর এই হামলা আফগানিস্তানে ২০০১ সালে পরিচালিত মার্কিন অভিযানের পর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
আফগানিস্তানে মোতায়েন ন্যাটো নেতৃত্বাধীন ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্স বা আইসাফের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, কাবুলের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব এখনও তাদের পৌঁছেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে তাদের কর্মীরা সবাই নিরাপদ আছেন।
হামলার প্রধান লক্ষবস্তু জার্মান এবং ব্রিটিশ দূতাবাস ছিলো বলে জানিয়েছে তালেবান। এর পাশাপাশি কাবুলে অবস্থিত ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বাহিনীর স্থাপনাও তাদের হামলার অন্যতম লক্ষবস্তু ছিলো।
কাবুল হামলায় অংশ নেওয়া ১৯ আত্মঘাতী হামলাকারী হয় নিজেদের উড়িয়ে দিয়েছেন অথবা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানায় তারা। তবে নিরপেক্ষভাবে এর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
গত বছরের সেপ্টেমবারেও তালেবানরা কাবুলে অনুরুপ হামলা পরিচালনা করে। সে সময় তারা কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন লক্ষবস্তুতে হামলা চালায়।
রোববারের হামলার সময় এক ব্রিটিশ কুটনীতিকের বাড়ির সদর দরজায় রকেট বিস্ফোরিত হয়। এর পাশাপাশি ব্রিটিশ দূতাবাসের গার্ড টাওয়ারেও দুটি রকেট আঘাত করে।
কাবুলের ন্যাটো বাহিনীর বিভিন্ন অবস্থান থেকেও রাতভর গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গেছে। জার্মান দূতাবাসের পাশে অবস্থিত কাবুলের একটি জনপ্রিয় সুপার মার্কেট এলাকায় তিনটি রকেট আঘাত করে। এই সুপার মার্কেটটি কাবুলে বসবাসরত বিদেশীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
কাবুলের পশ্চিমে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবন লক্ষ করেও হামলা হয়। এর পাশাপাশি রাশিয়ান দূতাবাসেও একটি রকেট আঘাত করে। একই সঙ্গে তালেবানরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ এবং ইরানি দূতাবাসের অদূরে অবস্থিত কাবুল স্টার হোটেল কমপ্লেক্স ভবনেও হামলা চালায়।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে একই সঙ্গে তালেবান হামলা চলে রাজধানী কাবুলের বাইরেও। রোববার লোগার প্রদেশের সরকারি ভবন, জালালাবাদ শহরের বিমান বন্দর এবং পাকতিয়া প্রদেশের গারদেজ শহরের পুলিশি স্থাপনা লক্ষ করে হামলা চালায় তালেবান।
কাবুলের বাইরে ন্যাটোর হেলিকপ্টার গানশিপ পাকতিয়া প্রদেশের জালালাবাদ শহরে তালেবানদের অবস্থান নেওয়া একটি ভবন লক্ষ করে হামলা চালায়।
তালেবানরা জালালাবাদ শহরে বিদেশী বাহিনীর একটি ঘাঁটি লক্ষ্য করেও হামলা চালায়। এছাড়াও শহরের নিকটবর্তী বিমান বন্দর থেকেও বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বাংলাদেশ সময়:১১০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১২
সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর