ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভবনে ভবনে কাঁপুনি, চারদিকে চিৎকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
ভবনে ভবনে কাঁপুনি, চারদিকে চিৎকার

সোমবার (৬ জানুয়ারি) ভোর সোয়া চারটা। নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন দক্ষিণ তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ শহরের বাসিন্দা এরডেম।

হঠাৎ ঘুম ভাঙে তার। পুরো বাড়ি দুলছিল এ সময়। বুঝতে পারছিলেন না কি করবেন।

বাড়ির ক্ষতি হলেও অক্ষত আছেন এরদেম। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কিছু সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন। এরদেম বলেন, ৪০ বছরের জীবনে আমি এমন ভূমিকম্প কখনও দেখিনি, অনুভব করিনি। অন্তত তিনবার জোরালো কাঁপুনি অনুভব করেছি আমি। যেন খাঁচার ভেতর কোনো শিশু বন্দি, তাকে ঝাঁকানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রচণ্ড কাঁপুনির মধ্যেও লোকজন তাদের গাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তারা পালাতে চেয়েছিল। যেন কল্পনার রাজ্যে বাস করছি, গাজিয়ান্তেপের একজনও এখন তাদের বাড়িতে নেই।

গাজিয়ান্তেপ থেকে ১৩০ মাইল পশ্চিমে আদানা শহরে বসবাস করেন নিলুফার আসলান। একটি ভবনের পঞ্চম তলার অ্যাপার্টমেন্টে পরিবারসহ থাকেন তিনি। ভূমিকম্পের তার অ্যাপার্টমেন্টটি ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে ওঠে।

নিলুফার বলেন, আমি আমার জীবনে এমন কিছু আগে দেখিনি। প্রায় এক মিনিটের মতো সময় ধরে আমরা দোল খাচ্ছিলাম। আমার মন বলছিল যেন আমি পরিবারকে বলি, এসো আমরা এক জায়গায় আসি, একসাথে মরে যাই।

ভূ-কম্পন থামার পর নিলুফার তার পরিবারকে নিয়ে দ্রুত বাইরে আসেন। তারা পালাতে চাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, আমি নিজের সঙ্গে কিছু নিতে পারিনি, না আমার পরিবার। আমি শুধু স্লিপার পরে বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। তাকিয়ে দেখছিলাম, চারটি ভবন ধসে পড়েছে। বাকিগুলোর অবস্থাও খারাপ।

আদানা শহরের ৩০০ মাইল পূর্বে দিয়ারবাকিরে শহর। সেখানেও ভূমিকম্পের আঘাতে বহু ঘর বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। লোকেরা হতাহত হয়েছে। উদ্ধারকারীরা স্থানীয়দের সাহায্যের জন্য রাস্তায় রাস্তায় জড়ো হচ্ছিল। মুহিতিন ওরাক্কি নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, তিনি চারদিক থেকে শুধু চিৎকার শুনছিলেন। রাস্তার ওপর, ধরে পড়া বাড়ির ভেতর থেকে তিনি চিৎকার শুনছিলেন।

মুহিতিন বলেন, প্রথমে আমি কিছু ভাবতে পারিনি। পরে মনে হলো আমার শহরের মানুষ মারা যাচ্ছে। আমি খালি হাতেই পাথর সরাতে শুরু করলাম। আমার বন্ধুরা আহত হয়েছিলেন। আমি তাদের ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনতে লাগলাম। তখনও চারপাশ থেকে চিৎকার হচ্ছিল। একটা সময় দেখি উদ্ধারকারীরা আসছে।

তিনি যে সময় এ কাজ করছিলেন, শহরের একটি অংশে তার পরিবার ভবন ধসে চাপা পড়েন। মুহিতিন বলেন, আমার বোন, তার স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ি ও তিন সন্তান চাপা পড়েছিল।

তুরস্ক ছাড়াও সিরিয়ার উপকেন্দ্র থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে আলেপ্পোয় প্রচুর ভবন ধসে পড়েছে। আহত হয়েছেন বহু, মারা গেছেন এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জন। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জিয়াদ হাগে তাহা বলেছেন, ভূমিকম্পের পর লোকেরা ঢেউয়ের মতো হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন।

তুরস্কে পরপর দুটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে। প্রথমটি সকালে, রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরও কয়েকটি কম্পন টের পাওয়া গেছে। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২৪ মিনিটে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে।

প্রথমটির কেন্দ্রস্থল ছিল তুরস্কের শহর গাজিয়ান্তেপে। দ্বিতীয় ভূ-কম্পনটির কেন্দ্রস্থল গাজিয়ান্তেপ শহরের উত্তরে ৮০ মাইল দূরে এলবিস্তানে।

তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেছেন, দুপুরে যেটি আঘাত হেনেছে সেটি আফটারশক (ভূমিকম্পের পরবর্তী কম্পন) নয়। এটি সকালেরটি থেকে আলাদা। সকালে যেটি হয়েছিল, সেটির আঘাতে এলবিস্তান প্রদেশে ৭০ জনের প্রাণহানি ঘটে।

তুরস্ক ও সিরিয়ায় অন্তত এক হাজার ৪৭২ জন নিহত হয়েছেন ভূমিকম্পে। আহত হয়েছেন হাজারো নাগরিক।

সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।