ঢাকা: রূপকথার ইয়েতি বা বিগফুটের রহস্য উদঘাটনে এবার বিজ্ঞানীরা ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রাণীর অস্তিত্ব দাবির প্রেক্ষিতে ব্যাপকভাবে তদন্ত চালানোর এ উদ্যোগ নিয়েছেন যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ডের এক দল বিজ্ঞানী।
এ প্রকল্পে সুইজারল্যান্ডের একজন জীববিজ্ঞানীর সংগৃহীত চুল, হাড় এবং শরীরের অন্যান্য অংশ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হবে। এছাড়া অন্যান্য অঞ্চল থেকেও কোনো প্রমাণ থাকলে তা তাদের সরবরাহ করার অনুরোধ করেছেন তারা।
বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে ইয়েতি এবং বিগফুট নামে অতিকায় প্রাণীর বিশ্বাস রয়েছে। রোমশ মানবাকৃতির এসব বন্যপ্রাণী নিঃশব্দে ঘুরে বেড়ায়। তাদের দেখেছেন এমন ঘটনা অবশ্য খুবই বিরল। আর এসব বিরল ঘটনার ভিত্তিতেই এ ধরনের প্রাণীর অস্তিত্ব দাবি করা হয়। এ বিশ্বাস অতি প্রাচীন। আধুনিক অনেক মানুষের মধ্যেও ইয়েতি বা বিগফুটের মতো বিরল বন্যপ্রাণীর বিশ্বাস রয়েছে।
এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগোবেন এবং প্রাপ্ত ও দাবিকৃত দেহাবশেষের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এদের জিনের মূলগত অস্তিত্ব উদঘাটনের চেষ্টার করবেন। পরীক্ষার পরে সর্বশেষ ফলাফল শীর্ষস্থানীয় কোনো বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশ করবেন তারা।
এ ব্যাপারে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনতাত্ত্বিকরা বলছেন, ইয়েতি বা এ ধরনের প্রাণীর দাবি নিয়ে এর আগেও ডিএনএ পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু এখন কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব প্রমাণের কৌশল আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে চুল পরীক্ষার ক্ষেত্রে আধুনিক ফরেনসিক সায়েন্সের কল্যাণে পরীক্ষা কৌশলের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে।
আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতি চুলের একটি অংশ থেকে ইয়েতি বা এমন প্রাণীর অস্তিত্বের ব্যাপারে যথাসম্ভব সঠিক ফলাফল উপহার দিয়ে এ বহু প্রাচীন রহস্যের কূলকিনারা করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
১৯৫১ সালে মাউন্ট এভারেস্টে একজন পর্বতারোহী বরফের গায়ে বিশালাকৃতির কিছু পায়ের ছাপের ছবি প্রকাশ করেন। সে সময় এসব ছবি সারা বিশ্বে তোলপাড় তুলেছিল কিন্তু বিজ্ঞান আজও এর ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
এরপর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমন অদ্ভুত প্রাণীর প্রত্যক্ষদর্শীদের নানা দাবি গণমাধ্যমে আসতে থাকে।
মানবাকৃতির এসব পশুকে হিমালয় অঞ্চলে ইয়েতি বা মিগোই বলা হয়। আর উত্তর আমেরিকার মানুষের কাছে এসব প্রাণী বিগফুট অথবা সাসকোয়াচ নামে পরিচিত। ককেশীয় পর্বতের আশপাশের মানুষেরা বলে আলমাস্তি আর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার অধিবাসীরা বলে ওরাং পেনদেক।
তবে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে এসব প্রাণীকে আরো নানা নামে ডাকা হয়। এ বিশ্বাস অনেকটা রূপকথার মতো হলেও অনেকে চাক্ষুস দেখার দাবি করার কারণে বিজ্ঞানীরাও শেষ পর্যন্ত এর প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
বিজ্ঞানীদের নতুন প্রকল্পটি মূলত সুইজারল্যান্ডের লুসান জাদুঘরের আর্কাইভে সংরক্ষিত তথ্য-প্রমাণের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হবে। সুইস জীববিজ্ঞানী বার্নার্ড হিউভেলমেনস ১৯৫০ থেকে ২০০১ সাল তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যেখানে ইয়েতি দেখা গেছে বলে দাবি করা হয় সেসব অঞ্চল ভ্রমণ করে নানা তথ্য সংগ্রহ করে ওই আর্কাইভটি তৈরি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১২
সম্পাদনা: জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর