ঢাকা, বুধবার, ১ আশ্বিন ১৪৩২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

লাল সালাম হো চি মিন

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১৪, মে ১৯, ২০১২
লাল সালাম হো চি মিন

ঢাকা: ভিয়েতনাম মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী নেতা কমরেড হো চি মিনের ১২৩তম জন্মদিন শনিবার।

১৮৯০ সালের ১৯ মে সেই সময়কার ইন্দোচীনের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে হো চি মিনের জন্ম হয়।

ছোটবেলায় তার নাম ছিল নুয়েন সিন কুঙ। কিন্তু দেশের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসায় পরে তিনি পরিচিত হন নুয়েন আই কুয়োক (দেশপ্রেমিক নুয়েন) নামে। আরো পরে তার নাম হয় হো চি মিন বা আলোর দিশারী।

ভিয়েতনাম, লাওস এবং কাম্বোডিয়া নিয়ে গঠিত ইন্দোচীনে তখন ছিল ফরাসী উপনিবেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফরাসী সাম্রাজ্যবাদীদের হটিয়ে সেখানে আসে জাপান। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের আত্মসমর্পণের সুযোগে পুনরায় দেশটি দখলে নেয় ফ্রান্স এবং সর্বশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

যুবক নুয়েন আই কুয়োককে জীবিকা অন্বেষণের কাজে ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল ইউরোপ, আমেরিকা এবং আফ্রিকার বিভিন্ন বন্দরে। পরে বেশ কিছু সময় তিনি কাটান ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সে। দেশের পরাধীনতার জ্বালা যুবক নুয়েনকে তাড়িয়ে বেড়াতো প্রবাস জীবনেও।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি যখন ফ্রান্সে বসবাস শুরু করেন, ঠিক তখনই তিনি ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হন মার্কসবাদী-লেনিনবাদী মতাদর্শে।

কিভাবে তিনি লেনিনবাদের প্রতি আকৃষ্ট হলেন, হো চি মিন নিজেই তা লিখেছেন- `গোড়ার দিকে, সাম্রাজ্যবাদ নয়, দেশপ্রেমই আমাকে লেনিন ও তৃতীয় আন্তর্জাতিকের প্রতি বিশ্বাসী করে তুলেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সংগ্রামে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ অধ্যয়ন আর তার পাশাপাশি বাস্তব কার্যকলাপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমি এই সত্যকে উপলব্ধি করতে পারি যে, কেবলমাত্র সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদই সমস্ত বিশ্বের নিপীড়িত জাতি এবং শ্রমজীবী জনগণকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে পারে। (যে পথ আমাকে লেনিনবাদের দিকে নিয়ে যায়)।

১৯২০ সালে তিনি ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। পরে তারই উদ্যোগে ১৯৩০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হো চি মিন দেশে ফিরে আসেন এবং পার্টিকে সংগঠিত করতে থাকেন।

ভিয়েতনামের মুক্তি আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে তিনি ‘ভিয়েতমিন’ নামে একটি গেরিলা বাহিনী তৈরি করেছিলেন। গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিফৌজের সাহায্যে দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে ভিয়েতনাম স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তে এই দেশকে দ্বিখণ্ডিত করে দেওয়া হয়।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে হো চি মিনের নেতৃত্বে দু’দেশকে একীকরণের যে বীরত্বপূর্ণ লড়াই ভিয়েতনামের জনগণ করেছিলেন, তা মানব সভ্যতার ইতিহাসে চিরগাঁথা হয়ে থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধের সময়েই নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ভিয়েতনামের মানুষের কাছে তিনি হন হো চি মিন (আলোর দিশারী)। বিশ্ববাসীর কাছেও এ নামেই তিনি পরিচিত।

ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান পৃথিবীর মুক্তিকামী ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কমরেড হো চি মিনের জীবন আজো দুনিয়ার শোষিত-নিপীড়িত মানুষের কাছে অসামান্য প্রেরণা।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লেলিনের অনুসারীরা হো চি মিনকে আজ স্মরণ করছে।

১৯৬৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১২
একেআর/সম্পাদনা: আরিফুল ইসলাম আরমান ও ওবায়দুল্লাহ সনি, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।