সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ও দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা প্রদেশে ইসরায়েলের ধারাবাহিক বিমান হামলায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। বুধবার ইসরায়েলি বাহিনী দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশে বিমান হামলা চালায়।
একইসঙ্গে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন সামরিক ও অস্ত্রবাহী যানবাহনেও হামলা চালানো হয়। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
সিরিয়ায় চলমান জাতিগত সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর)।
গত রোববার সুয়েইদা প্রদেশে দ্রুজ মিলিশিয়া ও বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৬৯ জন দ্রুজ যোদ্ধা, ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক, ১৬৫ জন সরকারি সেনা এবং ১৮ জন বেদুইন যোদ্ধা। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় ১০ জন সরকারি সেনা নিহত হয়েছেন।
এই সহিংসতার মধ্যে মধ্যস্থতায় নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, আমরা এমন কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপে একমত হয়েছি, যা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির অবসান ঘটাবে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন ও আরব পক্ষের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে, সুয়েইদা শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। এটি এক সমঝোতার অংশ, যা সরকার ও স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে। এর মাধ্যমে শহরে সংঘর্ষ বন্ধে সাময়িক শান্তি ফিরতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, আমরা আমাদের দ্রুজ ভাইদের রক্ষা করছি এবং শাসকগোষ্ঠীর দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করছি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ জানান, দ্রুজদের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেন, দ্রুজ জনগণের সঙ্গে যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিচার করা হবে। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধকে ভয় পাই না, কিন্তু সিরিয়ার স্বার্থকে বিশৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে রাখছি।
অবশ্য দ্রুজ সম্প্রদায়ের একাংশ প্রেসিডেন্ট শারার নেতৃত্ব নিয়ে সন্দিহান। তাদের আশঙ্কা, তার দল হায়াত তাহরির আল শাম, যা একসময় আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত ছিল—তারা দ্রুজ জনগোষ্ঠীর ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
এই পরিস্থিতির শুরু হয় গত শুক্রবার এক দ্রুজ ব্যবসায়ী অপহৃত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। রোববার সশস্ত্র দ্রুজ যোদ্ধারা সুয়েইদা শহরের একটি বেদুইন অধ্যুষিত এলাকা ঘিরে ফেলে এবং নিয়ন্ত্রণ নেয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বেদুইনরা আশপাশের দ্রুজ গ্রামগুলোতে হামলা শুরু করে।
ইসরায়েল এই সহিংসতা এবং সিরিয়ার সেনা মোতায়েনকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ইতিমধ্যে শত শতবার সিরিয়ার অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালিয়েছে এবং গোলান মালভূমি সংলগ্ন নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন করেছে।
আরএইচ