ঢাকা: ব্রিটেনের চাকরির বাজার তরুণ ও যুবকদের জন্য দিন দিন রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি পরিচালিত একটি জরিপে এই তথ্য উঠে আসে।
তবে সবক্ষেত্রে তরুণদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়ত সঠিক নয়। তরুণরা অভিযোগ করছে রাষ্ট্র ও সমাজ তাদের প্রতি মনোযোগী নয়। জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ তরুণই অভিযোগ করেছে যুক্তরাজ্যের বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতির বিরুদ্ধে। তাদের মতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যুগোপযোগী ও প্রায়োগিক শিক্ষা দিচ্ছে না তাদের। ফলে কর্মক্ষেত্রে ভালো চাকরি পাওয়ার প্রতিযোগিতায় পদে পদে পিছিয়ে পড়ছে তারা। এমনকি সরকারও তাদের দুর্দশা মোচনে এগিয়ে এসে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করছে তারা।
সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক ফিউচারভার্সিটি নামের একটি সংস্থা ব্রিটেনের বর্তমান চাকরি বাজার ও এবং ক্যারিয়ার নিয়ে তরুণ প্রজন্মের ভাবনার ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। তরুণদের ওপর পরিচালিত দু’টি জরিপে উপরের চিত্র বের হয়ে আসে।
জরিপ প্রসঙ্গে ফিউচারভার্সিটির অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক লন্ডনের বেথনাল গ্রিন থেকে নির্বাচিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য রুশানারা আলি বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের সবাই যে অলস তা নয়। তবে তাদেরকে আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে। একই সঙ্গে তাদেরকে লক্ষ্যের প্রতি আরো দৃঢ়সঙ্কল্প হতে হবে। কারণ বর্তমান প্রজন্মের সামনে অনেক প্রতিবন্ধকতা। ’
প্রথম জরিপে লন্ডনে বসবাসরত ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী ১ হাজার কিশোর-তরুণের মতামত নেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, ৫৩ শতাংশ ছেলেমেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মত সামর্থ্য নেই। চাকরি বাজারের দুরাবস্থার ফলে ৬৩ শতাংশ তরুণের ধারণা তারা কখনোই তাদের পেশাগত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবেন না।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ তরুণই রাজনীতিবিদ ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। এসব তরুণের প্রায় ৮৬ শতাংশ মনে করে, রাজনীতিবিদরা তরুণদের বোঝেনা এমনকি তাদেরকে সাহায্যও করতে চায় না। ৬৪ শতাংশের মতামত হচ্ছে, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলি তরুণদের সাহায্য করার ব্যাপারে মোটেই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে না। চাকরি খুঁজতে গেলেই তারা আর চাকরি পায় না বলেও অভিযোগ করেছে ৬০ শতাংশ।
বেকারদের ব্যাপারে উপযুক্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা এবং চাকরির বাজারে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি না হওয়ায় ব্রিটেনে প্রতি ৫ জনে ২ জন তরুণই চাকরির ব্যাপারে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া প্রত্যাশার চেয়ে অনেক নিচের স্তরের চাকরিতেই আটকে থাকতে বাধ্য হবে- এমন চিন্তাও তাদের আচ্ছন্ন করছে বলে জানিয়েছে ৫৭ শতাংশ তরুণ।
বর্তমান প্রজন্ম সম্পর্কে বয়স্ক ব্রিটিশ নাগরিকদের মনোভাব জানতে পরিচালিত পৃথক এক জরিপে প্রায় ২ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক ব্রিটিশ নাগরিকের মতামত নেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, ৮৫ শতাংশের বিশ্বাস, বর্তমান প্রজন্মের জন্য আগামী দিনগুলো অনেক কঠিন হবে। বর্তমান প্রজন্ম আর ২০ বছর আগের প্রজন্মের মাঝে পার্থক্য ব্যাপক।
তাদের মধ্যে প্রতি ৪ জনে ১ জন বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের অলস হিসেবে অভিহিত করেছেন। অপরদিকে প্রতি ৩ জনে ১ জন বলছেন, এদের মাঝে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতার অভাব রয়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকেরও বেশি লোকের মনে করেন আজকের প্রজন্মের মাঝে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজ করছে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিও বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে বলে উঠে আসে জরিপে।
তবে তরুণদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তা করতে ইতিমধ্যেই ফিউচারভার্সিটির মত বেশ কিছু সংগঠন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। তরুণদের জন্য ফিউচারভার্সিটি চালু করেছে বেশকিছু ফ্রি কোর্স। এসব কোর্সের মাধ্যমে তরুণদের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করা হয়। এছাড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী কিশোর-তরুণদের প্রতি সরকারের আরো অধিক দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১২
সম্পাদনা: শামসুন নাহার ও রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর