ঢাকা, শনিবার, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ জুলাই ২০২৫, ১৬ মহররম ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

অবৈধ সমুদ্রপথে ইউরোপ প্রবেশে শীর্ষে বাংলাদেশ

সাগর আনোয়ার, জার্মানি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:৩৬, জুলাই ১১, ২০২৫
অবৈধ সমুদ্রপথে ইউরোপ প্রবেশে শীর্ষে বাংলাদেশ

ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসনের জন্য সবচেয়ে ব্যস্ত ও বিপজ্জনক পথ হিসেবে আবারও সামনে এসেছে সেন্ট্রাল মেডিটেরেনিয়ান রুটের নাম। আর এই রুটে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী লিবিয়া হয়ে ইতালিতে প্রবেশ করছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত পর্যবেক্ষণ সংস্থা ফ্রন্টেক্সের ১০ জুন প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে এই রুটে অভিবাসী প্রবেশের হার ১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৩০০ জনে। এর মধ্যে লিবিয়া থেকে ইতালিতে পৌঁছেছেন প্রায় ২০ হাজার ৮০০ জন, যা আগের বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি।

ফ্রন্টেক্স জানায়, লিবিয়া থেকে ইউরোপে অবৈধভাবে পাড়ি জমানো অভিবাসীদের বড় অংশই বাংলাদেশি নাগরিক। এরপর রয়েছে মিশরীয় ও আফগান নাগরিকরা। এই বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছেন, আবার অনেকে পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ছেন।

ইউরোপে অভিবাসন কমলেও এই রুটে চাপ বাড়ছে

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপে মোট অনিয়মিত অভিবাসনের সংখ্যা ২০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৯০০ জনে। ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় ও পশ্চিম আফ্রিকান রুটে উল্লেখযোগ্য হারে অভিবাসন কমেছে। পশ্চিম বলকান রুটে ৫৩ শতাংশ, পূর্ব সীমান্তে ৫০ শতাংশ এবং পশ্চিম আফ্রিকান রুটে ৪১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

তবে সেন্ট্রাল মেডিটেরেনিয়ান রুট এখনো ইউরোপের সবচেয়ে ব্যবহৃত পথ। বর্তমানে ইউরোপে অনিয়মিত ও অবৈধ প্রবেশকারীদের ৩৯ শতাংশই এই রুট ব্যবহার করছেন।

নতুন করিডোর: লিবিয়া থেকে ক্রিটে

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় রুটে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। লিবিয়া থেকে গ্রিসের ক্রিট দ্বীপমুখী একটি নতুন করিডোর গড়ে উঠেছে, যা এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। পাচারকারী নেটওয়ার্কগুলো নজরদারি কম থাকায় আগের রুট বাদ দিয়ে নতুন এই পথ বেছে নিচ্ছে।

পশ্চিম ভূমধ্যসাগরেও অভিবাসন বেড়েছে

পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় রুটেও অবৈধ অভিবাসনের প্রবণতা বেড়েছে। এই রুটে অভিবাসন ১৯ শতাংশ বেড়েছে এবং শুধু জুন মাসেই অবৈধ প্রবেশ দ্বিগুণ হয়েছে। আলজেরিয়া থেকে এই পথে যাত্রার হার ৮০ শতাংশ বেড়েছে। সোমালিয়ান ও আফ্রিকান অভিবাসীরা এ রুটটি ব্যবহার করে। ফ্রন্টেক্স একে পাচারকারীদের নতুন কৌশল বলেছে।

ইংলিস চ্যানেল রুটেও বাড়ছে চাপ

যুক্তরাজ্যে প্রবেশের জন্য ইংলিস চ্যানেল রুট ব্যবহার করে অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টাও বেড়েছে ২৩ শতাংশ। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ পথে ৩৩ হাজার ২০০ জন ইংল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। তারা মূলত ফ্রান্স হয়ে এ রুটে যাত্রা করেছে।

সমুদ্রেই প্রাণ হারিয়েছে শত মানুষ

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে অবৈধ অভিবাসনের সংখ্যা কিছুটা কমলেও মানবিক ট্র্যাজেডি কমেনি। ফ্রন্টেক্স ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, এ সময় শুধু ভূমধ্যসাগরেই ৭৬০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ট্রলারে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার সময় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশিও রয়েছে।

ইউরোপের পদক্ষেপ

অভিবাসন ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে ফ্রন্টেক্সের প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তা ইউরোপের বিভিন্ন সীমান্তে মোতায়েন রয়েছেন। তবে পাচারকারী চক্রগুলো দ্রুত নতুন রুট তৈরি করতে পারায় সীমান্ত নজরদারি কঠিন হয়ে পড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরএইচ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।