ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আইনজীবী থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, আছে ৭৫ মিনিটের ‘অভিজ্ঞতা’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২৪
আইনজীবী থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, আছে ৭৫ মিনিটের ‘অভিজ্ঞতা’ কমলা হ্যারিস

চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিস। তার প্রচারণা উদারপন্থী ভোটারদের পুনরুজ্জীবিত করেছে।

 

কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। তার মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং বাবা জ্যামাইকান আমেরিকান। বয়স যখন মাত্র পাঁচ, তখন তার বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এরপর মা শ্যামলা গোপালন হ্যারিসের কাছেই বেড়ে ওঠা।

হ্যারিস জানান, তাকে এবং তার ছোট বোন মায়াকে ওকল্যান্ডের কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মাঝেই বড় করে তোলেন তার মা, যিনি একজন ক্যানসার গবেষক ও নাগরিক অধিকারকর্মী ছিলেন।

তার আত্মজীবনী ‘দ্য ট্রুথস উই হোল্ড’-এ তিনি লিখেছেন, আমার মা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি দুজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েকে লালন পালন করছেন।
 
হ্যারিসের মা শ্যামলা গোপালন হ্যারিস ভারতীয় ছিলেন। তার আদি বাড়ি ভারতের তামিলনাড়ুতে। ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন তিনি।

হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন হ্যারিস। পড়াশোনার সময় থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ এবং যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত সম্পর্কের মতো রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে তিনি সোচ্চার হতে থাকেন।

হ্যারিসের স্বামী আইনজীবী ডাগ এমহফ। এক ব্লাইন্ড ডেটে আলাপ হয়েছিল তাদের। ২০১৪ সালে এই যুগল বিয়ে করেন। ডাগ এমহফের সন্তান কোল ও এলা হ্যারিসকে মোমালা বলে ডাকে।

তার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কমলা হ্যারিস এলি ম্যাগাজিনকে বলেন, রোববারের নৈশভোজ আমাদের কাছে পারিবারিক সময়। কোল টেবিল সেট করে এবং সংগীত বাছাই করে। এলা ডেসার্ট (মিষ্টান্ন) তৈরি করে, ডাগ আমার স্যুস-শেফ হিসেবে কাজ করে, আর আমি রান্না করি।

আইনজীবী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন কমলা হ্যারিস। আলামেডা কাউন্টির ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নির দপ্তরে কর্মরত ছিলেন তিনি। এরপর সান ফ্রান্সিসকোর ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ করেন। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তিনিই প্রথম নারী এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ, যিনি এ পদে দায়িত্ব সামলেছেন।

তার এ সাফল্য ২০১৬ সালের ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর নির্বাচনের প্রচারে গতি আনে এবং তার বিজয় নিশ্চিত করে। এরপর ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়ার জন্য প্রচারণা চালান। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়েই সেই দৌড় থেকে বেরিয়ে যান তিনি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা পাওয়ার পরই জো বাইডেন তার রানিংমেট হিসেবে কমলা হ্যারিসকে বেছে নেন। তার সম্পর্কে বাইডেন সেবার বলেছিলেন, কমলা স্মার্ট, শক্ত, অভিজ্ঞ এবং একজন প্রমাণিত যোদ্ধা।  

কমলা হ্যারিসকে বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারের সময় পেছনের আসনে দেখা গেলেও এ সাফল্যে একজন নারী এবং কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। এর কারণ হলো কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ভোটের ৯০ শতাংশ তাদের ঝুলিতে ছিল।

২০২১ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিকিৎসাজনিত কারণে মেডিকেল পরীক্ষা করাতে হয়েছিল। তখন ৭৫ মিনিটের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন হ্যারিস।

মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমালা হ্যারিস মার্কিন সিনেটেরও প্রেসিডেন্ট। বিল পাসের ক্ষেত্রে ভোট সমান হয়ে গেলে তিনি ভোট দিতে পারেন। তার সেই ক্ষমতা ৩২ বার ব্যবহার করে নজির গড়েছেন তিনি। মার্কিন ইতিহাসে অন্য কোনো ভাইস প্রেসিডেন্ট এতবার ওই ক্ষমতা ব্যবহার করেননি।

হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসীর ঢলের আবহে অভিবাসন সংকট মোকাবিলা করার দায়িত্ব হ্যারিসকে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

‘ফাইভ থার্টিএইট’ সংকলিত জনমত জরিপের গড় বলছে, ভাইস প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় হ্যারিসের পক্ষে অনুমোদন সবসময়ই কম ছিল। তাদের জনমত জরিপ অনুযায়ী, ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার পারফরম্যান্সের নিরিখে ৫১ শতাংশ আমেরিকান তার বিপক্ষে ভোট দেন আর পক্ষে ভোট দেন ৩৭ শতাংশ।

গত জুন মাসে এক বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টেক্কা দিতে পারেননি বাইডেন। এরপর থেকে বাইডেনের ওপর নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য চাপ বাড়তে থাকে।

ইউএস হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা মার্কিন প্রতিনিধি সভার পাঁচ ডেমোক্র্যাট সদস্য ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেনকে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলেন। এ পরিস্থিতিতে বাইডেনের পরিবর্তে হ্যারিসের নাম আসে।

সাম্প্রতিক জনমত জরিপ অনুযায়ী, হ্যারিস রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জো বাইডেনের তুলনায় ভালো করতে পারেন। যদিও নির্বাচনি দৌড়ে কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে তাকে।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় তার নির্বাচনী প্রচার অনেকটাই পরে শুরু করেন হ্যারিস। তবে প্রথম সমাবেশেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘আক্রমণাত্মক’ ভূমিকায় দেখা যায় তাকে।

ভোটারদের কাছে নিজেকে নতুনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন হ্যারিস। তিনি বলেছেন, প্রথম দিন থেকেই তার অগ্রাধিকার হবে শ্রমজীবী পরিবারের জন্য খাদ্য ও বাসস্থানের খরচ কমানো।

নিত্যপণ্যের মাত্রাতিরিক্ত দাম নির্ধারণের প্রবণতা বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। প্রথমবার বাড়ি কেনায় সহায়তা এবং আবাসন খাতে প্রণোদনা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বছরে চার লাখ ডলারের বেশি আয় করা আমেরিকানদের ওপর কর বাড়াতে চান কমলা হ্যারিস। সম্পদ আহরণের ওপর বাইডেনের আরোপিত করের সঙ্গেও তার দ্বিমত রয়েছে।

গর্ভপাতের অধিকারকে তার প্রচারণার কেন্দ্রে রেখেছেন কমলা হ্যারিস। তিনি সারা দেশের জন্য অভিন্ন প্রজনন অধিকার সুরক্ষা আইনের পক্ষে কথা বলছেন।

ইউক্রেনকে যতদিন প্রয়োজন, ততদিন সমর্থন দিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন হ্যারিস। তিনি নির্বাচিত হলে, চীন নয়, ২১ শতকের প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রই জিতবে, দিচ্ছেন এমন প্রতিশ্রুতিও।  

তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে সোচ্চার। গাজা যুদ্ধ বন্ধে আহ্বান জানিয়ে আসছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২৪
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।