হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে জেলেনস্কি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার পর পশ্চিমা নেতারা তড়িঘড়ি করে ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তবে এটা স্পষ্ট শুক্রবারের উত্তপ্ত বৈঠকের পর ওয়াশিংটন ও তার প্রধান মিত্রদের মধ্যে আরও গভীর ফাটল তৈরি করেছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বিতর্কের পর দুজনের সঙ্গেই কথা বলেছেন এবং ইউক্রেনের প্রতি তার ‘অটল সমর্থন’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্টারমার একটি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার ওপর ভিত্তি করে হবে। স্টারমার ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন, যেন তিনি এমন কোনো শান্তিচুক্তি গ্রহণ না করেন যা রাশিয়া বা তার মিত্রদের পুরস্কৃত করবে।
রবিবার যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় নেতাদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে ইউক্রেনের জন্য সমর্থন নিয়ে আলোচনা হবে। জেলেনস্কি সেখানে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে তিনি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি সমর্থন পাবেন।
হোয়াইট হাউসের ঘটনার বিষয়ে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, বিভক্তি পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থানকে দুর্বল করে তুলছে।
ইউক্রেনীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলেনস্কি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তার সঙ্গেও কথা বলেছেন।
পরে এক বিবৃতিতে ম্যাক্রোঁ বলেন, এখানে একজন আগ্রাসী রয়েছে, আর সেটি রাশিয়া। এবং এখানে আক্রান্ত একটি দেশ রয়েছে, সেটি ইউক্রেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ইউক্রেনের চেয়ে বেশি কেউ শান্তি চায় না। তাই আমরা একটি ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথ বের করতে কাজ করছি। এই বিষয়ে ইউক্রেন জার্মানি এবং ইউরোপের ওপর নির্ভর করতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কাল্লাস এক বিবৃতিতে বলেন, স্পষ্টতই মুক্ত বিশ্বকে এখন নতুন নেতৃত্ব বেছে নাওয়া প্রয়োজন।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে জেলেনস্কিকে ‘শক্ত অবস্থান ধরে রাখার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিটানাস নউসেদা বলেন, ইউক্রেন, তোমাদের কখনো একলা চলতে হবে না।
এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গুস ছাখনা সতর্ক করে বলেন, যদি ইউক্রেন লড়াই বন্ধ করে, তবে ‘ইউক্রেন’ বলে কিছু থাকবে না।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইউক্রেনের প্রতি তার দেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, রাশিয়া অবৈধভাবে এবং অন্যায্যভাবে ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। তিন বছর ধরে ইউক্রেনের মানুষ সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই করছে। তাদের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, আমরা যতদিন প্রয়োজন, ততদিন ইউক্রেনের পাশে থাকব। কারণ আমরা এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে একটি লড়াই হিসেবে দেখি।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাকসনও ইউক্রেনের প্রতি তার দেশের ‘অটল সমর্থন’ ঘোষণা করেছেন।
তবে পশ্চিমা ও ইউরোপীয় নেতাদের এই ঐক্যের মধ্যে একটি ব্যতিক্রম ছিলেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান, যিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, শক্তিশালী নেতারা শান্তি স্থাপন করেন, দুর্বল নেতারা যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন। আজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তির জন্য সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন, যদিও এটি অনেকের জন্য মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। ধন্যবাদ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট!
সূত্র: সিএনএন
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৫
এমএম