বাণিজ্য নিয়ে চীনের সঙ্গে প্রায়শই লড়াইয়ে নামে যুক্তরাষ্ট্র। শুল্কযুদ্ধ, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, প্রযুক্তি বয়কট সবই এই লড়াইয়ের অংশ।
বিশ্বের ৮০ শতাংশ অ্যান্টিমনি সরবরাহ করে চীন। বিকল্প উৎস না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হাতে চীনের কৌশলগত প্রভাব যেন দিন দিন আরও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তার দিক থেকেও অ্যান্টিমনি হয়ে উঠছে এক নীরব অস্ত্র।
অবশ্য, চীনের মাইক্রোচিপ শিল্পকে ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্র কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিল। এর জবাবে গত ৩ ডিসেম্বর চীন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। কিন্তু বাস্তবে এখনো সেসব খনিজ চীন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে।
চীন রপ্তানি বন্ধ করার পর থেকেই থাইল্যান্ড আর মেক্সিকো থেকে অস্বাভাবিক পরিমাণে অ্যান্টিমনি আমদানি করছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কাস্টমসের তথ্য বলছে, শুধু ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে এই দুই দেশ থেকে ৩,৮৩৪ মেট্রিক টন অ্যান্টিমনি অক্সাইড এসেছে। অথচ থাইল্যান্ড বা মেক্সিকো, কোনোটাই এই ধাতু বেশি উত্তোলন করে না।
চীনের মে মাসের কাস্টমস তথ্য বলছে, এই বছর থাইল্যান্ড ও মেক্সিকো চীনা অ্যান্টিমনির শীর্ষ তিন রপ্তানি গন্তব্যের মধ্যে পড়েছে। কাস্টমস ও শিপিং রেকর্ডে দেখা গেছে, অন্তত একটি চীনা মালিকানাধীন কোম্পানি সরাসরি থাইল্যান্ড ও মেক্সিকোতে এই ধাতুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
অ্যান্টিমনি, গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশ চীন। ফলে যুক্তরাষ্ট্র চাইলেও চীনকে এড়িয়ে চলা সম্ভব হচ্ছে না। মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে দুটি মার্কিন কোম্পানির নির্বাহী ও খনিজ শিল্পের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তারা গত কয়েক মাসে চীন থেকেই খনিজ কিনেছেন।
এই বছর যুক্তরাষ্ট্রে অ্যান্টিমনি, গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়ামের আমদানি বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। সবদিক মিলিয়ে ইঙ্গিত মিলছে, এসব ধাতু আসলে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে চীন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকছে। মানে, অন্য কেউ চীন থেকে খনিজ কিনে সেটি ঘুরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করছে।
তবে এতে দায় গিয়ে পড়ছে চীনা কোম্পানিগুলোর ওপরই। কারণ, অনেকেই মনে করেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন এড়িয়ে যাওয়ার পথ চীনারা ভালোভাবেই জানে।
চীনা সরকারও বিষয়টি বুঝে ফেলেছে। মে মাসে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, কিছু অজানা বিদেশি প্রতিষ্ঠান চীনের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেতে দেশটির আইন ভাঙা কিছু কোম্পানির সঙ্গে মিলে কাজ করছে। চীন বলছে, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে তারা কঠোর পদক্ষেপ নিতে চায়।
চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব খনিজ যাচ্ছে, তার পেছনে রয়েছে নানা অনিয়ম। আমদানি-রপ্তানির কাগজপত্রে কাঁচামালের উৎসের তথ্য নেই, দেওয়া হচ্ছে ভুয়া ফোন নম্বর, এমনকি চীনের আইন ভেঙেও খনিজ পাঠানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে।
এই পরিস্থিতিতে মে মাসে চীন এসব গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ট্রান্সশিপমেন্ট ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় তারা এমন বেআইনি কার্যকলাপ ঠেকাতে কঠোর হতে চলেছে।
এমএইচডি/এমজে