ভারতের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড্ডয়নের ঠিক তিন সেকেন্ড পরই ইঞ্জিনের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ ‘রান’ অবস্থা থেকে ‘কাট-অফ’ অবস্থায় চলে গিয়েছিল। ফলে মুহূর্তেই থ্রাস্ট হারিয়ে নিচে নেমে আসে বিমানটি।
শনিবার (১২ জুলাই) ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ জুন আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের তিন সেকেন্ড পরই বিমানের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই বিমানের ইঞ্জিন থেকে থ্রাস্ট হারিয়ে ফেলে এবং দ্রুত নিচে নামতে থাকে। ককপিট ভয়েস রেকর্ডার বিশ্লেষণে জানা গেছে, একজন পাইলট অন্যজনকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কেন ফুয়েল বন্ধ করলে?’ উত্তরে অপর পাইলট বলেন, ‘আমি করিনি। ’
তবে কে কাকে প্রশ্ন করেছেন, কে উত্তর দিয়েছেন ক্যাপ্টেন নাকি ফার্স্ট অফিসার, প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া, মে-ডে সংকেতটি কে পাঠিয়েছেন, সেটিও স্পষ্ট নয়।
এখনো স্পষ্ট নয় কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই ফুয়েল সুইচ বন্ধ হয়ে গেল। যুক্তরাষ্ট্রের এভিয়েশন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জন কক্স বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এই সুইচগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা যে, ভুলবশত হালকা ধাক্কায় সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
সাধারণত ইঞ্জিন বন্ধ করার এই সুইচগুলো ব্যবহার করা হয় কেবল গন্তব্যে পৌঁছে গেটের সামনে অথবা জরুরি পরিস্থিতিতে, যেমন ইঞ্জিনে আগুন লাগলে। কিন্তু সেই সময় বিমানে এমন কোনো জরুরি অবস্থা ছিল না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
২০১৮ সালে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এক তথ্য বুলেটিনে সতর্ক করেছিল, কিছু পরিস্থিতিতে জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচের লকিং ফিচার অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। তবে এটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা’ হিসেবে তখন গণ্য করা হয়নি। এ কারণে এয়ার ইন্ডিয়া এ সংক্রান্ত পরামর্শমূলক পরিদর্শন কার্যক্রমও চালায়নি, কারণ সেগুলো বাধ্যতামূলক ছিল না।
এ বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে জানায়, তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করছে। তবে এই মুহূর্তে তারা এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করবে না।
অন্যদিকে, বোয়িং কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও প্রতিষ্ঠানটি এর আগেও ৭৩৭ ম্যাক্স মডেল ঘিরে একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণে বিশ্বজুড়ে নজরদারির মুখে পড়ে।
ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো জানিয়েছে, তদন্ত এখনো চলমান এবং সব স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এমজে