ঢাকা, শনিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভারত-পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
ভারত-পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস

বিদ্যমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশকেই ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সম্প্রতি বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ পর্যটকের প্রাণহানির ঘটনার পর পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সৃষ্ট উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের প্রেক্ষাপটে তিনি এ আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিক বলেন, মহাসচিব এই পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

গত ২২ এপ্রিল বিকেলে কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। একজন ছাড়া এদের সবাই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পুরুষ পর্যটক। এ ঘটনায় ভারতের বিভিন্ন মহলের সন্দেহের তীর যাচ্ছে পাকিস্তানের দিকে। যদিও পাকিস্তানের কর্মকর্তারা ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন, একইসঙ্গে এসব ঘটনায় পাকিস্তানের ওপর দায় চাপানোরও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। উপরন্তু পাকিস্তানে এটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ভারত সরকারেরই সাজানো ঘটনা’ বলে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে দুদেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি বড় সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি। অন্য চারটি সিদ্ধান্ত হলো পাকিস্তানের কোনো নাগরিককে ‘সার্ক ভিসা’ না দেওয়া; পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ রাখা, পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশন থেকে কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে নেওয়া; পাকিস্তানের নাগরিকদের দেওয়া ভারতের ভিসা বাতিল এবং তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ।

এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে আছে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি সাময়িক স্থগিত; ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা বাতিল (শিখ তীর্থযাত্রীরা এর বাইরে থাকবেন); ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা; ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ভারত থেকে আগতদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ; ভারতে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা; ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা ত্রিশে নামিয়ে আনা; ভারতীয় এয়ারলাইনের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ ও ভারতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের বাণিজ্য স্থগিত।

এমন উত্তেজনার মধ্যে সীমান্তে ভারতের অস্ত্রশস্ত্র জড়ো করা এবং দেশটির নৌবাহিনীর মিসাইল বিধ্বংসের পরীক্ষার খবরেও মিলছে গণমাধ্যমে। এছাড়া বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়, যদিও এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এই অস্থির পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে আমরা উভয় সরকারের কাছে জোর অনুরোধ জানাই। একইসঙ্গে বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং যা আমরা দেখছি তা যেন আরও খারাপের দিকে না যায়, সেটা নিশ্চিত করারও অনুরোধ করি। ’

এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ করেননি।

ডুজারিক বলেন, ‘পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার যেকোনো ইস্যু শান্তিপূর্ণভাবে ও পারস্পরিক অর্থবহ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব ও উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি। ’

ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি স্থগিত করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডুজারিক বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা যে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর অনুরোধ করছি এবং পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে বা অস্থির অঞ্চলে আরও উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি, এটিও সেই আহ্বানের আওতায় থাকবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।