ঢাকা : বিশ্বে প্রতি বছর এক কোটি ৫০ লাখ শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্ম নিচ্ছে। এদের মধ্যে ১০ লাখ শিশু জন্মের পর খুব দ্রুতই মারা যায়।
বিশ্বের ১৮৪টি দেশে পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে ‘দ্য বোর্ন টু সুন’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরিতে অবদান রেখেছে জাতিসংঘের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিইএইচও) ৪৪টি সংগঠন।
প্রতিবেদনে মায়ের গর্ভধারণের কারণে শেষ রজঃস্রাবের পর ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের অপরিণত শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর যেসব শিশু গর্ভে পুরো ৪০ সপ্তাহ অবস্থানের পর জন্ম নেয় সেসব শিশুকে পরিণত বলা হয়েছে।
প্রথমবারের মতো অপরিণত শিশুদের ওপর তৈরি এ প্রতিবেদনে আফ্রিকা মহাদেশেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যেও এ হার উদ্বেগজনক, সেখানে প্রতি বছর ৬০ হাজার শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়। সে হিসেবে ব্রিটেনে ৮ শতাংশ শিশুর অপরিণত অবস্থায় জন্ম হয়। আর এ হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও এদেশে এ সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে- স্থূলতা এবং বেশি বয়সে গর্ভধারণ।
অপরিণত শিশুদের জন্য দাতব্য প্রতিষ্ঠান ব্লিসের অ্যান্ডি কোল বলেছেন, ‘ব্রিটেনের জন্য এ হার বড় উদ্বেগের বিষয়। এখানে অপরিণত শিশু জন্মের হার সুইডেন, নরওয়ে এবং আয়ারল্যান্ডের মতো দেশের চেয়ে বেশি। এর জন্য সুসমন্বিত এবং উন্নত মানের মাতৃসেবা নিশ্চিত করতে হবে। ’
অপরিণত শিশুর জন্মহারের দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা শীর্ষ ১০ দেশ হলো- ভারত, চীন, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, কঙ্গো এবং ব্রাজিল।
এদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সংক্রমণ, এইচআইভি/এইডস এবং ম্যালেরিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ এবং পুষ্টিহীনতাকে প্রতিবেদনে অপরিণত শিশু জন্মের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তবে উন্নত দেশগুলোয় এ সমস্যার কারণগুলো সম্পূর্ণ আলাদা। এসব দেশে বেশি বয়সে সন্তান ধারণ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং টেস্টটিউব বেবি পদ্ধতিতে সন্তান নেওয়ার ফলে অনেক সময় একসাথে একাধিক সন্তানধারণের কারণে অপরিণত শিশুর জন্মহার বাড়ছে।
এছাড়া, প্রয়োজন ব্যতিরেকেই সময় হওয়ার আগেই অস্ত্রোপচার করে (সিজার) সন্তান প্রসব করানোও অপরিণত শিশু জন্মহার বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ।
জরিপে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ১১টি দেশে সময়ের অনেক আগে জন্ম হয় ১৫ শতাংশ শিশুর। এর মধ্যে আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের দু’টি দেশ রয়েছে। তবে এ সমস্যা সারা বিশ্বেই উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরিণত এসব শিশু জন্মের পর চোখ ও কানের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগে। বিশ্বে শিশু মৃত্যুর বড় কারণ অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়ার পর নিউমোনিয়া।
তবে এসব সমস্যা সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব বলে উল্লেখ করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। অনেক দেশ যেমন- ইকুয়েডর, বতসোয়ানা, তুরস্ক, ওমান এবং শ্রীলঙ্কা তাদের নবজাতক মৃত্যুহার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। শুধু সংক্রমণ এবং শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে তারা এতোটা সফল হয়েছে।
দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ শিশু যারা আট সপ্তাহ আগে জন্ম নেয় তারা খাদ্যাভাব, উষ্ণতা এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের অভাবে মারা যায়।
এর মধ্যে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে যে দেশটি অপরিণত শিশু জন্মের দিক থেকে শীর্ষ দশের মধ্যে আর এসব শিশু মৃত্যুর দিক থেকে ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে। এদেশে খুব কার্যকর নিবিড় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা না থাকা বা তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়াই এর অন্যতম কারণ।
অপরিণত শিশু মৃত্যুহার ঠেকাতে জাতিসংঘ স্বাস্থ্যবিভাগ কিছু সুপারিশ করেছে, যেমন- নাড়িতে সংক্রমণ প্রতিরোধে এন্টিসেপটিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, মাকে ভ্রুণের ফুসফুস বৃদ্ধিতে সহায়ক স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া যার জন্য খরচ মাত্র এক ডলার এবং গর্ভবতী মাকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে এন্টিবায়োটিক দেওয়া।
তারা ‘ক্যাঙ্গারু কেয়ার’ এর সুপারিশ করেছেন। এর ফলে - নবজাতককে মায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থানে রাখা যায়। এতে শিশুর শরীরে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়, শরীর উষ্ণ থাকে এবং মায়ের দুধ পানে সহায়ক হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১২
সম্পাদনা: শামসুন নাহার, নিউজরুম এডিটর/ জাহাঙ্গীর আলম