ঢাকা: চীনের কুখ্যাত চোরাচালান চক্রের মূল হোতা লাই চ্যাঙসিঙকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছে দেশটির একটি আদালত। সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদসংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, সরকারকে শত শত কোটি ডলার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে অবৈধভাবে আমদানি ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তি প্রদান করে ফুজিয়ানের একটি আদালত।
৫৩ বছর বয়সী এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদান এবং বিভিন্ন ধরণের বিলাসবহুল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চীনে আমদানি করার অভিযোগ আনা হয়। লাইয়ের চোরাচালানকৃত পণ্যের মধ্যে সিগারেট থেকে শুরু করে বিলাসবহুল গাড়ি পর্যন্ত অর্ন্তভুক্ত ছিলো।
তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলে তিনি ১৯৯৯ সালে কানাডায় পালিয়ে যান। পরবর্তী ১২ বছর তিনি কানাডায় থাকতে সক্ষম হলেও ২০১১ সালে তাকে চীনের হাতে সমর্পণ করে কানাডীয় কর্তৃপক্ষ।
তবে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হবে না, এই আশ্বাসের পরই তাকে চীনের হাতে সমর্পণ করে কানাডা। চীনে ফেরত পাঠানো হলে তাকে হত্যা করা হবে বলে এর আগে দাবি করেন অভিযুক্ত লাই।
চীনের বন্দরনগরী সিয়ামেনেই মূলত চোরাচালান চক্র পরিচালনা করতেন লাই। বিলাসবহুল জীবন যাপনে অভ্যস্ত লাই ব্যবহার করতেন অভিজাত বুলেট প্রতিরোধী মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চীনে মালামাল আমদানি করতেন। চোরাচালান চক্র পরিচালনার জন্য তিনি বহু কর্মকর্তাকে নিয়মিত ঘুষ প্রদান করতেন। এভাবে এক’শ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থের মালিক হন তিনি।
কর্তৃপক্ষ জানায় তার বিলাসবহুল ভিলাতে নিয়মিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মদ ও মেয়ে মানুষ দিয়ে আপ্যায়ন করতেন তিনি। চীন সরকারের উচ্চ পর্যায়েও তার যোগাযোগ ছিলো বলে ধারণা করা হয়। এমনকি ক্ষমতাসীন দল এবং সামরিক বাহিনীর শীর্ষ অনেকের সঙ্গেই তার সম্পর্ক ছিলো বলে জানা যায়। তবে কর্তৃপক্ষের হাতে তার চোরাচালান চক্র ধ্বংস হয়ে গেলে তিনি সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে কানাডা পালিয়ে যান। চীনে ফেরত যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে সেখানে দীর্ঘ আইনী লড়াই চালিয়ে যান তিনি।
সিয়ামেনের পিপলস কোর্টে তার সাজা ঘোষণা করা হয়। এই নগরীই ছিলো তার চোরচালান চক্রের মূল ক্ষেত্র। যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণার পাশাপাশি আদালত তার সকল সম্পত্তিকেই বাজেয়াফত করে সরকারের হেফাজতে নেওয়ারও নির্দেশ দেন।
লাই সরকারকে প্রায় ২২১ কোটি ডলারের শুল্ক থেকে বঞ্চিত করেন বলে রায় ঘোষণার সময় জানায় আদালত। এর আগে লাইয়ের প্রায় তিনশ সহযোগীকে এই চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন সময় শাস্তির সম্মুখীন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১২
সম্পাদনা:রাইসুল ইসলাম,নিউজরুম এডিটর