ঢাকা, সোমবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২০ রবিউস সানি ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের ‘প্রতিশোধমূলক’ হামলায় দুই শতাধিক তালেবান ও জঙ্গি নিহত: আইএসপিআর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪৫, অক্টোবর ১২, ২০২৫
পাকিস্তানের ‘প্রতিশোধমূলক’ হামলায় দুই শতাধিক তালেবান ও জঙ্গি নিহত: আইএসপিআর

পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী আফগান বাহিনীর অতর্কিত গুলিবর্ষণের জবাবে ‘প্রতিশোধমূলক’ হামলা চালিয়ে তালেবান ও ভারত সমর্থিত তহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা ফিতনা আল-খাওয়ারিজের দুই শতাধিক সদস্যকে হত্যা করেছে।

পাকিস্তানের অভিযোগ, আঙ্গুর আড্ডা, বাজাউর ও কুর্রামসহ বেশ কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্টে বিনা উস্কানিতে তালেবান বাহিনী গুলি চালানোর পর দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এছাড়া দির, চিত্রাল, বারামচা এবং ডুরান্ড লাইনের অন্যান্য এলাকায় হামলার খবর পাওয়া গেছে।

আইএসপিআরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনী নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল হামলা চালিয়েছে। আফগান সীমান্তের তালেবান ক্যাম্প, পোস্ট, জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও সহায়ক নেটওয়ার্ককে এ হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। সীমান্ত জুড়ে একাধিক তালেবান অবস্থান ধ্বংস করা হয়েছে। আফগান সীমান্তের ২১টি প্রতিকূল অবস্থান সাময়িকভাবে দখল করা হয়েছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিকল্পনা ও সহায়তা করার জন্য ব্যবহৃত একাধিক সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবিরকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।

আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, সীমান্ত জুড়ে তালেবান পোস্ট, ক্যাম্প, সদর দপ্তর ও জঙ্গি সহায়ক নেটওয়ার্কে কাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। পাকিস্তান সবসময় সহানুভূতিশীল কূটনীতি ও সংলাপের ওপর গুরুত্ব দেয়। আইএসপিআরের মুখপাত্র সতর্ক করেছেন, আফগান মাটিকে জঙ্গিদের কাজে ব্যবহার বরদাস্ত করা হবে না। তালেবান সরকারের উচিত যেকোনো অনৈতিক ধারণা পরিহার করা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেয়ে আফগান জনগণের কল্যাণ, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

ওই মুখপাত্র আরও বলেন, আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা তালেবান সরকারকে তাদের ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, এফএকে, এফএএইচ এবং দায়েশের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীকে অবিলম্বে এবং যাচাইযোগ্যভাবে নিরস্ত্র করতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে পাকিস্তান তার জনগণকে রক্ষার জন্য জঙ্গি লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের অধিকার প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে।

আইএসপিআর স্মরণ করিয়েছে, সাম্প্রতিক সংঘাত পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের অবস্থানকে সঠিক প্রমাণ করেছে যে, তালেবান সরকার সক্রিয়ভাবে জঙ্গিদের সহায়তা করছে। যদি তালেবান সরকার এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার অদূরদর্শী লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলিকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকে, তাহলে আফগানিস্তান থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসবাদের হুমকি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের জনগণ এবং রাষ্ট্র বিশ্রাম নেবে না।

পাকিস্তানের সম্প্রচার মাধ্যম জিও নিউজের অনলাইন সংস্করণ এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব, কাতার ও ইরান। তারা উভয় দেশের প্রতি শান্তি বজায় রাখতে এবং সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উত্তেজনা হ্রাস করা অপরিহার্য। এতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জনগণের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য প্রার্থনাও করা হয়েছে।

কাতারও শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেশী দেশ দুটিকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, সংলাপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা সমাধান করা জরুরি।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাইও পাকিস্তান-আফগানিস্তান সংঘর্ষের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ইরান প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।