ঢাকা, বুধবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৪ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

বিচার নিয়ে আমাদের আন্তরিকতায় সন্দেহ রাখবেন না: আইন উপদেষ্টা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৩২, জুলাই ২৯, ২০২৫
বিচার নিয়ে আমাদের আন্তরিকতায় সন্দেহ রাখবেন না: আইন উপদেষ্টা বক্তব্য দিচ্ছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ছবি: শাকিল আহমেদ

জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার বিচার নিয়ে সরকারের আন্তরিকতায় বিন্দুমাত্র সন্দেহ না রাখার আহ্বান জানিয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, আমাদের (সরকার) অনেক ব্যর্থতা আছে, কিন্তু চেষ্টায় ব্যর্থতা নেই। চেষ্টার ক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্য নেই।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই গণহত্যার বিচার আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে আসিফ নজরুল বলেন, অনেক অভিযোগ শুনি, অনেক কিছু শুনি, খুব দুঃখ লাগে মাঝে মাঝে। তারপর মনে হয় যে, এটার জন্যই তো আমাদের সন্তানরা প্রাণ দিয়েছিল, যে আপনারা আমাদের প্রশ্ন করবেন, সমালোচনা করবেন। কষ্ট লাগলেও শুনব, আবার নিজেও কাজ করব। কিন্তু আপনাদের একটা জিনিস বলতে চাই, আমি যেন আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতাটা করতে পারি।  

তিনি বলেন, আল্লাহ তো আমাকে দেখছেন। আমি কি আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারব? আপনাদের কনফিডেন্টলি বলে যেতে চাই, অবশ্যই পারব। কোনো রকম গাফিলতি কোনো জায়গায় করিনি, কোনো রকম অন্যায় কোনো জায়গায় করিনি। জীবনে কোনোদিন এত পরিশ্রম করিনি। আর যাই করুন, এই বিচার নিয়ে আমাদের আন্তরিকতায় বিন্দুমাত্র সন্দেহ রাখবেন না। মানুষ তো তুচ্ছ ব্যাপার, আল্লাহর কাছে জবাব দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত আছি।

তিনি আরও বলেন, আমি যদি শহীদের পিতা হতাম, আমারও প্রশ্ন থাকত। আপনাদের মতো সন্তান হারালে আমি আরও বেশি ইমোশনাল হয়ে যেতাম, আরও বেশি অ্যাগ্রেসিভলি সমালোচনা করতাম। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। কিন্তু যদি সমাজের অন্যান্য মহল থেকে এসে বলে বিচার দৃশ্যমান হচ্ছে না, আর কীভাবে দৃশ্যমান হয়? টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে। প্রথম দিন থেকে টিভি দেখাচ্ছে আমাদের। প্রতিদিন তাজুল ইসলাম (চিফ প্রসিকিউটর) আপডেট দিচ্ছেন। কী করব ভাই? এই ১০ মাস যাবত লাইভ দেখাব? তাজুল রাত ২টার সময় কী কাজ করেন, সেটি দেখবেন? সেটা কি আমরা লাইভ দেখাব?

আইন উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছেন, আমার মনে হয় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীও এত জঘন্য অপরাধ করেনি। মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা, আহত মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা। আপনারা বলতে পারেন, ২৫ মার্চ কালো রাত হয়েছে। অবশ্যই ২৫ মার্চ কালো রাতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু অন্যদেশের বাহিনী করেছে।  

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলেছে এমন কোনো ফুটেজ আমি দেখিনি। একজন গুলি খেয়েছে, তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার বন্ধু, সেই অবস্থায় গুলি করেছে, এমন কোনো ফুটেজ বা কোনো বর্ণনা আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধার মুখে শুনিনি। অন্যরকম নৃশংসতা থাকতে পারে, কিন্তু এমন নৃশংসতা কখনো শুনিনি।

এত বড় গণহত্যা চালিয়েও আওয়ামী লীগের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, একটা দল ১৫ বছর শুধু মিথ্যা আর নির্যাতন করে চালিয়েছে। এখনো তাদের মিথ্যাচার বিন্দুমাত্র থামেনি। এখনো নির্যাতনের ইচ্ছা বিন্দুমাত্র থামেনি। আপনারা যখন মহাখুনি শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনতে পান, দেখবেন এখনো তার নির্যাতন করার ইচ্ছা আছে। এরা কি বিচারে কোনো রকম গাফিলতি থাকে সেটা উন্মোচন করার চেষ্টা করবে না? আমার তো অনেক দায়িত্ব। এই বিচারকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এই বিচারে আপনাদের (শহীদ পরিবার) হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমি বিশ্বাস করি, যেই প্রক্রিয়ায় বিচার এগোচ্ছে, ইনশাআল্লাহ আমাদের সরকারের আমলেই আপনারা কাঙ্ক্ষিত মামলাগুলোর রায় পাবেন। এমনভাবে বিচারের অকাট্য সাক্ষ্য-প্রমাণ আমরা রেখে যাব, কোনো সরকার চাইলেও বিচার থেকে সরতে পারবে না।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহেরের স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠান শুরুর পর জুলাই আন্দোলনে নিহত ও সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।  

পরে হতাহতদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব (বাজেট ও উন্নয়ন) রুহুল আমীন। এরপর জুলাই আন্দোলন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, জুলাই আন্দোলনে শহীদ শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন, শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি আরমান হোসেনসহ আরও অনেকে।

এসসি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।