ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি দিনব্যাপী বাণিজ্য আলোচনায় অংশ নিয়েছে। এর মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি নিয়ে স্থবির হয়ে পড়া আলোচনা আবারো শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
মার্কিন বাণিজ্য আলোচক ব্রেন্ডন লিঞ্চের নেতৃত্বে একটি দল দিল্লিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছে।
তবে ভারত জানিয়েছে, এটি আনুষ্ঠানিক আলোচনার নতুন রাউন্ড নয়, বরং একটি ‘সমঝোতার পথ খোঁজার আলোচনা’।
ট্রাম্প প্রশাসনের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা আটকে যায়। রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য ভারতের ওপর এক প্রকার শাস্তি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নয়াদিল্লি এই শুল্ককে ‘অন্যায্য’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
এই বিপুল শুল্ক হার এবং ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তাদের কড়া সমালোচনা দুই মিত্র দেশের সম্পর্ক দ্রুত অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ভারত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পোশাক, চিংড়ি, রত্ন ও অলঙ্কার রপ্তানি করে। শুল্কের কারণে উৎপাদন ও জীবিকায় এরইমধ্যেই প্রভাব পড়েছে। সেই কারণে মঙ্গলবারের ভারত–মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠক খুব গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।
ভারতের পক্ষ থেকে আলোচনার নেতৃত্ব দেওয়া রাজেশ আগারওয়াল স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এটি আনুষ্ঠানিক আলোচনা নয়, তবে অবশ্যই বাণিজ্য আলোচনা। কীভাবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তি করা যায়, তা দেখার একটি আলোচনা।
গত মাসে ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর এবং ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধে অস্বীকৃতির কারণে আলোচনার একটি রাউন্ড বাতিল করা হয়।
কয়েকদিন ধরে এমনটা শোনা যাচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা কিছুটা নমনীয়তা দেখাচ্ছেন এবং ভারত নিশ্চিত করেছে যে আলোচনা চলমান।
সোমবার, মার্কিন বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো সিএনবিসিকে বলেন, ভারত আলোচনার টেবিলে এসেছে। দেখা যাক কীভাবে এগোয়। নাভারো দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের সমালোচনা করে আসছেন। তিনি রাশিয়ার চলমান যুদ্ধকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘যুদ্ধ’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
কদিন আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ‘দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাধা কাটিয়ে আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে। ’ জবাবে মোদী বলেন, দুই দেশ ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং প্রাকৃতিক অংশীদার। ’
ট্রাম্প মনোনীত পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত সার্জিও গোরও বলেছেন, বাণিজ্য চুক্তি ‘পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে সমাধান হবে। ’ তিনি বলেন, ‘চুক্তির বিষয়ে আমরা এখন খুব দূরে নই। আসলে তারা চুক্তির সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় রয়েছে। ’
তবে কীভাবে দুই দেশ মূল বিরোধ মেটাবে, যা আগে বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর হওয়া রোধ করেছিল, তা এখনও দেখা বাকি।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের কৃষি বাজারে প্রবেশাধিকার চাইছে, কারণ এটি বড় একটি সম্ভাবনাময় বাজার। কিন্তু ভারত নিরাপত্তার জন্য এবং ছোট কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কারণে এটিকে রক্ষা করছে।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক গত সপ্তাহে প্রশ্ন তোলেন, ১৪০ কোটি মানুষের দেশ কেন এক মুঠোও মার্কিন শস্য কিনবে না? তবে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি বাজার খোলার জন্য চাপ মেনে নেওয়া ঠিক হবে না, কারণ এতে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
আরএইচ