ঢাকা, শুক্রবার, ১ কার্তিক ১৪৩২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

গাজার শিশুদের এক্ষুণি খাবার-চিকিৎসা প্রয়োজন, কিন্তু অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৪৬, অক্টোবর ১৬, ২০২৫
গাজার শিশুদের এক্ষুণি খাবার-চিকিৎসা প্রয়োজন, কিন্তু অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ফিলিস্তিনের কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। বিশেষ করে শিশুদের।

তাদের এই মুহূর্তে পরিমিত খাবার ও চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক দিন পার হয়ে গেলেও উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে কড়াকড়ি অব্যাহত রয়েছে। এতে অসুস্থ শিশুরা এখনো জীবনরক্ষাকারী সহায়তার জন্য মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) পর্যন্ত গাজায় প্রতিদিন ত্রাণবাহী ৬০০ ট্রাক ঢোকার কথা থাকলেও ঢুকছে তিনশোটিরও কম। যেগুলো ঢুকেছে সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই মানবিক সহায়তার বদলে বাণিজ্যিক পণ্য বহন করছে। খবর আল জাজিরার‌।

গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় অবস্থানরত সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদক জানিয়েছেন, গাজার শিশুদের কাছে কিছুই নেই। তাদের কাপড়, জুতো, স্বাস্থ্যকর সামগ্রী, ওষুধ কিছুই নেই। এখন পর্যন্ত এসব পণ্য মজুত না থাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। তাদের এক্ষুণি খাবার-চিকিৎসা প্রয়োজন, কিন্তু অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না

তিনি আরও বলেন, যেসব ট্রাক প্রবেশ করছে, সেগুলো বাণিজ্যিক পণ্যবাহী। পণ্যগুলো বাজারে বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু গাজার মানুষ এগুলো কিনতে পারছে না। তাদের হাতে টাকা নেই, ব্যাংকও এখনো খোলেনি।

গাজার পেশেন্টস ফ্রেন্ডস বেনেভোলেন্ট সোসাইটি (পিএফবিএস) হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অপুষ্টিতে ভোগা অনেক শিশুর অবস্থা ‘অতিমাত্রায় সংকটজনক’। হাসপাতালটিতে ওষুধ, খাবার ও জ্বালানি সবকিছুরই ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মুসাব ফারওয়ানা আল জাজিরাকে বলেন, আমরা এখনো মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অপেক্ষায় আছি। এগুলো পৌঁছলে পরিস্থিতি নিশ্চয়ই উন্নত হবে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য, যারা দুই বছরের যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুগছে।

রান্দা আলধাদার নামে এক নারী তার অসুস্থ সন্তান রুকাইয়াকে নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, আমি এখন সম্পূর্ণ অসহায়। খাবারের অভাবে আমার দুধ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে রুকাইয়া মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। সে প্রায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। হাসপাতাল থেকে এখনো আমার মেয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য পাওয়া যায়নি। বিস্কুট, দুধ, পুষ্টি-পরিপূরক সাধারণ জিনিসগুলো পেলেই সে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠতে পারত।

দুই বছরের ইসরায়েলি হামলায় গাজার বহু চিকিৎসা কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে, নিহত হয়েছেন শত শত চিকিৎসক। এর সঙ্গে এপ্রিল থেকে চলমান সম্পূর্ণ মানবিক অবরোধে পুরো অঞ্চলটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।

গত সপ্তাহে হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, যার অংশ হিসেবে ইসরায়েলি বন্দিদের বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। চুক্তির প্রথম ধাপে মানবিক অবরোধ প্রত্যাহার করে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সহায়তা প্রবেশের কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েলের কঠোর বিধিনিষেধে সেই সহায়তা এখনো পৌঁছাতে পারছে না। এ কারণে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে হাসপাতালের সংকটাপন্ন রোগীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

গাজা সিটির পিএফবিএস হাসপাতালে তাহানি হাসসৌনা তার অসুস্থ কন্যা আলমাকে নিয়ে উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। আলমা হৃদরোগে আক্রান্ত, কিন্তু চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে সঠিক সেবা পাচ্ছে না। তাহানি বলেন, যন্ত্রপাতির অভাবে আমার মেয়ে পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না। তার রোগের কারণে ওজন বাড়ছে না, আর শ্বাস নিতে তাকে সারাক্ষণ অক্সিজেনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

তাহানি প্রতিদিন অপেক্ষা করছেন, কখন রাফাহ সীমান্ত আবার খুলবে। কখন তিনি মেয়েকে নিয়ে বিদেশে জীবনরক্ষাকারী অস্ত্রোপচারের জন্য যেতে পারেন।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইসরায়েল দক্ষিণ গাজার রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলার কোনো ঘোষণা দেয়নি।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা কগাট জানিয়েছে, রাফাহ হয়ে কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশ করবে না, কারণ এটি কোনো ধাপেই চুক্তির অংশ ছিল না। সংস্থাটি জানায়, সহায়তা কেবল কেরেম শালোম ও অন্যান্য সীমান্তপথে প্রবেশ করবে।

গাজার আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, যুদ্ধবিরতি শুরুর পরও চিকিৎসা সেবা বা ওষুধের সরবরাহে কোনো দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। গাজার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। এখনো কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।