ঢাকা: পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর নতুন করে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে গ্রিসের রাজনৈতিক অঙ্গনে। কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচির পক্ষে বিপক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র মতবিরোধের কারণে অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুকঁতে থাকা দেশটির সরকার গঠন প্রক্রিয়া নতুন করে অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়েছে।
রোববারে অনুষ্ঠিত গ্রিসের পার্লামেন্ট নির্বাচনে কোনো দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। মতাদর্শের দিক থেকে সমমনা দলগুলোও কৃচ্ছ্রতা নীতি নিয়ে নিজেদের মধ্যেই বিভক্ত। এই পরিস্থিতিতে নতুন নির্বাচন গ্রীসকে কঠিন রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি করেছে।
একদিকে কোনো দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি, আবার মতের মিল না হওয়ার কারণে সমমনা দলগুলোও একত্রিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারছে না। ফলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই একটি নতুন নির্বাচন প্রায় নিশ্চিতভাবেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো গ্রিসের বামপন্থি দলগুলোর উত্থান। অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভারাক্রান্ত গ্রিসের জনগণ প্রধান দুটি দলের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে বামপন্থিদের ব্যাপক ভাবে বিজয়ী করেছে ।
বামপন্থি দলগুলো ইতিমধ্যেই বর্তমান কঠোর কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। প্রধান দলগুলো সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ার পর কৃচ্ছ্রতা বিরোধী বামপন্থি নেতারাই এখন সরকার গঠনের জন্য দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন। কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচি বিরোধী একটি সরকার গঠনই তাদের প্রধান লক্ষ। তবে এছাড়া অন্য কোনো পথও খোলা নেই তাদের সামনে। কারণ কৃচ্ছ্রতা বিরোধী অবস্থানের প্রতিশ্রতি দিয়েই নির্বাচনে অংশ নেয় তারা।
অ্যালেক্সিস সিপরাসের নেতৃত্বাধীন বামপন্থি সিরিযা পার্টি পার্লামেন্টের ৫২টি আসন লাভ করে নাটকীয় ভাবে গ্রিসের দ্বিতীয় বৃহত্তম দলে পরিণত হয়েছে। তারা ইতিমধ্যেই ঘোষনা করেছে সরকার গঠনের লক্ষ্যে যে কোন সমঝোতার আগে ইইউ এবং আইএমএফের প্রনীত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
সিপরাস বলেন , ‘গ্রিসের জনগণ রোববারের ভোটে ইইউ এবং আইএমএফ প্রনীত অর্থনীতি পুনুরুদ্ধার কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ’ কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচিকে সমর্থন করার জন্য দেশের প্রধান দুটি দল থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গ্রিসের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল মধ্য ডানপন্থি নিউ ডেমোক্রেসি পার্টি এবং মধ্যবাম পাসোক পার্টি উভয়ই গ্রিসের জন্য প্রনীত ইইউ এবং আইএমফের দ্বিতীয় দফা কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচির ওপর সমর্থন জানিয়েছিলো। তবে এবারের নির্বাচনে উভয় দলই প্রত্যাশিত ফলাফল করতে ব্যর্থ হয়।
দুইটি বেইলআউট কর্মসুচির বিপরীতে গ্রিসকে শর্ত হিসেবে সরকারি পেনশন এবং অন্যান্য সামাজিক সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিতে হবে। পাবলিক সেক্টরের হাজার হাজার চাকরি বিলুপ্ত করার পাশাপাশি জনগণের ওপর রাষ্ট্রীয় করও বৃদ্ধি করতে হবে গ্রিসকে।
তবে নতুন কৃচ্ছ্রতা প্রস্তাব বাস্তবায়ন না করলে গ্রিসকে ইউরো জোনের একক মুদ্রা ব্যবস্থা ইউরোর বাইরে চলে যেতে হতে পারে।
সিরিযা পার্টির নেতৃত্বে জোট সরকার গঠনের আশা দূর হয় যখন নিউ ডেমোক্রেসি দলের নেতা অ্যানটোনিস সামারাস ‘বেইল আউট’ কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি সর্তক করে দিয়ে বলেন এ ধরনের পদক্ষেপ তার দেশকে ইউরোর বাইরে নিয়ে যাবে। তিনি একে আগুন নিয়ে খেলার সামিল বলেও উল্লেখ করেন।
রোববারে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে গ্রিসের কমিউনিস্ট কেকেই ২৬ আসন, সিরিজা পার্টি পেয়েছে ৫২ আসন, ডেমোক্রেটিক লেফট ১৯ আসন, প্যাসোক পার্টি ৪১ আসন, নিউ ডেমোক্রেসি ১০৮ আসন, ইনডেপেন্ডেন্ট গ্রিস ৩৩ আসন এবং ফ্যাসিস্ট গোল্ডেন ডন পার্টি লাভ করেছে ২১ আসন।
নির্বাচনের পর প্রথমে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া নিউ ডেমোক্রেসি পার্টির প্রধান অ্যান্তোনিস সামারাসকে সরকার গঠনের জন্য আহবান জানানো হয়। তবে সরকার গঠনে তার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে বলে সোমবার স্বীকার করে নেন সামারাস।
সামারাসের ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের নেতা সিপরাসকে মঙ্গলবার সরকার গঠনের জন্য তিনদিনের সময় দেওয়া হয়। তিনি এখনও সরকার গঠনের ব্যাপারে আশাবাদী। পাসোক নেতা ইভানজেলোস ভেনিজেলোস এবং নিউ ডেমোক্রেসি পার্টির নেতা সামারাসের সঙ্গে বুধবার বিকেলের দিকে তিনি দেখা করবেন। সরকার গঠনে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি তাদের প্রতি পুনরায় আহবান জানাবেন।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো জোটই ৩০০ আসনের পার্লামেন্টে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষন হবে না বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। পরিস্থিতি চূড়ান্তভাবে অচলাবস্থার দিকে এগিয়ে গেলে আবারও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেখা যেতে পারে গ্রিসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১২
সম্পাদনা:রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর