সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বৃহস্পতিবার এক ভাষণে দ্রুজদের সঙ্গে নতুন যুদ্ধবিরতির চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
চুক্তির আওতায় সীমান্তবর্তী সুয়েইদা অঞ্চল থেকে সরকারি সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বহুদিন ধরেই দক্ষিণ সিরিয়ার এই অঞ্চল কিছুটা স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল, যেখানে স্থানীয় মিলিশিয়া এবং জনগণ নিজেরাই আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করতেন। তবে সম্প্রতি সুয়েইদায় দ্রুজজ সম্প্রদায়, বেদুইন গোত্র এবং সরকারি বাহিনীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে।
প্রেসিডেন্ট আল-শারাআ বলেন, আমরা আমাদের দ্রুজজ জনগণকে যারা আক্রমণ ও নির্যাতন করেছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর। কারণ তারা রাষ্ট্রের সুরক্ষা ও দায়িত্বের আওতায় পড়ে।
তিনি আরও বলেন, দ্রুজরা আমাদের জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। আমরা দেশীয় বা বিদেশি, যেকোনো বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করি। একটি নতুন সিরিয়া গঠনের জন্য আমাদের সকলকে রাষ্ট্রের পেছনে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে, এর মূলনীতিগুলোর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে এবং জাতির স্বার্থকে যেকোনো ব্যক্তিগত বা ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে।
এই ঘোষণার পটভূমিতে রয়েছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক একাধিক বিমান হামলা, যা সিরিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস এবং দামেস্কের সামরিক সদর দপ্তরের কাছে চালানো হয়েছে। ইসরায়েল অভিযোগ করে, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী দক্ষিণাঞ্চলে দ্রুজদের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে। তাতে সতর্ক করে বলা হয়, যদি এসব অভিযান অব্যাহত থাকে এবং সেনা প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে আরও জোরালো হামলা চালানো হবে।
এদিকে সুয়েইদার ভেতরে দ্রুজদের মধ্যে মতবিরোধও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ প্রেসিডেন্ট আল-শারাআর নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, আবার অনেকে এখনো বিশ্বাস করেন না যে এটি কোনো বৈধ সরকার। তাদের মতে, সরকার নামধারী বাহিনী আসলে সশস্ত্র গ্যাং কিংবা ছত্রভঙ্গ সশস্ত্র গোষ্ঠীর সমষ্টি।
বর্তমানে এই চুক্তি কার্যকর হওয়ায় আপাতত সরকারি বাহিনী অঞ্চল ত্যাগ করেছে এবং স্থানীয় নেতারা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। শান্তি বজায় রাখা ও জাতিগত সংঘর্ষ বন্ধ করাই এখন এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছে সিরীয় প্রশাসন।
বক্তব্যে ইসরায়েলকে উদ্দেশ্য করে শারা, ইসরায়েলি সত্তা, যারা সাবেক শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর থেকে আমাদের স্থিতিশীলতাকে লক্ষ্যবস্তু করে আসছে এবং বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে, এখন আবারও আমাদের পবিত্র ভূমিকে অন্তহীন বিশৃঙ্খলার মঞ্চে পরিণত করতে চায়। আমরা যুদ্ধকে ভয় করা জাতি নই। আমরা সারাজীবন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি, আমাদের জনগণকে রক্ষা করেছি। তবে আমরা সিরিয়ানদের স্বার্থকে বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসের চেয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছি।
সূত্র: আল জাজিরা
এমএম