ঢাকা : সামরিক কুচকাওয়াজ এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গৃহযুদ্ধ অবসানের তৃতীয় বার্ষিকী পালিত হচ্ছে শ্রীলংকায় । শনিবার দিনটি উদযাপন সামনে রেখে গৃহযুদ্ধে সংঘটিত কথিত যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক তদন্তের যে কোনো উদ্যোগ প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে।
তামিল বিদ্রোহীদের সঙ্গে শ্রীলংকা সরকারের চলা দীর্ঘ ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত অবসান ঘটে ২০০৯ সালে। শ্রীলংকার সামরিক বাহিনী তিন বছর আগে এই দিনে উত্তরাঞ্চলীয় তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
প্রভাকরনের নেতৃত্বে তামিলরা দেশটির তামিল অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চল নিয়ে একটি পৃথক আবাস ভুমির দাবিতে শ্রীলংকা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছিলো।
দিনটি উদযাপনে শনিবার ব্যাপক আয়োজন করা হয় রাজধানী কলম্বোতে। এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেয় শ্রীলংকার সশস্ত্র বাহিনীর হাজারো সেনা। কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া সেনাদের গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে।
পরবর্তীতে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি যুদ্ধে অংশ নেওয়া সব সেনার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। একই সঙ্গে তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের আহবানকে উড়িয়ে দেন।
তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ চিৎকার করছে ‘ছাউনি সরাও’, ‘ছাউনি সরাও’, কিন্তু তারা ভুলে যায় এই ছাউনিগুলো অন্য কোথাও নয় বরং শ্রীলংকার মাটিতেই অবস্থিত। ’
গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকা থেকে সেনা সরানোর হিলারি ক্লিনটনের সাম্প্রতিক আহবানের প্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার লঙ্কান প্রতিপক্ষ জিএল পেইরিসের সঙ্গে আলোচনার সময় গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে শ্রীলংকার প্রতি আহবান জানান। এর পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষায় শ্রীলংকা সরকারের আরো পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে সামরিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে দিনটি পালনের ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে শ্রীলংকায়। দেশটিতে বসবাসরত তামিল সম্প্রদায় সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সমালোচনা করেছে।
শ্রীলংকায় ২৬ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে এক লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে এক হিসাবে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এর মধ্যে যুদ্ধের শেষ পাঁচ মাসেই ৪০ হাজার লোক মারা যায় বলে জানায় সংস্থাটি।
গত বছর জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে শ্রীলংকার সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করে জানায় সরকারি সেনারা লড়াই চলাকালে বেসামরিক তামিলদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। তবে সংস্থাটি একই সঙ্গে তামিল বিদ্রোহীদেরও বেসামরিক মানুষকে মানববর্ম হিসাবে ব্যবহারের দায়ে অভিযুক্ত করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সফররত শ্রীলংকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার ওয়াশিংটনে জানিয়েছেন, যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে তার সরকার স্থানীয়ভাবে একটি তদন্ত কার্য্যক্রম পরিচালনা করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তাকেও বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে এসময় জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়:১৭৪৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১২
সম্পাদনা:রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর