ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ আশ্বিন ১৪৩২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

বিন লাদেন নিহতের বর্ষপুর্তি: পাকিস্তানজুড়ে সতর্কতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১৫, মে ২, ২০১২
বিন লাদেন নিহতের বর্ষপুর্তি: পাকিস্তানজুড়ে সতর্কতা

ঢাকা : আজ ২ মে, গত বছরের এই দিনে মার্কিন বিশেষ বাহিনী সিলের অভিযানে নিহত হন আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন। নেতাকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে মৃত্যুবার্ষিকীতে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় দেশজুড়ে সতর্কাবস্থা জারি করেছে পাকিস্তান।



পাকিস্তানের গ্যারিসন শহর অ্যাবোটাবাদের একটি কম্পাউন্ডে প্রায় পাঁচ বছর ধরে বসবাস করতেন বিন লাদেন। আর পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই ২ মে অভিযান চালিয়ে তাকে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী।

এরপরই প্রশ্ন ওঠে; পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে কী করে এতোদিন নিশ্চিন্তে বসবাস করলেন বিন লাদেন।   এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান কূটনৈতিক পর্যায়ে টানাপোড়েন তখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল।

আবার পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন সামরিক অভিযান পরিচালনা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয় পাক রাজনীতিতে। এতে করে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব জলাঞ্জলী দেওয়া হয়েছে বা যুক্তরাষ্ট্র তাদের সার্বভৌমত্বকে উপেক্ষা করেছে এমন বিতর্ক এবং জনগণের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কৌশলগত মিত্রতার সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়ে।

তবে গ্যারিসন শহরে ওসামা বিন লাদেনের মতো ব্যক্তির পাঁচ বছর অবস্থান গোয়েন্দা সংস্থার অগোচরে থাকা নিয়ে প্রশ্নের জবাব কিন্তু আজও মেলেনি। এটা কি পাকিস্তানের গোয়েন্দা ব্যর্থতা না আল কায়েদার সঙ্গে তাদের কোনো জটিল সম্পর্কের ইঙ্গিতবহ- এসব প্রশ্ন এখনো বারবার উচ্চারিত হচ্ছে।

এদিকে বিন লাদেনের মৃত্যুর পর আল কায়েদার নেতৃত্ব নেওয়া আইমান আল জাওয়াহিরি এবং আফগান তালেবানের নেতা মোল্লা ওমর পাকিস্তানেই রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জন ব্রেনান দাবি করেছেন, আইমান আল জাওহারিরি পাক-আফগান সীমান্তে উপজাতীয় এলাকায় রয়েছেন।

বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর এ ‘হত্যাকাণ্ডের’ প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল তালেবানের একটি অংশ। এ ঘোষণার পর আফগানিস্তানে মার্কিন নাগরিক ও স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে একাধিক হামলাও হয়েছে।

এর ধারাবাহিকতায় সবচে ভয়াবহ হামলাটি হয়েছে গত মাসে কাবুলে পশ্চিমা দূতাবাস লক্ষ্য করে। গত দশ বছরের মধ্যে কোনো সমন্বিত হামলার মধ্যে এটিই সবচে বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। এ হামলার জন্য দায়ী করা হয় সিরাজুদ্দিন হাক্কানির নেতৃত্বাধীন হাক্কানি নেটওয়ার্ককে। যদিও এ হামলার ‘কৃতিত্ব’ দাবি করেছে তালেবান।

হাক্কানি নেটওয়ার্ক মূলত আফগান সীমান্তে উপজাতীয় এলাকাভিত্তিক সংগঠন। এ অঞ্চলে তালেবান নেতা হাকিমুল্লাহ মেহসুদও থাকতেন বলে ধারণা করা হয়।

২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার প্রধান হোতা বলে বিবেচিত হাফিজ সাইদকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য গত মাসে ওয়াশিংটন এক কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। অথচ তিনি পাকিস্তানে প্রকাশ্যেই ঘুরাফেরা করছেন। অপরদিকে জাওয়াহিরির মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার।

পাকিস্তানের আচরণে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, দেশটি তালেবান এবং আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গি গ্রুপগুলোর প্রতি নমনীয় আচরণ করছে। এমনকি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র সঙ্গে তাদের গোপন যোগাযোগ রয়েছে এমন দাবিও করেন অনেকে। বিশেষ করে বিন লাদেন পাকিস্তানে আশ্রিত ছিলেন এমনটিই ধারণা অনেক বিশ্লেষকের।

কিন্তু এরপরও আল কায়েদা মৃত্যুবার্ষিকীতে ব্যাপক ভিত্তিক হামলার আশঙ্কা করছেন পাক কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে বুধবার সারাদেশে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য এর মধ্যে পাকিস্তান তালেবান হামলার শিকার হয়েছে। গত বছর একটি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আত্মঘাতী হামলায় প্রায় একশ’ জন নিহত হয়।

এ কারণেই ২ মে’র এই বিশেষ দিনে নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে না পাকিস্তান।

সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী কঠোরভাবে নজরদারি করছে। ইসলামাবাদে পশ্চিমা দূতাবাসগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পশ্চিমা নাগরিকদের জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। দূতাবাসের স্টাফদের আগামী ৫ মে পর্যন্ত বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে বা বাজারে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

এর মধ্যে গত সপ্তাহে বেলুচিস্তানের কোয়েটায় অপহৃত এক ব্রিটিশ ত্রাণকর্মীর মুণ্ডবিহীন লাশ পাওয়া গেছে। একারণে এই মুহূর্তে পাকিস্তানকে বিদেশিদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১২
সম্পাদনা: জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।