ঢাকা, বুধবার, ২ আশ্বিন ১৪৩২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

চে’র ভক্ত ছিলেন বিন লাদেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৪৯, মে ২৬, ২০১২
চে’র ভক্ত ছিলেন বিন লাদেন?

ঢাকা : মার্কসবাদী আর্জেন্টাইন বিপ্লবী চে গুয়েভারার চরম ভক্ত ছিলেন আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন। পাকিস্তানে আটকাবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছেন বিন লাদেনের কনিষ্ঠতম স্ত্রী আমাল আল সাদেহ।



গত ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের একটি বাড়িতে মার্কিন মেরিনের বিশেষ বাহিনী সিলের অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। এরপর ওই বাড়ি থেকে বিন লাদেনের তিন স্ত্রী ও ১১ সন্তানকে হেফাজতে নেয় পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ।

গত মাসে তাদের সৌদি আরব পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে পাকিস্তান আদালত তাদের কারাদণ্ড দেয়। দণ্ড শেষে তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

পাকিস্তানে আটক থাকা অবস্থায় বিন লাদেনের স্ত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পাক ও মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনি একজন পাক গোয়েন্দা কর্মকর্তা তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন পাকিস্তানি দৈনিক ডনের কাছে। আর তার জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই এমন তথ্য দিয়েছেন বিন লাদেনপত্নী।

বিন লাদেনের তিন স্ত্রীই তাদের স্বামীর প্রতি অত্যন্ত অনুগত। একারণে তার ব্যাপারে কোনো প্রশ্নের জবাব পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

তিনি জানান, ছোট স্ত্রী ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত আমাল আল সাদেহ বিন লাদেনের প্রতি সবচে বেশি অনুগত বলে মনে হয়েছে। স্বামীর ব্যাপারে কিছু জানতে চাইলেই তিনি রেগে যেতেন। তার মুখ থেকে তথ্য বের করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। কিন্তু সৌদি নাগরিক অপর দুই স্ত্রীকে প্রশ্ন করলে সাধারণত পর্দার আড়ালে চুপচাপ প্রতিক্রিয়াহীন থাকতেন তারা। মাঝে মাঝে তাদের বিরক্তি প্রকাশ পেত।

তবে তারা তিনজনই স্বামীর সব কর্মকাণ্ড একশভাগ সমর্থন করেন। সারা বিশ্বে অনেকগুলো রক্তাক্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও বিন লাদেনকে নির্দোষ বলেই মনে করেন তারা। এই সন্ত্রাসী নেতার স্মৃতিময় সঙ্গ তারা কেউ ভুলতে পারেন না।

ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে বিন লাদেনের প্রসঙ্গ এলেই তারা খুব স্মৃতিকাতর হয়ে পড়তেন। ’

ছোট স্ত্রী আমাল জিজ্ঞাসাবাদের সময় খুব রেগে যেতেন। তিনি কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিতে চাইতেন না। কিন্তু একদিন তাকে অনেকটা নমনীয় মনে হলো।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাল একদিন আমাকে বলেছিলেন বিন লাদেন চে গুয়েভারাকে খুব পছন্দ করতেন। এসময় তাকে (আমালকে) একজন বিপ্লবীর মতোই দেখাচ্ছিল। তাই আমি তাকে লাতিন আমেরিকার বামপন্থিদের ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। এতে তাকে খুব আগ্রহী বলে মনে হলো আমার। ’

তবে আমালের এ তথ্য অন্য কোনোভাবে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।

আর্জেন্টাইন মার্কসবাদী বিপ্লবী আরনেস্তো চে গুয়েভারা কিউবার বিপ্লবে ফিদেল কাস্ত্রোর সহযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৬৭ সালে বলিভিয়ায় তিনি নিহত হন।

উল্লেখ্য, আমাল ইয়েমেন থেকে আফগানিস্তান ছুটে আসেন শুধু ওসামা বিল লাদেনকে বিয়ে করার জন্য। তখন তার বয়স মাত্র ১৮ বছর আর বিন লাদেনের বয়স চল্লিশের কোঠায়। বিন লাদেনের মতো একজন ‘জিহাদি’ স্বামী পাওয়া ছিল আমালের স্বপ্ন। ২০১১ সালে রয়টারকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে আমালের বাবা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিন স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে বুঝা গেছে, বিন লাদেন পরিবার নিয়ে পাকিস্তানের দু’টি শহরে ছয় বা সাত বছর ধরে অবস্থান করেছেন।

অন্য কর্মকর্তারা তাদের কী ধরনে প্রশ্ন করেছে সে ব্যাপারে অবশ্য তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

এছাড়া বিন লাদেন পাকিস্তানে অবস্থান করছেন এমন খবর বেরুনোর পর ওই কর্মকর্তা অ্যাবোটাবাদেই দায়িত্বরত ছিলেন। কিন্তু গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এতোবড় একজন সন্ত্রাসী নেতা কেমন করে পাঁচ বছর সেখানে অবস্থান করলেন? এ প্রশ্নে একটু উদাসভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১২
সম্পাদনা: জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।